You are currently viewing কে এই সুধাংশু ত্রিবেদী? Life History of Sudhanshu Trivedi Explained in 5 Minutes

কে এই সুধাংশু ত্রিবেদী? Life History of Sudhanshu Trivedi Explained in 5 Minutes

ফেসবুক, ইউটিউব কিংবা ইন্সটাগ্রামের রিলসে সুধাংশু ত্রিবেদী একটি জনপ্রিয় নাম।  যার বক্তব্যের প্রত্যেকটি লাইন যেন একট একটি যুক্তিবাণ।  যার যুক্তির ধার যেন এক একটি তলোয়ারের কোপ।  যিনি কথা বললেই মুহূর্তেই তা ভাইরাল হয়ে যায় সোশাল মিডিয়াতে।  যেকারনে, হিন্দীভাষী হওয়ার সত্ত্বেও তার জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে গিয়েছে ভারতবর্ষের প্রত্যেক অঞ্চলে, প্রত্যেক সমাজে এবং প্রত্যেক ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর মধ্যে।  রাজনীতি, অর্থনীতি, বিজ্ঞান, এবং ইতিহাসের তত্ত্বগুলোর সাথে হিন্দু ধর্মের সংযোগ স্থাপন করে যে বক্তব্য তিনি দিয়ে থাকেন তাতেই চোখ ধাধিয়ে যায় শ্রোতাদের।  তার বক্তব্যের মধ্যে সন্নিবেশিত হয় একাডেমিক তত্ত্ব, গবেষণালব্ধ তথ্য, এবং দর্শনমূলক ব্যাখ্যা।  কিন্তু কে এই সুধাংশু ত্রিবেদী? আসুন  রাজনীতির বাইরে গিয়ে জেনে নেওয়া যাক এই প্রখর বক্তা এবং তীক্ষ্ণ বিতার্কিকের জীবনের গল্প।

সুধাংশু ত্রিবেদী জন্মেছিলেন ১৯৭০ সালে উত্তর প্রদেশের লক্ষ্ণৌতে।  সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম নেওয়া সুধাংশু পারিবারিকভাবেই পেয়েছিলেন ধর্ম, সংস্কার ও জ্ঞান অর্জনের শিক্ষা।  ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন প্রচণ্ড কৌতূহলী এবং মেধাবী।  তাঁর চোখে ছিল বড় হওয়ার স্বপ্ন, আর মনে ছিল জ্ঞানের প্রতি অসীম তৃষ্ণা। আর এই জ্ঞান তৃষ্ণা থেকে পাটনাগার ইউনিভার্সিটি থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেছিলেন তিনি।  পরবর্তীতে একই বিষয়ের উপরে ড. এপিজে আব্দুল কালাম টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি ডিগ্রীও অর্জন করেন তিনি।

কর্মজীবনের শুরুতে তিনি ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ে অধ্যাপনা করেছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে।  তার স্ত্রী ড. শালিনী ত্রিবেদীও পেশায় একজন ইকনোমিক্স এবং মার্কেটিং রিসার্চের অধ্যাপক।  কিন্তু, ইতিহাস বলছে—যাঁদের রক্তে থাকে নেতৃত্বের আগুন, তাঁদের গন্তব্য শুধু পাঠশালায় থেমে থাকে না।  সুধাংশুর ক্ষত্রেও তার ব্যতিক্রম কিছু ঘটেনি।  তিনি বুঝেছতে পেরেছিলেন, শিক্ষার মাধ্যমে একটি সমাজকে বদলানো যায় বৈকি, তবে নিজের দেশকে  নতুন দিশা প্রদান করতে হলে রাজনীতি করার প্রয়োজন।  তাই কিছুকাল পরেই অধ্যাপনা ছেড়ে দিয়ে তিনি যোগ নিয়েছিলেন ভারতীয় জনতা পার্টির রাজনীতিতে।

আরও পড়ুনঃ  কর্ণ এবং অর্জুনের শত্রুতা কোন জন্মের? তাদের মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ? Karna Vs Arjun

রাজনৈতিক জীবনে রাজনাথ সিং এর উপদেষ্টা, মিডিয়া-কমিউনিকেশনের টিম মেম্বার, দলের জাতীয় মুখপাত্র ইত্যাদি পথ পাড়ি দিয়ে ২০১৯ সালে তিনি নির্বাচিত হন রাজ্যসভার সদস্য হিসেবে। তবে সারা দেশ জুড়ে সুধাংশু ত্রিবেদীর যে জনপ্রিয়তা তা তার শিক্ষাজীবন, কর্মজীবন বা রাজনৈতিক জীবনের কারনে নয়।  নতুন প্রজন্মের কাছে তিনি হিন্দুত্বের এক বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর।  কিন্তু বিজ্ঞানের ছাত্র হয়েও কিভাবে হিন্দুত্বের প্রসারে অগ্রগামী হয়ে উঠলেন তিনি?

জাতিগতভাবে ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্ম নেওয়া সুধাংশু তার ছাত্রজীবন থেকেই ছিলেন ধর্মানুরাগী।  ছাত্রাবস্থায় নিজের কলেজে পৌরহিত্য করতেও দেখা গিয়েছিল তাকে।  তো সাধারন শিক্ষার পাশাপাশি তিনি শুরু করেছিলেন সনাতন ধর্মের অজস্র গ্রন্থ অধ্যয়ন করা, ভারতে হিন্দুদের ইতিহাস ও রাজনীতি নিয়ে গবেষনা করা প্রভৃতি।  আর তার এই দীর্ঘদিনের চর্চা ও গবেষণার ফলেই যুক্তির মঞ্চে তিনি আজ অপ্রতিরোধ্য।  তার যুক্তিবানে মুহূর্তেই তাসের ঘরের মত ভেঙে পড়ে বিরোধীদের নির্মত যুক্তির পাহাড়।

বস্তুত যুক্তিবাদ ও বগ্মীতার এক অপূর্ব মিশ্রণ ঘটেছে ড. সুধাংশু ত্রিবেদীর চরিত্রে।  তার বক্তব্যে লক্ষ্য করা যায় গভীর দর্শন, জাতীয়তাবাদের আবেগ, সুপ্রাচীন সনাতন শাস্ত্রের পাণ্ডিত্য, ধর্ম ও রাজনীতির মধ্যকার সুশৃঙ্খল যোগসূত্র এবং অগ্নিঝরা উপস্থাপনা।  তার মতে, ধর্ম মানুষকে বিভক্ত নয়, একত্রিত করে থাকে।

সুধাংশু ত্রিবেদীর রাজনৈতিক দর্শনের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে হিন্দুত্ব।  তবে তিনি যেভাবে হিন্দুত্বকে উপস্থাপন করেন, তা নিছক গোঁড়ামি নয়—বরং এটি একটি সাংস্কৃতিক ও সভ্যতাগত মূল্যবোধ।  তিনি বিশ্বাস করেন— “হিন্দুত্ব কোনো সাধারন ধর্মবিশেষ নয়, এটি এমন এক জীবনদর্শন, যা ‘সর্বধর্ম সমভাব’ বা ‘বসুধৈব কুটুম্বকম’-এর মতো ধারণার ওপর দাঁড়িয়ে আছে।  আর একারনেই তিনি হিন্দু ভাবধারার সাথে আধুনিক রাজনীতির মেলবন্ধন ঘটাতে সক্ষম হয়েছেন যুক্তিপূর্ণভাবে।

আজকের দিনে রাজনীতিকগণ যেখানে মঞ্চে চিৎকার করে নিজেদেরকে প্রমাণ করার চেষ্টা করেন, সেখানে সুধাংশু ত্রিবেদী একেবারেই আলাদা।   তিনি রাজনীতি করেন যুক্তির ভাষায়, তথা অন্যের কণ্ঠরোধ করে নয়, তথ্য দিয়েই অপতথ্যের বিস্তার রোধ করে থাকেন তিনি।

আরও পড়ুনঃ  লক্ষ্মণ কিভাবে ১৪ বছর একটানা জেগে ছিলেন? নিদ্রাদেবী ও উর্মিলার কাহিনী || Urmila and Nidra Devi ||

তাঁর বিতর্কের শৈলীতে রয়েছে তিনটি মূল উপাদান:

  • প্রথমত, তথ্য বিষয়ক গভীর জ্ঞান তথা ভারতীয় ইতিহাস, অর্থনীতি, এবং রাজনীতির যাবতীয় জ্ঞান তার নখদর্পণে।
  • দ্বিতীয়ত, তিনি বিশ্বাস করেন যুক্তির শক্তিতে।  তিনি জটিল বিষয়গুলোকেও যুক্তির মঞ্চে এমন সাবলীলভাবে উপস্থাপন করেন যে তা সাধারণ মানুষের বোধগম্যতার মধ্যেও চলে আসে।
  • তৃতীয়ত, তিনি অত্যন্ত শান্ত মনোভাবের একজন ব্যক্তি।  বিতর্কের মঞ্চে তিনি কখনো উত্তেজিত বা আক্রমণাত্মক হন না, বরং তাঁর শান্ত ও স্থির কণ্ঠে যুক্তির ঝড় তুলে দেন যা তাঁর বক্তব্যকে আরও শক্তিশালী করে তোলে।

তাঁর একটি বিখ্যাত উক্তি হল, “আমি বিতর্কে জিততে আসি না, আমি আসি সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করতে।  ” আর তার এই মনোভাবই তাঁকে জনগণের মনে একজন বিশ্বাসযোগ্য ব্যক্তিত্ব রূপে গড়ে তুলেছে।

তবে পৃথিবীর অন্য সকল জ্ঞানী, বুদ্ধিমান ও শক্তিশালী ব্যক্তিদের মত সুধাংশু ত্রিবেদীও বিতর্কের উর্দ্ধে নন।  ধর্মীয় এবং জাতীয়তাবাদ বিষয়ে প্রদত্ব তার কিছু বক্তব্য বিরোধী দল এবং সমালোচকদের কাছ থেকে প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে বহুবার।  কেউ কেউ তাঁকে অভিযুক্ত করেছেন অতিরিক্ত জাতীয়তাবাদী বা হিন্দুত্বের প্রতি পক্ষপাতী হওয়ার জন্য।  আবার কেউ কেউ তার সমালোচনা করেছেন ‘আগ্রাসী’ বক্তা হিসেবে।  তবে সমালোচিত হওয়ার পরেও নিজের বক্তব্য ও যুক্তি-তর্ক উপস্থাপনের সময় তিনি বরাবরই তার স্বভাবসুলভ শান্ত ভাব বজায় রেখেছেন এবং ধৈর্য ও যুক্তি সহকারে তার বিরুদ্ধে আনীত সমালোচনার জবাব দিয়েছেন।   তিনি বলেন, “আমি আমার বিশ্বাসের পক্ষে কথা বলি, কিন্তু আমি সবার মতামতের প্রতিও শ্রদ্ধাশীল।” তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গি ক্ষেত্রবিশেষে তাঁর বিরোধীদেরও প্রশংসা কুড়িয়েছে।

সুতারাং আপনি সুধাংশু ত্রিবেদীর রাজনৈতিক বিশ্বাসের সাথে একমত হন বা না হন, তিনি যে বর্তমান সময়ের এবং বর্তমান প্রজন্মের লক্ষ লক্ষ তরুণদের কাছে একজন প্রভাবশালী প্রভাবক সেটি অস্বীকার করার কোন উপায় নেই।

সুধাংশু ত্রিবেদীর চরিত্র থেকে আমরা এই শিক্ষা পাই যে, জ্ঞান পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র যা দিয়ে অপতথ্য, অপসংস্কৃতি এবং অপযুক্তিকে খণ্ডন করে সমাজকে পরিবর্তন করা সম্ভব।

আরও পড়ুনঃ  কল্কি অবতার কি জন্ম নিয়েছেন? মহাপ্রলয়ের সময় কি উপস্থিত? When will Kalki Avatar end Kaliyuga

সুধাংশু ত্রিবেদীর জীবনী ও জীবন দর্শন আপনাদের কেমন লাগল তা কমেন্ট করে জানাতে পারেন আমাদেরকে।  তাছাড়া তার যুক্তি, বক্তৃতা ও আদর্শ আপনাদেরকে অনুপ্রাণীত করে কি না তাও জানার অপেক্ষায় রইলাম আমরা।

Rate this post

Leave a Reply