You are currently viewing যে ৫ কারনে মানুষের আয়ু কমে যায় – গরুড় পুরাণ || 5 Deeds That Reduces Life – Garuda Purana ||

যে ৫ কারনে মানুষের আয়ু কমে যায় – গরুড় পুরাণ || 5 Deeds That Reduces Life – Garuda Purana ||

সনাতন ধর্মের স্তম্ভগুলোর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হচ্ছে পুরাণ। আপনারা অনেকেই হয়ত জানেন না, মহাপুরাণ ও উপপুরাণ মিলিয়ে আমাদের মোট পুরাণের সংখ্যা ৩০টিরও বেশী। কিন্তু এঁদের মধ্যে ১৮টি পুরাণকে বলা হয় মুখ্য পুরাণ বা মহাপুরাণ। এবং বলাই বাহুল্য, এই ১৮টি মহাপুরাণের মধ্যে একটি হচ্ছে গরুড় পুরাণ। এই পুরাণে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে পাপ, পুণ্য, কর্ম, স্বর্গ, নরক, জ্ঞান-বিজ্ঞান, নীতি নিয়ম, ধর্ম এবং আত্মা সম্পর্কে।  তাছাড়া মৃত্যুর পর জীবাত্মার সঙ্গে কী হয়, তাঁর জীবন কেমন কাটে, সে সবই লিপিবদ্ধ রয়েছে গরুড় পুরাণে। তবে এখানে এমন কিছু তথ্যও রয়েছে, যা ব্যক্তির জীবনকে উন্নত ও সফল করে তুলতে পারে। ঠিক যেমন গরুড় পুরাণ আমাদেরকে বলে দিয়েছে কোন ৫টি কাজ করলে আমাদের পরমায়ু কমতে থাকে এবং বারংবার এসকল কর্ম করার ফলে খুব শীঘ্রই আমাদের জীবনাবসান ঘটে। কে জানে, হয়ত আমরাও অজান্তে এই ৫ প্রকার নিষিদ্ধ কর্ম করে আমাদের অকাল মৃত্যু ডেকে আনছি কিনা? তাই সনাতন এক্সপ্রেসের দর্শকদের জন্য আজ রইল গরুড় পুরাণের সেই ৫টি সাবধানবানী। আশা করি ভিডিওটির শেষ পর্যন্ত দেখবেন এবং কমেন্ট বক্সে একবার ভগবান শ্রীহরি বিষ্ণুর নাম লিখে যাবেন।

গরুড় পুরাণে যে পাচটি কাজের ফলে আয়ু কমে যায় বলে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তার প্রথমটি হচ্ছেঃ

বাসী বা পচা মাংস খাওয়া

আপনারা জানেন আমাদের ধর্মে মাংসাহারকে ব্যাপকভাবে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। সনাতন ধর্মের বিধান অনুসারে ইন্দ্রিয় তৃপ্তির জন্য অন্য প্রাণীর প্রতি হিংসা করে তাদের মাংস ভক্ষন বা তামসিক ভোজন করলে তার জন্য রয়েছে শাস্তির ব্যাবস্থা। কিন্তু আমিষ খাবার শাস্ত্রীয়ভাবে অশুদ্ধ জেনেও যারা আমিষ খাবার ভোজন করেন তাদের জন্য একটি সতর্কবানী উচ্চারিত হয়েছে গরুড় পুরাণে। আর সেটি হচ্ছে বাসী বা পচা মাংস না খাওয়া। গরুড় পুরাণ মতে বাসী মাংস ভক্ষন করলে আমাদের পরমায়ু কমতে শুরু করে।

বিজ্ঞান বলছে, বাসী মাংসে অত্যন্ত বিপদজনক ব্যাকটেরিয়ার জন্ম হয় যা আমাদের শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এই মাংস পেটে গেলে ভয়ংকর সেইসব জীবানু আমাদের শরীরে বাসা বাধে এবং আমাদের আয়ু কমাতে থাকে। এমনকি এই জীবানুগুলো এতটাই ক্ষতিকর যে তা মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে সক্ষম। এবং দীর্ঘদিন ধরে আপনি যদি বাসি বা পচা মাংস ভোজন করতে থাকেন তাহলে আপনি নিজেই নিজের অকাল মৃত্যু ডেকে আনবেন।

আরও পড়ুনঃ  দক্ষ যজ্ঞে কি ঘটেছিল? Origin of 51 Shakti Peeth || Daksha Jagya || Shiva & Sati || Mythology

এবার ভাবুন সাম্প্রতিক সময়ে বৈজ্ঞানিক গবেষনায় যা আবিষ্কৃত হয়েছে, তা আজ থেকে হাজার হাজার বছর আগে রচিত গরুড় পুরাণে কত স্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। তাই আসুন অকাল মৃত্যুর হাত থেকে রেহাই পেতে আমরা বাসী মাংস বর্জন করি। এবং সম্ভব হলে তামসিক ভোজন বর্জন করে শাস্ত্র নির্দেশিত সাত্ত্বিক ভোজন গ্রহণ করি।

সূর্যাস্তের পরে দধি বা দই ভোজন করা

দধি বা দই আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপাদেয় ও উপকারী খাবার। ভিটামিন এ বি, সি, ডি-৩, ই, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং আয়রন সমৃদ্ধ এই খাবারটিকে বলা হয় ন্যাচারাল প্রোবায়োটিক। দধিতে থাকা ল্যাকটোবেসিলাস অ্যাসিডোফিলাস, ল্যাকটোকক্কাস লাকটিস, ল্যাকটোকক্কাস ল্যাকটিস্ক্রিমরিয়াস ইত্যাদি উপকারী ব্যাকটেরিয়া যতটা আমাদের পাচনতন্ত্রের জন্যে উপকারি ততোটাই ভালো আমাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্যে। তাছাড়া নতুন কোষ সৃষ্টি করা, হাড় ও দাঁতের ক্ষয়রোধ করে তাদেরকে শক্তিশালী করা, এবং ত্বকের যাবতীয় সমস্যা সমাধানে দইয়ের বিকল্প নেই।

গরুড় পুরাণ আমাদেরকে দধি ভোজন করতে নিষেধ করছে না বটে। তবে এই পুরাণ মতে সূর্যাস্তের পরে বা রাতে দই খেলে আমাদের আয়ু কমে যেতে পারে এবং আপনার অজান্তেই নিজের মৃত্যুকে ত্বরান্বিত করবেন আপনি।। কি আশ্চর্য হলেন? তবে এবার এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা জেনে নেওয়া যাক। রাতের বেলা দই খেলে শরীর নানা অসুখ বিসুখের ডিপো হয়ে যায়। যেমন এসিডিটি, ঠাণ্ডা লাগা ও কফ হওয়া, এবং যাদের  ল্যাকটোস অ্যালার্জি আছে তাদের জন্য দই মারাত্মক সমস্যার জন্ম দিতে পারে। তবে সবচেয়ে মারাত্মক ব্যাপারটি হচ্ছে, রাতে দই খেলে ঠাণ্ডা লেগে আপনার ফুসফুস সংক্রমিত হতে পারে এবং এস্থামা এটাকও হতে পারে। সুতারাং বোঝাই যাচ্ছে হাজারো বছর আগে গরুড় পুরাণে নির্দেশিত এই সতর্কবানীটি আজকের বৈজ্ঞানিক যুগে এসেও কতটা সত্য।

সকালে দেরি করে ঘুম থেকে ওঠা বা দীর্ঘক্ষণ নিদ্রিত থাকা

গরুড় পুরাণ মতে সকালে দেরী করে ঘুম থেকে উঠলে বা অতিরিক্ত সময় ঘুমিয়ে থাকলে তার আয়ু ক্রমশ কমতে থাকে। আর এভাবেই ধীরে ধীরে অকাল মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যায় মানুষ। এখানে আরও একটি সূক্ষ্ম নির্দেশনা হচ্ছে রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যাওয়া। কারন রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমালেই কেবল আপনি সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠতে পারবেন। আমাদের শাস্ত্রমতে, ব্রাহ্ম মুহূর্তে বিছানা ছেড়ে ঘুম থেকে ওঠা সর্বোত্তম। তবে তা না পারলেও, যত সকালে সম্ভব আমাদের ঘুম থেকে উঠে পড়া উচিত। কারণ ভোরবেলা পরিবেশ শুদ্ধ থাকে। সকালের খোলা হাওয়া গায়ে লাগলে অনেক অসুখ বিসুখ থেকে মুক্তি পেতে পারি আমরা।

আরও পড়ুনঃ  পঞ্চকেদার সৃষ্টি হওয়ার পেছনের পৌরাণিক কাহিনী || Mythology Behind the Creation of Panch Kedar ||

কিন্তু গরুড় পুরাণের এই নির্দেশনা কতটুকু সত্য? আজ্ঞে হ্যাঁ সত্য বৈকি। আধুনিক বৈজ্ঞানিক গবেষনায় দেখা গেছে যারা সকালে দেরী করে ঘুম থেকে ওঠেন, অধিক রাত্রি জাগরণ করেন এবং অতিরিক্ত সময় ঘুমিয়ে থাকেন তাদের শরীরের নানা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ক্রমশ বিকল হতে থাকে এবং শরীরের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা কমতে থাকে। আর এই বিকল হওয়া অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের তালিকায় রয়েছে আমাদের হৃদপিণ্ড, ফুসফুস ইত্যাদি।

আজকের সময়ে বিশ্বে মানুষের দৈনন্দিন রুটিন বদলে গেছে ব্যাপকভাবে। আর তাই রাতে ঘুমনোর এবং সকালে জেগে ওঠার জন্য কোন নির্দিষ্ট সময় নেই। মানুষের এই অভ্যসের ফল কি হতে পারে তা নিয়ে যুক্তরাজ্যের ৪লক্ষ ৩৩ হাজার মানুষের উপরে একটি গবেষণা চালিয়েছে বিবিসি বা বৃটিশ ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন। গবেষনায় দেখা গেছে দেরী করে ঘুম থেকে ওঠা মানুষের মধ্যে অকাল মৃত্যুর প্রবণতা অন্যদের থেকে অন্তত ১০ শতাংশ বেশী। তাহলে এবার আপনিই বিচার করুন গরুড় পুরাণের এই নির্দেশনা ঠিক কতটা সময়োপযোগী।

শ্মশানের ধোঁয়া

গরুড় পুরাণ বলছে শ্মশানের ধোঁয়া থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকা উচিত। কারণ মৃত্যুর পর মানবদেহ যখন পুড়িয়ে দেওয়া হয়, তখন মৃত মানুষের শরীরের অনেক বিষাক্ত বর্জ্য বাতাসে মিশে যায়। এই বিষাক্ত ধোঁয়ায় অনেক ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া মিশে থাকে। যে ব্যক্তি এই ধোঁয়া শরীরে গ্রহণ করছেন, তিনি ফুসফুসে সংক্রমণসহ নানা অসুখ বিসুখে আক্রান্ত হতে পারেন। সেজন্য আপনারা নিশ্চয়ই দেখেছেন যে, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার পর মানুষ শ্মশানে বেশিক্ষণ থাকে না এবং বাড়িতে আসার সাথে সাথে স্নান করে নেয়।

আসলে আমাদের শরীর ক্ষিতি অর্থাৎ মাটি, অপ তথা জল, তেজ অর্থাৎ আগুন, মরুৎ অর্থাৎ বাতাস এবং ব্যোম তথা আকাশ এই পঞ্চভূতের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে এবং আমাদের মৃত্যুর পর আবারও আমাদের নশ্বর দেহ এই পঞ্চভূতে বিলীন হয়ে যায়। সেই হিসেবে মৃত শরীরের অংশ বাতাসে মিশে যাওয়া অসম্ভব নয়। আর এ কারনেই শ্মশানের ধোঁয়ায় মৃত শরীরের জীবানু মিশে থাকতে পারে। এবং কোন ব্যাক্তি যদি দীর্ঘদিন যাবত শ্মশানের ধোঁয়া গ্রহন করতে থাকেন তাহলে তার কপালেও জুটতে পারে অকাল মৃত্যু। আর একারণেই গরুড় পুরাণে শ্মশানের ধোঁয়া গ্রহণ করলে আয়ু কমে যায় বলে নির্দেশিত হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  কে ছিলেন শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু? তাঁর সংক্ষিপ্ত জীবনী জানুন পবিত্র বাংলায়|| Sri Chaitanya Mahaprabhu

সূর্যোদয়ের পরে শারীরিক সম্পর্ক করা

গরুড় পুরাণের সর্বশেষ সতর্কবানীটি হচ্ছে সূর্যোদয়ের পরে অর্থাৎ দিনের বেলা শারীরিক সম্পর্ক না করা। এর কারনে মানুষের পরমায়ু কমে যেতে পারে বলে জানাচ্ছে গরুড় পুরাণ। বলা হচ্ছে, দিনের বেলা যাঁরা শারীরিক সম্পর্ক করেন, তাঁদের শরীর দুর্বল হয়ে যায়। এবং একই সাথে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।

কিন্তু ভাবুন তো সকালে শারীরিক সম্পর্ক করার সাথে আয়ু কমে যাওয়ার কি সম্পর্ক? আমি বলছি। আমাদের প্রাচীন মুনি ঋষিগণ সকালে উঠে যোগাসন, প্রাণায়ম, ধ্যান ইত্যাদি শারীরিক গঠনমূলক কর্মের বিধান দিয়ে গেছেন। এই কর্মগুলো আমাদের জীবনীশক্তি বৃদ্ধি করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং সর্বোপরী আমাদের শরীরকে সুস্থ ও দীর্ঘজীবি করে তোলে। তাছাড়া সকালের পরিবেশ ও বায়ু আমাদের সুস্বাস্থের জন্য অত্যন্ত অপরিহার্য।

কিন্তু আপনি যদি সকালে উঠে নিজের শরীরের উন্নয়নে নজর না দিয়ে অন্য কোন কিছুতে মত্ত হয়ে থাকেন, তাহলে  যোগাসন, প্রাণায়ম, ধ্যান করার মত গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো করার সময় পাবেন না। তাছাড়া সকালের বায়ু আমাদের শরীরের যে উপকার করে সেটি থেকেও বঞ্চিত হবেন। ফলে স্বাভাবিকভাবে আপনি রোগগ্রস্থ হবেন এবং আপনার আয়ু কমে যাবে। আর এই কথাগুলোই একটু রূপকভাবে গরুড়পুরাণে উপস্থিপিত হয়েছে আমাদের জন্য।

তাহলে দর্শক বুঝতেই পারছেন আমাদের সনাতন শাস্ত্র আজ থেকে হাজার হাজার বছর আগে যে বিধান দিয়ে গেছে আজকের বিজ্ঞানের বিশ্বেও তা কতটা সত্য এবং জরুরী।

Rate this post

Leave a Reply