You are currently viewing সহজভাবে ও শুদ্ধভাবে গীতা পাঠ করার নিয়ম / উপায় || গীতার ১৮ টি নাম মাহাত্ম্য || গীতাপাঠের ফল।

সহজভাবে ও শুদ্ধভাবে গীতা পাঠ করার নিয়ম / উপায় || গীতার ১৮ টি নাম মাহাত্ম্য || গীতাপাঠের ফল।

সমগ্র মানব জাতির জন্য পরমপুরুষ ভগবান শ্রীকৃষ্ণের দানকৃত সর্বশ্রেষ্ঠ উপহার হচ্ছে শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা। শ্রী শ্রী গীতাতেই সরাসরি বা রূপকভাবে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে মানব জীবনের গুঢ় অর্থ। ব্যাপক অর্থে গীতাই সমগ্র মানব জাতির জন্য পুর্নাঙ্গ ও আদর্শ জীবন বিধান। শুধু তাই নয়, নিয়মিত গীতা স্পর্শ করা, গীতা পাঠ করা, গীতা মাহাত্ম্য অনুধাবন করাও অনেক বড় পুণ্যের কাজ হিসেবে বিবেচিত হয়। এছাড়াও প্রতিদিন গীতা পাঠ করাকে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নিত্যকর্মের অংশ হিসেবে মনে করা হয় আমাদের সমাজে।

প্রশ্ন করতে পারেন, আমি তো লেখাপড়া জানি না, আমি সংস্কৃত পড়তে পারিনা, বা আমি শুধু বাংলা সরালার্থগুলো পড়তে চাই এতে কি গীতা পাঠের ফল মিলবে? আবার অনেকে বলেন, গীতা পাঠ করার জন্য কোথা থেকে শুরু করব, কিভাবে শুরু করব এগুলো না জানার কারনেই গীতা পাঠ করা হয়ে ওঠে না। এগুলো ছাড়াও আমাদের জটিল মনের উৎপাদিত নানাবিধ সমস্যাকে আমলে নিয়ে আমরা গীতা বিমুখ থেকে যাই।

কিন্তু মোদ্দাকথা হচ্ছে গীতাপাঠ করতে যেটা প্রয়োজন সেটা হচ্ছে আপনার মনের একাগ্রতা এবং গীতা জ্ঞান আহরণের স্বদিচ্ছা, আপনি কোন ভাষায় গীতা পাঠ করলেন, আপনার উচ্চারন কতটা শুদ্ধ, আপনি কোন অধ্যায় থেকে শুরু করলেন বা আপনি কোন সময়ে গীতা পাঠ করলেন তাঁর থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ আপনি গীতা পাঠ করে কতটুকু জ্ঞান আহরন করলেন এবং কতটা ভক্তিভরে শ্রীকৃষ্ণের মুখনিঃসৃত বাণী অধ্যয়ন করলেন। এই কারনেই জ্ঞানী ও সাধুরা বলে থাকেন, “পরমপিতা তাঁর জাগতিক সন্তানদের কাছে আনুষ্ঠানিকতা নয় বরং ভক্তি আশা করেন।” তাই সত্যি বলতে গীতা পাঠ করতে সাধারন সূচিতা ও মনের পবিত্রতা ছাড়া আর কোন কিছুরই প্রয়োজন নেই।

তবে আপনি যদি আনুষ্ঠানিকভাবে তথা কোন অনুষ্ঠানে বা কোন উপলক্ষ্যকে সামনে রেখে গীতাপাঠ করতে চান তবে আপনাকে কিছু সাধারন নিয়মাবলী মেনে চলতে হবে। সেই নিয়মকানুনগুলোকে আপনাদেরকে জ্ঞাত করানোর উদ্দেশ্যেই আমাদের আজকের আয়োজন। এছড়াও এই আলোচনাতে আপনারা জানতে পারবেন, গীতার প্রতিটি অধ্যায় পাঠে কি কি ফল মেলে এবং প্রত্যেক অধ্যায়ের নাম মাহাত্ম্য। আশা করি সম্পূর্ণআলোচনাটি মনোযোগ সহকারে পাঠ করবেন।

গীতা পাঠ করার জন্য পবিত্র মন ও পবিত্র বস্ত্র পরিধান করে, পবিত্র স্থানে আসন পেতে উত্তর বা পূর্ব দিকে মুখ করে বসুন। এরপর আচমন, বিষ্ণু-স্মরণ, সূয্যার্ঘ্য, স্বস্তিবাচন, সংকল্প, আসনাদি শুদ্ধি ইত্যাদি কার্যগুলো পর্যায়ক্রমে সেরে ফেলুন। এবার তিলক ধারণের পালা। উল্লেখ্য তিলক ধারণ না করলে কোন কর্মই পূর্ণতা পায় না, এমন মতবাদ প্রচলিত রয়েছে বৈষ্ণব সমাজে।

প্রথম ধাপে বলুন- ওঁ তৎ সৎ

আলোচ্যসূচী

২য় ধাপে স্মরণ করুন গুরুদেবকে। কারন গুরুই ব্রহ্মা, গুরুই বিষ্ণু এবং গুরুই মহেশ্বর। তাই গুরুদেবের স্মরণে পাঠ করুনঃ

“ওঁ অখন্ডমন্ডলাকারং ব্যাপ্তং যেন চরাচরম্।

তৎপদং দর্শিতং যেন তস্মৈ শ্রীগুরুবে নমঃ।।

অজ্ঞানতিমিরান্ধস্য জ্ঞানঞ্জনশলাকয়া।

চক্ষুরুন্মীলিতং যেন তস্মৈ শ্রীগুরবে নমঃ।।

গুরুর্ব্রহ্মা গুরুর্বিষ্ণুঃ গুরুর্দেবো মহেশ্বরঃ।

গুরুরেব পরম ব্রহ্ম তস্মৈ শ্রীগুরবে নমঃ।।”

গুরুমন্ত্র পাঠ করা শেষ হলে ৩য় ধাপে নিজের পিতা মাতা কে প্রণাম করুন। কারন পিতা মাতাই আমাদের জাগতিক ঈশ্বর।

আরও পড়ুনঃ  আরতি কি ও কেন করা হয়? আরতির উপকরণ || সময় || নিয়ম || কারন, গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য || Aarti in Hinduism

পিতার প্রণাম মন্ত্রটি হচ্ছে-

“পিতা স্বর্গ, পিতা ধর্ম, পিতাহি পরম তপঃ।

পিতোরি প্রিতিমা পন্নে প্রিয়ন্তে সর্ব দেবতা ||”

এবার মাতার প্রনাম মন্ত্রটি পাঠ করার পালা।

“মাতা জননী ধরিত্রী, দয়াদ্র হৃদয়া সতী।

দেবীভ্যো রমণী শ্রেষ্ঠা নির্দ্দোশা সর্ব দুঃখ হরা।।”

ওঁ শান্তিরূপাং ক্ষমারূপাং স্নেহরূপাং শুভংকরীং।

সাক্ষাৎ ভগবতীদেবীং মাতরং ত্বাং নমাম্যহম্।।”

৪র্থ ধাপে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও রাধিকার প্রণাম মন্ত্র পাঠ করবেন

শ্রীকৃষ্ণ প্রণাম মন্ত্রটি হচ্ছে

“ওঁ কৃষ্ণায় বাসুদেবায় হরয়ে পরমাত্মনে ।

প্রণত-ক্লেশনাশায় গোবিন্দায় নমো নমঃ

“হে কৃষ্ণ করুণাসিন্ধো দীনবন্ধু জগৎপতে।

গোপেশ গোপীকা-কান্ত রাধাকান্ত নমোহস্তুতে।।

এবার শ্রীরাধিকার প্রণাম মন্ত্র পাঠ করুন

তপ্ত কাঞ্চন গৌরাঙ্গি রাধে বৃন্দাবনেশ্বরি।

বৃষভানুসুতে দেবী প্রণামামি হরি প্রিয়ে।।”

৫ম ধাপে সরস্বতী-ব্যাসাদি প্রনাম মন্ত্র পাঠ করুন:-

“নারায়ণং নমস্কৃত্য নরঞ্চৈব নরোত্তমম্‌ ।

দেবীং সরস্বতীং ব্যাসং ততো জয়মুদীরয়েৎ ।।”

৬ষ্ঠ ধাপে হাত জোড় করে “ওঁ নমো ভগবতে বাসুদেবায় নমঃ”-মন্ত্রটি তিন বার পাঠ করে শ্রীশ্রীগীতাকে পুষ্পাঞ্জলি অর্ঘ্য অর্পণ করুন এবং পারলে গীতা মাতাকে প্রণামী প্রদান করুন।

৭ম ধাপে শ্রী গীতা গ্রন্থটি খুলুন এবং হাত-জোড়পূর্বক পাঠ করুন

“ওঁ অস্য শ্রীমদ্ভগবদ্গীতামালামন্ত্রস্য শ্রী

ভগবান্ বেদব্যাসঃ ঋষিঃ অনুষ্টুপ্ ছন্দঃ শ্রীকৃষ্ণঃ পরমাত্মা

দেবতা অশোচ্যানন্বশোচস্ত্বং প্রজ্ঞাবাদাংশ্চ ভাষসে ইতি বীজং,

সর্বধর্মান্ পরিত্যজ্য মামেকং শরনং ব্রজ ইতি শক্তি”

সর্বধর্মান্ পরিত্যজ্য মামেকং শরণং ব্রজেতি শক্তিঃ,

অহং ত্বাং সর্বপাপেভ্যো মোক্ষয়িষ্যামি মা শুচঃ ইতি কীলকম্৷”

৮ম ধাপে শ্রীমদ্ভগবদ্ গীতার ধ্যান বা মঙ্গলাচরণ হাত-জোড়পূর্বক পাঠ করবেন-

“ওঁ হরি ওঁ তৎ সৎ,

ওঁ নমো ভাগবতে বাসুদেবায় ওঁ,

অথঃ শ্রীমদ্ভগবদ্ গীতার মঙ্গলাচরণম্ প্রারম্ভম্…

পার্থায় প্রতিবোধিতাং ভগবতা নারায়ণেন স্বয়ম্

ব্যাসেন গ্রথিতাং পুরাণমুনিনা মধ্যে মহাভারতম্৷

অদ্বৈতামৃতবর্ষিণীং ভগবতীমষ্টাদশাধ্যায়িনীম্

অম্ব ত্বামনুসন্দধামি ভগবদ্ গীতে ভবদ্বেষিণীম্ ॥”

এটি ছিল গীতার মঙ্গলাচারণের প্রথম শ্লোক। এরকম আরও ৮টি শ্লোক তথা মোট ৯টি শ্লোক নিয়ে গঠিত শ্রী শ্রী গীতার মঙ্গলাচারণ। সম্ভব হলে সবগুলো শ্লোক পাঠ করবেন। মঙ্গলাচারণ পাঠ শেষে বলুনঃ

“ওঁ ইতি শ্রীমদ্ভাগবত গীতার মঙ্গলাচরণম্ সমাপ্তম্।।”

৯ম ধাপে শ্রী শ্রী গীতা গ্রন্থখানি পাঠ করা শুরু করুন।

ধরা যাক আপনি ৪র্থ অধ্যায়ের ৭ম ও ৮ম শ্লোক দুইটি পাঠ করবেন। তাহলে হাত জোড় করে বলুন

আরও পড়ুনঃ  দেবব্রত ভীষ্মঃ অস্টবসুর এক অভিশপ্ত বসুদেবতা || Devavrata Bhishma -The Cursed Vasu of the Asta Vasus

অথ শ্রীমদভগবদ্গীতা ৪র্থ অধ্যায়, জ্ঞানযোগ, ৭ম ও ৮ম শ্লোক

এবার সংস্কৃত শ্লোক শুরু করুন

“যদা যদা হি ধর্মস্য গ্লানির্ভবতি ভারত ।

অভ্যুত্থানমধর্মস্য তদাত্মানং সৃজাম্যহম্

পরিত্রাণায় সাধূনাং বিনাশায় চ দুষ্কৃতাম্।

ধর্মসংস্থাপনার্থায় সম্ভবামি যুগে যুগে।।”

সরলার্থঃ হে ভারত ! যখনই ধর্মের অধঃপতন হয় এবং অধর্মের অভ্যূত্থান হয়, তখন আমি নিজেকে প্রকাশ করে অবতীর্ণ হই। সাধুদের পরিত্রাণ করার জন্য এবং দুষ্কৃতকারীদের বিনাশ করার জন্য এবং ধর্ম সংস্থাপনের জন্য আমি যুগে যুগে অবতীর্ণ হই।

১০ম ধাপঃ এই পর্যন্ত পাঠ করে আপনি যদি গীতাপাঠ শেষ করতে চান তাহলে বলুন-

“ওঁ তৎ সৎ ইতি শ্রীমদ্ভগবদ্গীতাসু উপনিষৎসু ব্রহ্মবিদ্যায়াং যোগশাস্ত্রে শ্রীকৃষ্ণার্জুন সংবাদে জ্ঞানযোগ নামকং ৪র্থ অধ্যায় একাংশেনঃ সমাপ্তম্।”

উল্লেখ্য আপনি যদি সম্পূর্ণ অধ্যায় পাঠ করে থাকেন তাহলে একাংশেনঃ শব্দটি উচ্চারণের প্রয়োজন নেই।

 ১১তম ধাপে শ্রীশ্রী গীতার মাহাত্ম্য পাঠ করুন।

মনে রাখবেন আপনি শ্রীশঙ্করাচার্য প্রণীত গীতা-মাহাত্ম্য বা শ্রীল ব্যাসদেব কৃত গীতা-মাহাত্ম্য বা শ্রীবৈষ্ণবীয়-তন্ত্রসারে গীতা-মাহাত্ম্য যে কোন মতের গীতা মাহাত্ম্য থেকে যে কয়টি ইচ্ছা শ্লোক সরলার্থ সহ পাঠ করতে পারেন।

১২তম ধাপে পরমপুরুষ শ্রীকৃষ্ণের কাছে ক্ষমাভিক্ষার করুন।

কারন কৃষ্ণস্তু ভগবান্ স্বয়্ম্৷ ঈশ্বরঃ পরমঃ কৃষ্ণঃ সচ্চিদানন্দবিগ্রহঃ। অনাদিরাদির্গোবিন্দঃ সর্ব্বকারণকারণম্।।

ক্ষমাভিক্ষা মন্ত্রটি হচ্ছে-

“ওঁ যদক্ষরং পরিভ্রষ্টং মাত্রাহীনঞ্চ যৎ ভবেৎ

পূর্ণং ভবতু ত্বৎ সর্ব্বং ত্বৎ প্রসাদাৎ জানার্দন ।।

ওঁ পূর্ণমদঃ পূর্ণমিদং পূর্ণাৎ পূর্ণমুদচ্যতে ।

পূর্ণস্য পূর্ণমাদায় পূর্ণমেবাবশিষ্যতে ।।

“জয় গীতা,জয় গীতা,জয় গীতা”

১৩ তম ধাপে শ্রী শ্রী গীতার ১৮টি গুহ্যনাম কীর্তন করুন-

“ওঁ গঙ্গা গীতা চ সাবিত্রী সীতা সত্যা পতিব্রতা।

ব্রহ্মাবলি ব্রহ্মবিদ্যা  ত্রিসন্ধ্যা মুক্তিগেহিনী।।

অর্ধমাত্রা চিদানন্দা ভবঘ্নী ভ্রান্তিনাশিনী।

বেদত্রয়ী পরানন্দা ত্বত্তার্থ জ্ঞানমঞ্জুরী।।”

১৪তম ধাপে পঞ্চতত্ত্বসহ তারকব্রহ্ম মহানাম জপ করুন-

“জয় শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য প্রভু নিত্যানন্দ শ্রীঅদ্বৈত গদাধর শ্রীবাসাদি গৌর ভক্তবৃন্দ।

হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ

কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।

হরে রাম হরে রাম

রাম রাম হরে হরে।।”

১৫তম তথা শেষ ধাপে শান্তিমন্ত্র পাঠ

“সর্বে সুখিনঃ ভবন্ত, সর্বে সন্ত নিরাময়াঃ।

সর্বে ভদ্রাণী পশ্যন্ত, মা কশ্চিদ্ দুঃখ ভাগ ভবেৎ।।”

সকলে সুখী হোন, নিরোগ হোন এবং প্রশান্তি লাভ করুন, কেউ যেন দুঃখ ভোগ না করে।।

ওঁ শান্তি, ওঁ শান্তি , ওঁ শান্তি

এবার আসুন গীতা পাঠের ফলাফল নিয়ে কথা বলা যাক। সাধুজন বলে থাকেন, গীতা দর্শন, স্পর্শ, শ্রবন, পঠন, সবকিছুতেই শ্রীকৃষ্ণের অপার কৃপা লাভ হয়। সুতারাং গীতার প্রতিটি অধ্যায় পাঠ করলে আলাদা আলাদা ফল মিলবে তা আশ্চর্য নয়। আসুন জেনে নেওয়া যাক গীতার প্রতিটি অধ্যায় পাঠের কি ফল-

গীতার প্রথম অধ্যায় পাঠ করলে মানুষের মন পবিত্র হয়।

দ্বিতীয় অধ্যায় পাঠ করলে নির্মলতা লাভ করা যায়

তৃতীয় অধ্যায় পাঠ করার ফলে  সর্বপাপ দূর হয়।

চতুর্থ অধ্যায় পাঠ করলে ব্রহ্মহত্যা এবং স্ত্রীহত্যাজনিত পাপ তৎক্ষণাৎ দূর হয়ে থাকে।

পঞ্চম অধ্যায় পাঠ করলে চৌর্যমহাপাপ দূর হয়।

ষষ্ঠ অধ্যায় পাঠ করার ফলে মন্দ ভাগ্য নাশ হয়।

সপ্তম অধ্যায় পাঠ করলে বুদ্ধি নির্মলতা লাভ করে।

অষ্টম অধ্যায় পাঠ করার ফলে অখাদ্য ও অপেয়জাত সকল প্রকার পাপ দূর হয়।

নবম অধ্যায় পাঠের ফলে পৃথিবী দানের মত পূণ্য লাভ হয়।

দশম অধ্যায় পাঠে সর্বপাপ বিনষ্ট হয়ে শ্রেষ্ঠ জ্ঞান জন্মে।

একাদশ অধ্যায় পাঠ করলে ব্রহ্মজ্ঞান লাভ হয়ে মুক্তি লাভ হয়।

দ্বাদশ অধ্যায় পাঠের ফলে  বিশুদ্ধ ভক্তি জন্মে।

ত্রয়োদশ অধ্যায় পাঠে জ্ঞানচক্ষু বিকাশ হয়।

চতুর্দশ অধ্যায় পাঠে অশ্বমেদি যজ্ঞের  মহাফল লাভ হয়।

পঞ্চদশ অধ্যায় পাঠ করলে নির্মল জ্ঞান লাভ করে যোগী হওয়া যায়।

ষোড়শ অধ্যায় পাঠে মানব সংসার বন্ধন থেকে মুক্তি লাভ হয়।

সপ্তদশ অধ্যায় পাঠের ফলে  রাজপেয় নামক যজ্ঞের ফল লাভ হয়।

অষ্টাদশ অধ্যায় পাঠের ফলে জ্ঞানরূপ অগ্নি দ্বারা পাপ দূর হয়।

এবার শ্রী শ্রী গীতার নামমাহাত্ম্য।

আপনারা ইতিমধ্যেই গীতার ১৮ টি গুহ্য নাম শ্রবণ করেছেন। এই ১৮টি নামেরও রয়েছে আলাদা আলাদা নামমাহাত্ম্য।

আরও পড়ুনঃ  সনাতন হিন্দু ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা বা প্রবর্তক কে? || সনাতনের উৎপত্তি|| Who is the Pioneer of Hinduism?

প্রথম নাম গঙ্গা – গঙ্গাস্নান যেমন আমাদের পবিত্র করে তেমনি গীতা পাঠ আমাদের মন পবিত্র করে বলে এটিও গীতার একটি নাম।

গীতা– গীতা হচ্ছে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মুখনিঃসৃত বানীর সংকলন। এই গ্রন্থটি মহাভারতেরই একটি অংশ।

সাবিত্রী -মহাসতী সাবিত্রী তাঁর মৃত স্বামীকে ছিনিয়ে এনেছিলেন যমরাজের কাছ থেকে। তাঁর সন্মার্থে শ্রী শ্রী গীতার আরেক নাম সাবিত্রী।

সীতা – দেবী সীতার পবিত্রতা যেমন অক্ষয় তেমনি গীতার পবিত্রতাও অক্ষয়। শত অসুর, দানব যেই এসে একে ছুঁয়ে যাক, অপবিত্র করার চেষ্টা করুক, গীতার পবিত্রতা কখনোই নষ্ট হবেনা।

সত্যা – গীতাতে পরমসত্য পরমেশ্বরের কথা বলা হয়েছে বলে গীতার আরেকটি নাম হচ্ছে সত্যা।

পতিব্রতা – পতির প্রতি ব্রতী যে নারী তিনিই পতিব্রতা। তবে এখানে পতি অর্থে জগৎপতি তথা স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণকে বোঝানো হয়েছে। শ্রীকৃষ্ণের প্রতি আনুগত্য যেমন তাঁর প্রিয় তেমনি গীতা গ্রন্থখানিও তাঁর প্রিয়।

ব্রহ্মাবলী -ব্রহ্মশক্তি থেকে নির্গত শক্তিকে বলাহয় ব্রহ্মাবলী। যে শক্তির বিনাশ নেই। অনুরূপভাবে গীতারও কোন বিনাশ নেই।

ব্রহ্মবিদ্যা-ব্রহ্মবিদ্যা বলতে ব্রহ্ম শক্তির পরিচায়ক এই গীতা। তাই তাকে ব্রহ্মবিদ্যা বলা হচ্ছে।

ত্রিসন্ধ্যা – গীতা পাঠের মুহুর্তটি ত্রিসন্ধ্যা অর্থাৎ সুর্যোদয়ের পূর্বে, মধ্যাহ্নে ও সুর্যাস্তের পর বন্দনা করার সমান পবিত্র। তাই শ্রী শ্রী গীতাকে ত্রিসন্ধ্যা বলা হচ্ছে।

মুক্তিগেহিনী – মুক্তি ও মোক্ষের পথ দেখায় বলে গীতাকে বলা হচ্ছে মুক্তিগেহিনী

অর্ধমাত্রা – ভগবানের অর্ধেক মাত্রা ফুটে ওঠে বলে এই গ্রন্থখানির নাম অর্ধমাত্রা, পূর্ণরূপ পাওয়া যায় যখন সকল শাস্ত্রের জ্ঞান হয়।

চিদানন্দা– চিৎ বা জ্ঞান জগতের যে আনন্দ তাই চিদানন্দা। এবং গীতা পাঠ করে এই আনন্দ লাভ করা যায়।

ভবঘ্নী — ভব অর্থ বস্তু বা মায়ার জগৎ, আর ঘ্ন অর্থ ধ্বংস করা। অর্থাৎ, যা বস্তু জগতের মায়াকে ধ্বংস করে। শ্রী শ্রী গীতা আমাদের পার্থিব মায়া ধবংস করে চিন্ময় ধামের প্রতি আকর্ষিত করে তোলে।

ভ্রান্তি নাশিনী– আমরা আমাদের চারপাশের জিনিস দেখে বিভ্রান্ত হই। আর একমাত্র গীতাই পারে আমাদের এই ভ্রান্তি নাশ করতে। তাই গীতার আরেক নাম ভ্রান্তি নাশিনী।

বেদত্রয়ী– গীতা হচ্ছে ঋকবেদ, সামবেদ ও যজুঃবেদ এই তিন বেদের সার। তাই গীতাকে সংক্ষেপে বেদত্রয়ী বলা হয়ে থাকে।

পরানন্দা – গীতা পাঠকালে পাঠককে ও শ্রবণে শ্রোতাকে পরম আনন্দ দেয় বলে এর নাম পরানন্দা।

তত্ত্বার্থ– সকল শাস্ত্রে যেই তত্ত্বের আলোচনা হয়েছে তার সরলার্থ এই গীতা। তাই গীতাকে সকল শাস্ত্রের তত্বার্থ বলা হয়ে থাকে।

জ্ঞানমঞ্জরী– একজন মানুষ বা জীবন জগতের জন্য যে সকল জ্ঞানের প্রয়োজন, তার সকল কিছুই গীতায় মঞ্জুরীকৃত রয়েছে। তাই শ্রীগীতা জ্ঞানমঞ্জরী নামেও জগত বিখ্যাত।

যারা শেষ অব্দি লেখাটি পড়লেন তাদের প্রতি আমাদের অশেষ কৃতজ্ঞতা। পরম করুণাময় গোলোকপতি সচ্চিদানন্দ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও তাঁর একান্ত হ্লাদিনী শক্তি শ্রীমতী রাধারাণী আর সকল বৈষ্ণব ভক্ত পার্ষদদের শ্রীচরণে নিবেদন, সকলের জীবন শ্রীশ্রীগীতার আদর্শে মঙ্গলময়, কল্যানময়, প্রেমময়, ভক্তিময়, মুক্তিময়, শান্তিময়, সুন্দরময় এবং আনন্দময় হোক। ভুল ত্রুটি মার্জনীয়। জয় শ্রীকৃষ্ণ।

3.3/5 - (3 votes)

Leave a Reply