You are currently viewing কেমন যাবে ২০২৫ সালের দুর্গাপূজা? সময় নির্ঘণ্ট || মহালয়া || গমনাগমন || আবহাওয়া || Durga Puja 2025 ||

কেমন যাবে ২০২৫ সালের দুর্গাপূজা? সময় নির্ঘণ্ট || মহালয়া || গমনাগমন || আবহাওয়া || Durga Puja 2025 ||

রথের দড়িতে টান পড়লেই শুরু হয় বাঙালীর দুর্গাপুজোর জন্য দিন গোনা।  ৮ থেকে ৮০ সকলের মনেই প্রশ্ন জাগে এবারের দুর্গাপুজোর মহালয়া কবে পড়েছে? কত তারিখ থেকে কত তারিখ পর্যন্ত ষষ্ঠী থেকে দশমী পড়েছে? এবার দেবী দুর্গার আগমন ও গমন কিভাবে ঘটবে? এবং পুজোর সময়ে আবহাওয়া কেমন থাকবে? তো চলুন জেনে নেওয়া যাক ২০২৫২ সালের দুর্গাপুজোর সময় নির্ঘণ্ট, দেবীর আগমন ও গমনের বাহন এবং পুজো চলাকালীন সময়ের আবহাওয়া সম্পর্কে।

বাংলায় দুর্গাপুজোর উন্মাদনা শুরু হয় মহালয়াকে কেন্দ্র করে।  যদিও মহালয়ার সাথে দুর্গাপুজোর সরাসরি কোন সম্পর্ক নেই তবুও এই দিনে আকাশ বানী কর্তৃক মহিষাসুরমর্দ্দিনি নামক অনুষ্ঠান প্রচার করার কারনে মহালয়া তিথির এক বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে আমাদের জীবনে।  এদিন পিতৃপক্ষের শেষ দিন এবং এর পরের তিথি থেকেই শুরু হয় দেবীপক্ষ।  ২০২৫ সালের দুর্গাপুজোর মহালয়া পড়েছে ইংরেজী ২১শে সেপ্টেম্বর তথা বাংলা ৪ঠা আশ্বিন ১৪৩২, রবিবার।  এদিন সকালে রেডিওতে কান পাতলে বা টেলিভিশনের পর্দায় চোখ রাখলেই শুনতে পাওয়া যাবে বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের দ্বরাজ কণ্ঠের চণ্ডীপাঠ- “আশ্বিনের শারদ প্রাতে জেগে উঠেছে আলোকমঞ্জির। ”

বস্তুত মহালয়া অমাবস্যার পরের প্রতিপদ থেকে শুরু হয় মহামায়ার অকাল বোধন।  প্রতিপদ থেকে শুরু করে নবমী তিথি পর্যন্ত প্রতিদিন ১টি করে মোট ৯টি রূপে পূজিতা হন দেবী আদ্যাশক্তি মহামায়া।  দেবীর এই নয়টি রূপকে একত্রে বলা হয় নবদুর্গা।  এবং এই নয়টি তিথিকে একত্রে বলা হয় নবরাত্রি।

  • প্রতিপদে তিনি পূজিতা হন – শৈলপুত্রী নামে।
  • দ্বিতীয়ায় তিনি পূজিতা হন – ব্রহ্মচারিণী নামে।
  • তৃতীয়ায় তিনি পূজিতা হন – চন্দ্রঘণ্টা নামে।
  • চতুর্থীতে তিনি পূজিতা হন – কুষ্মাণ্ডা নামে।
  • পঞ্চমীতে তিনি পূজিতা হন – স্কন্দমাতা হিসেবে।
  • ষষ্ঠীতে তিনি পূজিতা হন – কাত্যায়নী নামে।
  • সপ্তমীতে তিনি পূজিতা হন – কালরাত্রি নামে।
  • অষ্টমীতে তিনি পূজিতা হন – মহাগৌরি নামে।
  • এবং নবমি নিশিতে তিনি পূজিতা হন – সিদ্ধিদাত্রী নামে।
আরও পড়ুনঃ  মহর্ষি দধিচীর প্রকৃত পরিচয় ও আত্মত্যাগের কাহিনী || বজ্রসম কঠিন অস্থি যার || Mahrshi Dadhichi Story||

তবে আমাদের বাংলায় সম্পূর্ণভাবে নবরাত্রি ব্রত পালন করা হয় না।  নবরাত্রির ষষ্ঠী তিথি থেকে শুরু করে নবমী পর্যন্ত আদ্যাশক্তি মহামায়ার পুজো করে দশমীতে বিসর্জন দেওয়া হয় হিমালয় কন্যাকে।  এরপর শুরু হয় আরও এক বছরের অপেক্ষা।

তো ২০২৫ সালের দুর্গাপুজোর ষষ্ঠী পড়েছে ইংরেজী ২৮শে সেপ্টেম্বর এবং বাংলা ১১ই আশ্বিন ১৪৩২ অর্থাৎ রবিবার সকাল ১০টা ৪৩ মিনিট পর্যন্ত।

শাস্ত্রমতে ষষ্ঠী তিথিতে হয়ে থাকে দেবীর বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাস।  এদিন দেবীর মৃন্ময়ী রূপে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করার আনুষ্ঠানিকতাই মূলত দেবীর বোধন।  আবার এদিন সন্ধ্যায় প্রতিষ্ঠা করা হয় কলাবৌ।

২০২৫ সালের দুর্গাপুজোর সপ্তমী পড়েছে ২৯শে সেপ্টেম্বর এবং বাংলা ১২ই আশ্বিন, ১৪৩২ অর্থাৎ সোমবার দুপুর ১২টা ২৮ মিনিট পর্যন্ত।

দুর্গাসপ্তমীর সকালটা শুরু হয় নবপত্রিকা স্নানের মাধ্যমে, এরপর ঘট পুজো, ষোড়শ উপচারে দেবীর পুজো ও সন্ধ্যায় ‘সন্ধিপূজা’র প্রস্তুতি।

২০২৫ সালের দুর্গাপুজোর অষ্টমী পড়েছে ৩০শে সেপ্টেম্বর এবং বাংলা ১৩ই আশ্বিন, ১৪৩২ অর্থাৎ মঙ্গলবার দুপুর ১টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত।

অষ্টমী তিথিকে ধরা হয় দুর্গাপুজোর মূল দিন হিসেবে।  এই তিথিতে বিভিন্ন মণ্ডপে দেখা যায় কুমারী পূজা।  তাছাড়া অষ্টমী নবমীর সন্ধিক্ষণে আয়োজন করা হয় সন্ধিপূজার।  এবছর সন্ধিপূজা অনুষ্ঠিত হবে দুপুর ১টা বেজে ২১ মিনিট থেকে দুপুর ২টো বেজে ৯ মিনিটের মধ্যে।  এবং সন্ধিপূজার বলদানের সময় নির্দ্ধারণ করা হয়েছে দুপুর ১ টা ৪৫ মিনিটের পরে।

২০২৫ সালের দুর্গাপুজোর নবমী পড়েছে ১লা অক্টোবর এবং বাংলা ১৪ই আশ্বিন, ১৪৩২ অর্থাৎ বুধবার দুপুর ২টা ৩৬ মিনিট পর্যন্ত।

নবমীতে আয়োজিত হয় মহা হোম যজ্ঞ।  এবং এই দিনে মায়ের রূপ দেখা হয় চণ্ডিকা রূপে।

২০২৫ সালের দুর্গাপুজোর দশমী পড়েছে ২রা অক্টোবর এবং বাংলা ১৫ই আশ্বিন, ১৪৩২ অর্থাৎ বৃহস্পতিবার দুপুর ২টা ৫৬ মিনিট পর্যন্ত।

দুর্গাপুজোর ৫টি দিনের মধ্যে এটিই সবচেয়ে আবেগঘন দিন।  এদিন সিঁদুর খেলা, প্রণাম এবং বিজয়ার মিষ্টিমুখ আর কয়েক ফোঁটা অশ্রু দিয়ে বিদায় জানানো হয় মহামায়াকে।  আর দেবী দুর্গাও এক বছরের জন্য পিত্রালয় ছেড়ে চলে যান তার নিজ গৃহ কৈলাসে।

আরও পড়ুনঃ  বিশ্বব্যাপী দুর্গাপূজার সময় নির্ঘণ্ট (সময়সূচী) ২০২৩ (১৪৩০)

এবার আসি ২০২৫ সালের দুর্গাপুজোয় মা দুর্গার আগমন ও গমন প্রসঙ্গে।

আপনারা অনেকেই জানেন দেবী দুর্গা কৈলাস থেকে মর্ত্যে আসা যাওয়ার জন্য চারটি বাহন ব্যবহার করে থাকেন।  এগুলো হচ্ছে গজ বা হাতি, ঘোটক বা ঘোড়া, দোলা বা পালকি এবং নৌকা।

শাস্ত্রে বলা হয়েছে,

“রবৌ চন্দ্রে গজারূঢ়া ঘোটকে শনি ভৌময়োঃ।  গুরৌ শুক্রে চ দোলায়াং নৌকায়াং বুধবাসরে।।”

অর্থাত্‍, দুর্গাসপ্তমী যদি রবিবার অথবা সোমবারে পড়ে তাহলে দেবীর আগমন হবে গজে বা হাতিতে।  আবার দশমীর দিন যদি রবি বা সোমবার পড়ে তাহলেও মায়ের গমনের বাহন হবে গজ বা হাতি।  শাস্ত্রমতে গজে চ জলদা দেবী শস্যপূর্ণা বসুন্ধরা।  অর্থাৎ, দেবী দুর্গার বাহন যদি হয় গজ বা হাতি তাহলে বসুন্ধরা শস্যপূর্ণ হয়ে মানুষকে সুখ, স্বাচ্ছন্দ্যে ভরিয়ে তুলবে।

অন্যদিকে, দুর্গাসুপ্তমী যদি শনিবার বা মঙ্গলবারে পড়ে তাহলে দেবীর দুর্গার আগমন ও গমন হবে ঘোটক বা ঘোড়ায়।  দেবীর বাহন ঘোড়া হলে তার ফল হচ্ছে ছত্রভঙ্গস্তুরঙ্গমে।  অর্থাৎ, সামাজি, রাজনৈতিক ও সাংসারিক ক্ষেত্রেও অস্থিরতা প্রকাশ পাবে।  যেমন রাজনৈতিক উত্থান-পতন সামাজিক স্তরে বিশৃংখলা, অরাজকতা, গৃহযুদ্ধ, দুর্ঘটনা, অপমৃত্যু ইত্যাদির প্রভাব বাড়বে।

আবার সপ্তমী ও দশমী যদি বুধবারে হয় তা হলে দেবীর আগমন ও বিসর্জন দুইই হবে নৌকায়।  দেবীর নৌকায় আগমন ও গমনের ফল হিসেবে শাস্ত্রে বলা হয়েছে শস্যবৃদ্ধিস্তুথাজলম। অর্থাৎ, এ ক্ষেত্রে প্রবল বন্যা, ঝড়, অতিবৃষ্টি ইত্যাদির জন্যে একদিকে প্লাবন ও ক্ষয়ক্ষতি এবং অন্যদিকে দ্বিগুণ শস্যবৃদ্ধি ঘটে থাকে।

এবং সপ্তমী এবং দশমী যদি বৃহস্পতিবার অথবা শুক্রবারে হয়ে থাকে তা হলে দেবীর আগমন ও বিসর্জন ঘটবে দোলায়‌।  দেবীর সকল বাহনের মধ্যে দোলা সবচেয়ে অশুভ বলে মানা হয়।  শাস্ত্রমতে দোলায়াং মরকং ভবেৎ।  অর্থাৎ, মহামারি, ভূমিকম্প, যুদ্ধ, মন্বন্তর, খরা ইত্যাদির প্রভাবে অসংখ্য মানুষের মৃত্যু তো ঘটাবেই, আবার সেই সঙ্গে ক্ষয়ক্ষতিও হবে।

আরও পড়ুনঃ  কৃষ্ণের আগে কেন রাধার আরাধনা করা হয়? রাধে রাধে

২০২৫ সালের দুর্গাপুজোর সপ্তমী পড়েছে রবিবার।  সেকারনে দেবীর আগমন ঘটবে গজ বা হাতিতে।  এর ফলে পৃথিবী হবে ধন্য-ধান্য-পুষ্পে ভরা। আবার দুর্গাপুজোর দশমী বৃহষ্পতিবার হওয়ায় তার গমনের বাহন হবে  দোলা।  ফলে পৃথিবীতে দেখা দিতে পারে মহামারি, ভূমিকম্প, যুদ্ধ, মন্বন্তর, খরা এবং মড়ক।

এবার আসুন জেনে নেওয়া যাক, ২০২৫ সালের দুর্গাপুজো চলাকালীন আবহাওা প্রসঙ্গে।  এ বছর দুর্গাপুজোর সময় কিছুটা এগিয়ে আসার কারনে পুজো চলাকালীন সময়ে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।  তবে আবহাওয়া দপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, দুর্গাপুজোর সময় দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও, বড় কোন দুর্যোগের পূর্বাভাস আপাতত নেই।  সুতারাং, ভালো কাটুক আপনার পুজো এই কামনায় শেষ করছি আজকের আয়োজন।  জয় মা দুর্গা।

Rate this post

Leave a Reply