You are currently viewing অগস্ত্য মুনির মাথায় লাথি মেরে সাপে পরিণত হলেন রাজা নহুষ ||  Mythological Story Of Cursed  Nahusha ||

অগস্ত্য মুনির মাথায় লাথি মেরে সাপে পরিণত হলেন রাজা নহুষ || Mythological Story Of Cursed Nahusha ||

রাজা নহুষ ছিলেন একমাত্র ব্যাক্তি যিনি পৃথিবীতে মানুষ হিসেবে জন্মগ্রহণ করেও দেবতাদের রাজা ইন্দ্রের পদে অভিষিক্ত হয়েছিলেন। তবে সেই রাজসুখ খুব বেশীদিন স্থায়ী হয় নি তাঁর জীবনে। ক্ষমতার দম্ভ, পরস্ত্রীর প্রতি কামুক মনোভাব ও ব্রহ্মজ্ঞদের অপমান করার ফলে অভিশপ্ত হয়ে তাকে সর্পরূপে বিচরণ করতে হয়েছিল মর্ত্ত্যে। পূর্বজীবনের ধর্মাত্মা রাজা নহুষ সর্পযোনী প্রাপ্ত হওয়ার পর পরাজিত করেছিলেন ১০ হাজার হাতির সমান শক্তিধর তারই উত্তরপুরুষ ভীমকে। আবার যুধিষ্ঠিরের জ্ঞানের পরশ পেয়ে মুক্তি লাভও করেছিলেন তিনি। মহাভারতের বনপর্বে বর্ণিত কুরু পাণ্ডবদের পুর্বপুরুষ ও চন্দ্রবংশীয় রাজা নহুষের জীবনের নানা উত্থান-পতনের ঘটনা আজ উপস্থাপন করা হল আপনাদের জন্য।

মহাভারতের কুরু-পাণ্ডবদের পূর্বপুরুষ তথা মহারাজ পুরূরবার জেষ্ঠ সন্তান আয়ু এবং অসুর স্বরভানু তথা রাহুর কন্যা প্রভা, এই দম্পত্তির পুত্র ছিলেন নহুষ। রাজা হিসেবে নহুষ ছিলেন অত্যন্ত প্রজা হিতৈষী, দয়ালু এবং ধর্মাত্মা। শাসক হিসেবে তিনি ছিলেন সসাগরা পৃথিবীর অধিশ্বর। তাঁর পরাক্রমের সামনে বড় বড় ক্ষত্রিয় রাজা ও যোদ্ধারাও তুচ্ছ খড়কুটোর মত উড়ে যেতেন। হরিবংশ পুরাণ মতে রাজা নহুষের স্ত্রী ছিলেন বিরজা। তবে পদ্মপুরাণ বলছে নহুষের স্ত্রীর নাম অশোক সুন্দরী। শিব ও পার্বতীর কন্যা এই অশোক সুন্দরী দেবী আজও দক্ষিণ ভারতে পূজিতা হন বালাত্রিপুরাসুন্দরী নামে।

পদ্মপুরাণের কাহিনী থেকে জানা যায়, পুত্র গণেশ ও কার্ত্তিক কৈলাস ত্যাগ করার পর শিবজায়া পার্বতী অত্যন্ত একাকীত্ব বোধ করছিলেন। তাই তিনি দেবাদিদেব মহাদেবকে অনুরোধ করলেন কোন একটি মনোরম স্থানে তাকে ভ্রমণ করাতে। পার্বতীর কথা অনুসারে শিব তাকে নিয়ে গেলেন নন্দন কাননে। এ কাননটির আশে পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল নানা রকমের কল্পতরু। এই কল্পতরুরা চাহিবামাত্র যে কোন মনোষ্কামনা পূর্ণ করতে পারতেন। তাই দেবী পার্বতী সকল কামনাপূর্ণকারী কল্পতরুর কাছে একটি কন্যা সন্তান কামনা করলেন। ফলে দেবীর মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করে অশোকসুন্দরী নামক এক অতি মনোরামা সুন্দরী কন্যার জন্ম হল। দেবী পার্বতী তখন ভবিষ্যৎবানী করলেন যে, চন্দ্রবংশীয় রাজা আয়ু ও প্রভার জেষ্ঠ সন্তান মহারাজ নহুষের সাথে এই কন্যার বিবাহ হবে।

কিছুকাল পরে হুন্দ নামক এক অসুরের কুদৃষ্টি পড়ে অশোকসুন্দরী দেবীর উপর। এই দুর্মতি অসুর অশোকসুন্দরীর অনিন্দ্যসুন্দর মুখশ্রীতে আকৃষ্ট হয়ে তাকে বিবাহের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু অশোকসুন্দরীর বিবাহ যেহেতু রাজা নহুষের সাথে পূর্বনির্ধারিত ছিল, তাই অসুরের এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন অশোকসুন্দরী। এর কিছুদিন পর অসুর হুন্দ ছদ্মবেশ ধারণ করে এবং অশোকসুন্দরীর সাথে প্রতারণা করে তাকে তাঁর নিজের দূর্গে নিয়ে যান। কিন্তু এক পর্যায়ে অশোকসুন্দরী ছদ্মবেশী হুন্দকে চিনতে পারলেন, এবং তাকে অভিশাপ দিলেন মহারাজ আয়ুর পুত্র নহুষের হাতেই তাঁর মৃত্যু হবে। কিছুদিনের মধ্যেই ফলে গেল অভিশাপ। রাজা নহুষের সাথে প্রচণ্ড যুদ্ধে প্রাণ হারালেন হুন্দ। এবং অশোকসুন্দরীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে দিন কাটাতে রাজা নহুষের।

আরও পড়ুনঃ  পূর্বজন্মে পরম বিষ্ণুভক্ত হয়েও কেন পরজন্মে রাবণ ও কুম্ভকর্ণ রূপে জন্মাতে হল?

এবার আসি স্বর্গরাজ্যের ঘটনায়। একদা দেবরাজ ইন্দ্রের সাথে শত্রুতার ফলে তষ্টা তথা বিশ্বকর্মা আগুনে আহুতি দিয়ে বিত্রাসুর নামক এক মহাবলশালী অসুর সৃজন করেছিলেন। এই অসুরের এতটাই পরাক্রমশালী ছিলেন যে কোন দেবতার পক্ষেই তাকে পরাজিত করা সম্ভব ছিল না। তাই বিষ্ণুর নির্দেশে মহর্ষি দধিচীর অস্থি দিয়ে নির্মাণ করা হল বজ্র। সেই বজ্রাঘাতে এবং কিছুটা ছলের আশ্রয় নিয়ে দেবরাজ ইন্দ্র বধ করেছিলেন বিত্রাসুরকে। কিন্তু এই পরাক্রমশালী অসুরকে বধ করেও শান্তি পেলেন না দেবরাজ ইন্দ্র। কারন এই অসুরকে বধ করার জন্য ব্রহ্মবধের পাপ গ্রাস করেছে দেবরাজ ইন্দ্রকে।  তাছাড়া একজন নিষ্পাপ মুনিকে প্রাণ ত্যাগ করতে হয়েছে এই অসুরের নিধন করার জন্য। সব মিলিয়ে এক অন্ধকার ক্লেশে পর্যুদস্ত হয়ে রাজ্য ও সিংহাসন ত্যাগ করলেন তিনি। এরপর তিনি এক নির্জন স্থানে মোহাবিষ্টের মত নির্জনবাস করতে লাগলেন।

এদিকে দেবরাজ ইন্দ্রের অনুপস্থিতিতে স্বর্গরাজ্য প্রায় অচল হয়ে পড়ল। নেতৃত্বের অভাবে দেবতারা হয়ে পড়লেন দিশেহারা। তখন দেবগণ ও ব্রহ্মজ্ঞ মুনি ঋষিদের মতামতে স্বর্গের নতুন রাজা নির্বাচন করা শুরু হল। সেসময় রাজা নহুষের রাজ্য পরিচারলনা ও প্রজা প্রতিপালনের সুখ্যাতি ছড়িতে পড়েছিল সমগ্র ত্রিভূবন জুড়ে। তাই অনেক বিচার বিবেচনা করার পর মর্ত্ত্যধামের রাজা নহুষকে নির্বাচিত করা হল স্বর্গরাজ্যের নতুন রাজা হিসেবে। এরপর দেবগণ নহুষের কাছে এসে অনুরোধ করলেন ইন্দ্র পদে অধিষ্ঠিত হয়ে স্বর্গরাজ্য শাসন করার জন্য। কিন্তু রাজা নহুষ জানালেন, তিনি সামান্য মানুষ মাত্র। স্বর্গরাজ্য শাসন করতে যে দৈবিক ক্ষমতা প্রয়োজন সেটা তিনি কিভাবে পাবেন? নহুষের কথায় সমস্ত দেবগণ ও ব্রহ্মজ্ঞ মুনি ঋষিগণ তাকে বিপুল ক্ষমতা দান করলেন, এবং তাকে দেবরাজ্যের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত করলেন। নহুষ হলেন স্বর্গরাজ্যের ৩৬,৯৮,২৫৬ তম ইন্দ্র।

তো রাজা হওয়ার পর নহুষ প্রথমদিকে খুব ভালোভাবেই পরিচালনা করছিলেন স্বর্গরাজ্যকে। কিন্তু কথায় বলে ক্ষমতার মোহ এবং দম্ভে মানুষ পশুত্বকে বরণ করতেও দ্বিধা করে না। নহুষের ক্ষেত্রেও সেই একই ঘটনা ঘটল। প্রবল ধর্মপরায়ণ, প্রজাহিতৈষী ও শাস্ত্রজ্ঞ রাজা থেকে নহুষ পরিণত হলেন অহংকারী, কামুক ও দুশ্চরিত্রবান এক রাজায়। ধীরে ধীরে রাজ্য পরিচালনা ত্যাগ করে তিনি অপ্সরাদের সাথে  আনন্দ উপভোগে মেতে উঠলেন। এক পর্যায়ে ইন্দ্রের পত্নী শচীদেবীর প্রতিও কুদৃষ্টি দিলেন তিনি। তিনি চাইলেন, যেহেতু তিনি এখন স্বর্গের রাজা সেহেতু ইন্দ্রের পত্নী তারই পত্নী হবেন এবং সর্বদা তাঁর পদসেবায় নিয়োজিত থাকবেন। কিন্তু তা কিভাবে হয়? দেবরাজ ইন্দ্রের পত্নী শচীদেবী অত্যন্ত পতিব্রতা, দেবরাজের জীবদ্দশায় তিনি কেন এই পাপে লিপ্ত হবেন? সুতারাং শচীদেবী কিছুতেই নহুষের এই প্রস্তাবে রাজি হলেন না। কিন্তু তাতে আসলে কি আসে যায়? নহুষ তখন অসীম শক্তিধারী। তাঁর বিরুদ্ধাচারণ করে টিকে থাকার ক্ষমতা কারো নেই। তাই ইন্দ্রানী শচীদেবী শরণাপন্ন হলেন দেবগুরু বৃহষ্পতির। বৃহস্পতি বুঝলেন যেখানে শক্তি দ্বারা জয়লাভ করা যায় না সেখানে বুদ্ধির প্রয়োগ করতে হয়। তাই তিনি শচীদেবীকে এ সংকট সমাধানের জন্য একটি উপায় বের করে দিলেন।

আরও পড়ুনঃ  শিবের নাম চন্দ্রশেখর কেন?

বৃহস্পতির পরামর্শ পেয়ে তাঁর আশ্রম ত্যাগ করে পুনরায় স্বর্গরাজ্যে ফিরে এলেন শচীদেবী। এরপর দূত মারফত নহুষকে খবর পাঠালেন, তিনি নহুষের প্রস্তাব মত তাঁর পত্নী হতে রাজি আছেন। তবে এর জন্য নহুষকে একটি শর্ত মানতে হবে। শর্তটি হচ্ছে নহুষ যখন শচীদেবীকে পালকিতে চড়ে নিতে আসবেন তখন তা কোন সাধারন পালকি হলে চলবে না। কোন অশ্ব বা গজ জাতীয় প্রানী সেই পালকি বহন করতে পারবে না। বরং ব্রহ্মজ্ঞ মুনি ঋষিগনকে সেই পালকি বহন করে নিয়ে আসতে হবে। তবেই তিনি নহুষের পত্নী হিসেবে তাঁর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবেন।

দূতের মাধ্যমে এই সংবাদ ও শর্ত শুনে তাচ্ছিল্যের সাথে হেসে উঠলেন নহুষ। ভাবলেন এ আর এমন কি কঠিন শর্ত? তিনি সাথে সাথে ঋষিগণকে আদেশ দিলেন তাকে পালকিতে বহন করে অন্তঃপুরে শচীদেবীর কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য। ঋষিগণও রাজার এ আদেশ মেনে নিতে বিলম্ব করলেন না। কারন প্রথমত নহুষ স্বর্গের রাজা, তাঁর আদেশ মান্য করাই কর্তব্য, এবং দ্বিতীয়ত মুনি ঋষিগন এসকল ভালো-মন্দ, মান-অপমানের অনেক উর্দ্ধে। সুতারাং ব্রহ্মজ্ঞ ঋষিগণ পালকিতে কাধে লাগিয়ে রাজা নহুষকে নিয়ে চললেন ইন্দ্রানীর কাছে। কিন্তু তাঁরা কেউই পেশাদার পালকিবাহক না হওয়ার কারনে পালকির গতি ছিল অত্যন্ত ধীরে। তাই রাজা নহুষ সংস্কৃত শব্দ সর্প সর্প উচ্চারন করে ঋষিগণকে তাড়াতাড়ি চলার জন্য তাগাদা দিচ্ছিলেন। উল্লেখ্য সংস্কৃতে সর্প সর্প শব্দযুগল একটি ক্রিয়াপদ এবং এর অর্থ চল চল। কিন্তু তাতেও কোন ফল হল না। পালকী বহনে অনভ্যস্ত ঋষিগণ এর চেয়ে বেশী গতিতে চলতে পারলেন না। এই ঋষিদের মধ্যে একজন ছিলেন অগস্ত্য। আপনারা অনেকেই জানেন এই অগস্ত্য মুনি ছিলেন খর্বকায়। অর্থাৎ তাঁর শারীরিক উচ্চতা ছিল সাধারনের চেয়ে অনেক কম। ফলে তিনি বারবার পিছিয়ে পড়ছিলেন এবং এর ফলে পালকির গতি কমে যাচ্ছিল। এক পর্যায়ে রাজা নহুষ কুপিত হলেন এই অগস্ত্য মুনির উপর। এরপর পালকিতে বসে মুনির মাথায় পদাঘাত করলেন তিনি। ব্যাস, দেবগুরু বৃহষ্পতির যোজনা এবার সফল হল। মাথায় আঘাত পেয়ে অগস্ত্য মুনি তৎক্ষণাৎ নহুষকে অভিশাপ দিলেন “পাষণ্ড নহুষ, বৃদ্ধ ঋষিদের কাঁধে চেপে যেভাবে সর্প সর্প বলেছ এবং ব্রাহ্মণের মস্তিষ্কে যেভাবে আঘাত করেছ তাতে তোমার অধঃপতন হবে এবং তুমি সর্পযোনী প্রাপ্ত হয়ে অর্থাৎ সাপ রূপে মর্ত্ত্যে পরিভ্রমণ করবে।” তবে অভিশাপের পাশাপাশি অগস্ত্য মুনি তাকে বর দিয়েছিলেন যে “মর্ত্ত্যে তোমার থেকে বেশী শক্তিশালী সবাই তোমার কাছে শক্তিতে হার মানবে। এবং আজ থেকে ১০ হাজার বছর পরে তোমারই উত্তরপুরুষ যুধিষ্ঠিরের মাধ্যমে তোমার উদ্ধার হবে।” ফলে নহুষ স্বর্গ থেকে মর্ত্ত্যে পতিত হয়ে এবং সর্প রূপ ধারণ করে নির্জন স্থানে গুহাবাস করতে লাগলেন। অন্যদিকে শ্রীবিষ্ণুর পরামর্শে অশ্বমেধ যজ্ঞ করে ইন্দ্রদেবও তাঁর ব্রহ্মবধের পাপ থেকে মুক্ত হলেন এবং পুনরায় স্বর্গে ফিরে এসে রাজত্ব করতে লাগলেন।

আরও পড়ুনঃ  মৃত্যুর পর ৪৭ দিন পর্যন্ত আত্মার সাথে কি কি ঘটে? গরুড় পুরাণ || Garuda Purana Story ||

এভাবে কেটে গেল বহুকাল। শুরু হল দ্বাপর যুগ। তখন পঞ্চপাণ্ডবগন সর্পরূপী নহুষের গুহার কাছাকাছি একটি জঙ্গলে বাস করছেন। একদিন পঞ্চপাণ্ডবের দ্বিতীয় পাণ্ডব ভীমসেন খাদ্যের সন্ধানে নহুষের গুহার একেবারে কাছাকাছি পৌছে গেলেন। এসময় বিশালাকৃতির সর্পদেহধারী নহুষ তাকে নিজের শরীর দিয়ে পেঁচিয়ে আড়ষ্ট করে ফেললেন এবং তাকে ভক্ষণ করতেও উদ্যত হলেন। ভীমসেন বুঝতে পারলেন এ কোন সাধারন সাপ নয়। তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “হে সর্পদেব, আমি মৃত্যুকে ভয় পাই না, কিন্তু আমি পাণ্ডুপুত্র যুধিষ্ঠিরের ভ্রাতা ভীম।  ১০ হাজার হাতির সমান শক্তি আমার শরীরে। কিন্তু আপনি কিভাবে আমাকে এত সহজে পরাজিত করলেন?” উত্তরে সর্পরূপী নহুষ বললেন, “আমি তোমার পূর্বপুরুষ রাজা নহুষ। অগস্ত্য মুনির দ্বারা অভিশপ্ত হয়ে আমি সর্পবেশে মর্ত্ত্য পরিভ্রমণ করছি।” এদিকে দীর্ঘক্ষণ অতিবাহিত হওয়ার পরেও ভ্রাতা ভীমকে ফিরে আসতে না দেখে তাঁর খোজে বেরিয়ে পড়লেন ধর্মাত্মা যুধিষ্ঠির। অরণ্যের মধ্যে খুজতে খুঁজতে তিনি এক পর্যায়ে তিনি ভীমসেনকে আবিষ্কার করলেন সর্পবেষ্টিত ও আড়ষ্ট অবস্থায়।

কাহিণীর এ পর্যায়ে সর্পরূপী নহুষের সাথে কথোপকথন শুরু হল যুধিষ্ঠিরের। নহুষ বললেন, “হে যুধিষ্ঠির, তুমি যদি আমার প্রশ্নের সঠক উত্তর দিতে পারো, তাহলে আমি তোমার ভ্রাতা ভীমের কোন প্রকার অনিষ্ট করব না।” নহুষের এ প্রস্তাবে রাজি হলেন যুধিষ্ঠির। নহুষ প্রশ্ন করলেন, “বলোতো ব্রাহ্মণ কে?” যুধিষ্ঠির ক্ষত্রিয় বংশজাত হলেও তাঁর চরিত্র ছিল ব্রাহ্মন জ্ঞানে ভরপুর। নহুষের প্রশ্নের উত্তর গুছিয়ে সুন্দরভাবেই দিয়েছিলেন তিনি। তবে সংক্ষেপে বলতে গেলে তাঁর উত্তর ছিল, “সত্যনিষ্ঠা, ক্ষমা, দয়া এবং চারিত্রিক দৃঢ়তা যার মধ্যে আছে তিনিই ব্রাহ্মণ। এই গুনগুলো কোন শুদ্রের মধ্যে থাকলে তিনি ব্রাহ্মণ হিসেবে বিবেচিত হবেন, আবার কোন ব্রাহ্মণ সন্তানের মধ্যে এই গুণগুলো না থাকলে তিনি ব্রাহ্মণ হিসেবে বিবেচিত হবেন না। ” এছাড়াও যুধিষ্ঠির ও নহুষের মধ্যে দীর্ঘক্ষণ ধরে চলেছিল প্রশ্নোত্তর পর্ব। সবশেষে যুধিষ্ঠিরের পর্বতপ্রমান জ্ঞানের পরশ পেয়ে এবং সেই জ্ঞানের কিয়দংশ নিজের মধ্যে ধারণ করে অভিশাপ থেকে মুক্ত হয়েছিলেন রাজা নহুষ। মুক্ত হয়ে স্বর্গে যাওয়ার আগে তিনি ভীমকেও তাঁর নাগপাশ থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন এবং তাঁর সমস্ত শক্তি ভীমকে প্রদান করে গিয়েছিলেন। মহাভারতের বনপর্বের এই কাহিনী আজও আমাদেরকে শিক্ষা দেয় অহংকার ও কামুকতা ব্যাক্তিজীবনে কতটা অধঃপতন ঘটাতে পারে এবং জ্ঞানরূপ প্রদীপ কিভাবে আমাদের অন্তরকে আলোকিত করে অভিশাপ তথা অন্ধকারকে দূর করে দিতে পারে।

5/5 - (1 vote)

Leave a Reply