You are currently viewing রাম-লক্ষ্মণ ও সীতা কিভাবে মারা গিয়েছিলেন? How Did Ram, Lakshman and Sita Retured to Vaikuntha?

রাম-লক্ষ্মণ ও সীতা কিভাবে মারা গিয়েছিলেন? How Did Ram, Lakshman and Sita Retured to Vaikuntha?

ভগবান বিষ্ণু কর্তৃক রাম অবতার ধারণ করার মূল উদ্দেশ্য ছিল মহাপাপী রাবণের বিনাশ করা।  সেইসাথে একজন পুরুষ কিভাবে একইসাথে উত্তম সন্তান, উত্তম ভ্রাতা, উত্তম বন্ধু, উত্তম যোদ্ধা, উত্তম রাজা, উত্তম স্বামী এবং সর্বোপোরী মর্যাদা পুরুষোত্তম হয়ে উঠতে পারেন সেই শিক্ষা দান করাও ছিল রাম অবতারের অন্যতম উদ্দেশ্য।  আর এই বিরাট কর্মযজ্ঞে ভগবান বিষ্ণু তার সাথে এনেছিলেন তার পত্নী দেবী শ্রীলক্ষ্মীকে এবং তার শয্যা অনন্ত নাগকেও।  মর্ত্যধামে দেবী শ্রীলক্ষ্মী অবতার ধারণ করেছিলেন মাতা সীতা রূপে এবং অনন্ত নাগ অবতার ধারণ করেছিলেন প্রাণের ভাই লক্ষ্মণ রূপে।  কিন্তু নিয়তির অমোঘ নিয়মে রাম অবতারের উদ্দেশ্য পূর্ণ হলে সময় হয়েছিল একে একে আবারও বৈকুণ্ঠ্ ধামে ফিরে যাওয়ার।  প্রিয় দর্শক, জানেন কি রাম, সীতা এবং লক্ষ্মণ কিভাবে এবং কোন ঘটনার মাধ্যমে দেহত্যাগ করেছিলেন? আসুন বাল্মিকী রামায়ণের উত্তরকাণ্ডের আলোকে জেনে নেওয়া যাক এই তিন দিব্যাত্মার বৈকুন্ঠ ধামে ফিরে যাওয়ার কাহিনী।

১. মাতা সীতার অন্তর্ধান

আপনারা জানেন মাতা সীতা দীর্ঘদিন রাবণের অশোক কাননে বন্দিনী অবস্থায় কাটিয়েছিলেন।  একারনে রাবণকে বধ করে শ্রীরামচন্দ্র যখন মাতা সীতাকে নিয়ে অযোধ্যায় ফিরে আসেন, তখন প্রজা মহলে শুরু হয় নানা রকমের জল্পনা কল্পনা।  অযোধ্যার প্রজারা মাতা সীতার সতীত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলে কলঙ্ক রটাতে শুরু করেছিলেন।  ফলে দেবী সীতার সতীত্ব প্রমানে আয়োজন করা হয়েছিল অগ্নিপরীক্ষার।  সেই অগ্নিপরীক্ষাতেও খুব সহজেই উত্তীর্ণ হয়েছিলেন মাতা সীতা।  তবে এতেও মুখ বন্ধ হয়নি প্রজাদের।  ফলে শ্রীরামচন্দ্র বাধ্য হয়েই মাতা সীতাকে পাঠিয়েছিলেন নির্বাসনে।  তবে শ্রীরামচন্দ্র কখনোই মাতা সীতার সতীত্বে সন্দেহ করেননি।  শুধুমাত্র একজন রাজা হয়ে রাজধর্ম পালন ও প্রজা প্রতিপালনের স্বার্থে তিনি নিজেকে ও মাতা সীতাকে পীড়া দিয়ে এই কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।  এবং মাতা সীতাকে বনবাসে পাঠিয়ে শ্রীরামচন্দ্র যে রাজসুখ ভোগ করেছিলেন তা কিন্তু নয়।  তিনি নিষ্ঠার সাথে রাজকার্য করে প্রজাপ্রতিপালন করেছিলেন বৈকি তবে ব্যক্তিগত জীবনে তিনি একজন বনবাসীর মতই জীবন যাপন করতেন।

আরও পড়ুনঃ  ভগবান বিষ্ণু ও ভগবান শিবের মধ্যকার ৪ প্রলয়ঙ্করী যুদ্ধ || 4 Fights Between Vishnu and Shiva ||

যাইহোক, গর্ভবতী অবস্থায় মাতা সীতা আশ্রয় নিয়েছিলেন বাল্মিকী মুনির আশ্রমে।  সেখানে তার গর্ভে জন্ম হয় লব ও কুশ নামের দুই জমজ পুত্রের। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে রাজার কুমার হওয়ার সত্ত্বেও মাতার সাথে সেই বনবাসে বড় হতে শুরু করেছিলেন লব ও কুশ।  এর কিছুকাল পরে শ্রীরামচন্দ্র যখন অশ্বমেধ যজ্ঞ করেন, তখন সেই যজ্ঞের ঘোড়া আটকে দিয়েছিলেন লব কুশ।  ফলে অয্যোধ্যা রাজ্যের সাথে যুদ্ধ অবশ্যসম্ভাবী হয়ে পড়ে এই কুমারের।  অশ্বমেধ যজ্ঞের ঘোড়ার গতিরোধ করার জন্য রামচন্দ্র একে একে তার বিশাল সেনাবাহিনী, ভাই লক্ষ্মণ ও হনুমানকে পাঠিয়েছিলেন লব কুশের সাথে যুদ্ধ করার জন্য।  তবে আশ্চর্যজনকভাবে এঁরা সকলেই পরাজিত হয়েছিলেন দুই বনবাসী কুমারের কাছে।  সবশেষে শ্রীরামচন্দ্র নিজে লব কুশের সাথে যুদ্ধ করতে এসে মাতা সীতার মাধ্যমে চিনতে পেরেছিলেন তার নিজের দুই পুত্রকে।  তিনি নিজে দুই পুত্রকে সাদরে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন বটে কিন্তু বনবাসে থাকাকালীন দুই কুমারের জন্ম হওয়ার জন্য এবারও মাতা সীতার সতীত্ব পরীক্ষার দাবী ওঠে বিভিন্ন মহল থেকে।  তবে মাতা সীতা এই অপমান আর সইতে পারেন নি।  আপনারা জানেন মাতা সীতা ছিলেন ভূদেবীর কন্যা।  একারনে তার আরেক নাম ছিল ভূমিজা।  তাই পার্থিব এই অপমান থেকে বাঁচতে মাতা সীতা তার মাতা ভূদেবীর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেছিলেন।  এবং ভূদেবী যেভাবে তাকে জন্ম দিয়েছিলেন ঠিক সেইভাবে আবার ধরণীকে বিভক্ত করে সীতাদেবীকে নিজ গর্ভে ফিরিয়ে নিয়েছিলেন তিনি।

২. রাম ও লক্ষ্মণের দেহাবসান

মাতা সীতার ধরণিগর্ভে প্রবেশ করার পর অত্যন্ত ভেঙে পড়েছিলেন শ্রীরামচন্দ্র।  তিনি অনুধাবন করলেন এবার তার বৈকুণ্ঠ ধামে ফিরে যাওয়ার সময় হয়েছে।  কিন্তু সমস্যা হচ্ছে রামভক্ত হনুমান কিছুতেই যমরাজকে শ্রীরামচন্দ্রের জীবন সংহার করতে দেবেন না।  তাই শ্রীহনুমানকে বিভ্রান্ত করতে রামচন্দ্র তার আংটি ফেলে দিয়েছিলেন পাতালের দিকে, এবং হনুমানকে নির্দেশ দিয়েছিলেন পাতাল লোক থেকে সেই আংটি খুঁজে আনতে।  হনুমান যখন শ্রীরামচন্দ্রের আংটি খোঁজার জন্য পাতালে গমন করেছিলেন ঠিক সেই সময় শ্রীরামচন্দ্র যমরাজকে আমন্ত্রণ করেছিলেন অযোধ্যায়।  তবে যমরাজ শর্ত দিয়েছিলেন যমরাজ ও শ্রীরামের মধ্যকার কথোপকথন হবে একান্তে এবং যদি কেউ সেই একান্ত আলাপে বাঁধা প্রদান করে তাহলে তাকে মৃত্যুদণ্ড দিতে হবে।

আরও পড়ুনঃ  হিন্দুরা কেন শবদাহ করে ? এটা কতটা অমানবিক?

যমরাজের শর্তে রাজি হলেন শ্রীরামচন্দ্র।  তিনি ভাই লক্ষ্মণকে এই শর্ত সম্পর্কে অবহিত করে কক্ষের বাইরে পাহারায় রাখেন।  কিন্তু ঠিক সেই সময় শ্রীরামচন্দ্রের সাক্ষাৎপ্রার্থী হন ঋষি দুর্বাসা।  অত্যন্ত ক্রুদ্ধ এবং অভিশাপ দেওয়ার জন্য বিখ্যাত এই ঋষি লক্ষ্মণকে আদেশ করলেন শ্রীরামচন্দ্রের সাথে তার সাক্ষাৎ করানোর জন্য।  লক্ষ্মন ঋষিবরকে দাদা রামচন্দ্রের অদেশ এবং আগত আগন্তুকের শর্ত সম্পর্কে অবহিত করলেন বটে, তবে লক্ষ্মণের সেই কথায় সামান্যতম কর্নপাত করলেন না দুর্বাসা।  তিনি লক্ষ্মণকে সাবধান করলেন, যদি লক্ষ্মণ তার আদেশ না মানেন তবে তিনি সমস্ত অয্যোধ্যা এবং রঘুবংশকে অভিশাপ দেবেন।  লক্ষণের সামনে তখন উভয় সংকট।  একদিকে কুলনাশ, রাজ্যনাশ এবং অন্যদিকে নিজের প্রাণদণ্ড।  তাই অনেকে ভেবেচিন্তে তিনি নিজের প্রাণদণ্ডকেই বেছে নিলেন, দুর্বাসার আগমনের সংবাদ দিতে প্রবেশ করলেন মন্ত্রণারত যমরাজ ও শ্রীরামচন্দ্রের কক্ষে।

ফলে শর্তভঙ্গের শাস্তি হিসেবে লক্ষ্মণকে প্রাণদণ্ড দিতে হবে শ্রীরামচন্দ্রকে।  তবে শ্রীরামচন্দ্র ভাই লক্ষ্মণকে প্রাণদণ্ড দিয়েছিলেন নাকি নির্বাসন দিয়েছিলেন সে বিষয়ে স্পষ্টভাবে জানা না গেলেও, লক্ষ্মন স্বপ্রণোদিত হয়ে সরযু নদীতে অবগাহনকালে নিজের প্রাণ বিসর্জন দেন।  আসলে বিষ্ণুদেব বৈকুণ্ঠে ফিরে যাওয়ার আগে তার প্রিয়তমা লক্ষ্মীদেবী ও শয্যা অনন্তনাগ আগেই চলে গিয়েছিলেন যাতে বৈকুন্ঠে ফিরে তিনি তার যথাযোগ্য স্থান ফিরে পান।

যাইহোক, এবার শ্রীরামচন্দ্রের পালা।  মাতা সীতা ও প্রাণের ভাই লক্ষ্মণকে হারিয়ে শ্রীরামচন্দ্র নিজেও সিদ্ধান্ত নিলেন তিনিও এবার মর্ত্যলীলায় ইতি টানবেন।  তাই তিনিও লক্ষ্মণের মত সরযু নদীতে ডুব দিয়ে দেহত্যাগ করেন।  যে রামরাজ্যে কোন ক্ষুধা, দারিদ্রতা, অকালমৃত্যু, এবং কলহ ছিল না, সেই রামরাজ্যের ইতি ঘটল শ্রীরামচন্দ্রের দেহাবসানের মধ্য দিয়ে।  এবং আশ্চর্যজনক ব্যাপার হচ্ছে মাতা সীতা, লক্ষ্মণ ও শ্রীরামচন্দ্রের মৃত শরীর কেউ কখনোই খুঁজে পায় নি।

প্রিয় দর্শক, বাল্মিকী রামায়ণের উত্তরকাণ্ড সম্পর্কে অভিযোগ রয়েছে যে, এই কাণ্ডের অনেক কিছুই পরবর্তীতে সংযোজন করা হয়েছে।  আবার বাল্মিকী রামায়ণের বেশ কিছু সংস্করণে শ্রীরামচন্দ্রের দেহাবসান সম্পর্কে আলাদা আলাদা কাহিনী প্রচলিত রয়েছে।  যেমন এই ভিডিয়োতে যাকে যমরাজ নামে অভিহিত করা হয়েছে, বেশ কিছু সংস্করণে তাকে কালদেব, কালপুরুষ বা মাতা সীতার ছদ্মবেশ কালঋষি হিসেবেও উল্লেখ করা হয়েছে।  সুতারাং মূল কাহিনী একই হলেও বিভিন্ন গ্রন্থে কাহিনী বিন্যাস কিছুটা ভিন্ন।

আরও পড়ুনঃ  অষ্টাবক্র মুনিঃ মাতৃগর্ভেই অভিশপ্ত , আশির্বাদে মুক্তি। Astavakra Muni

Rate this post

Leave a Reply