You are currently viewing নবরূপে দেবীদুর্গা! জেনে নিন অকাল বোধন, দুর্গা ও নবদুর্গার অজানা তথ্য!

নবরূপে দেবীদুর্গা! জেনে নিন অকাল বোধন, দুর্গা ও নবদুর্গার অজানা তথ্য!

আশ্বিনের শারদ প্রাতে

বেজে উঠেছে আলোকমঞ্জির,

কারন এসময়টা দেবী মহামায়ার অকাল বোধনের সময়।

সূর্যের দক্ষিণায়ণ তথা আমাদের শরৎকাল হচ্ছে দেবতাদের রাত্রি। স্বভাবতই নিশিকাল দেবতাদের নিদ্রামগ্ন থাকার সময়। আর তাই এই সময় কোন দেব দেবীকে পুজো করতে হলে, আগে তাকে জাগরিত করতে হয়। দেবতার আশির্বাদ লাভের হেতু, তাকে জাগরিত করে তোলার এই প্রক্রিয়াটিই হল বোধন। শরৎকালে, রামচন্দ্র মাতা আদ্যাশক্তিকে নিদ্রা থেকে জাগরিত করে পূজা করেছিলেন বলেই, এই পুজাকে অকাল বোধন বলে আখ্যায়িত করা হয়। তবে, পুরাণ অনুসারে এই অকাল বোধনের কৃতিত্ব দেওয়া হয়েছে প্রজাপতি ব্রহ্মাকে। আসলে শক্তি ও শক্তিমানে সর্বক্ষনে ঘটে চলে অনন্ত লীলাবৈচিত্র্য | তাঁরা কতরূপে যে কত খেলা খেলেন কে করবে তাঁর ইয়ত্তা |

আমরা কি জানি দেবী মহামায়ার অকাল বোধন কে করেছিলেন, রামচন্দ্র নাকি ব্রহ্মা? আসুন জেনে নেওয়া যাক অকাল বোধন, নবরাত্রি ব্রত এবং মা দুর্গার নবরূপ তথা নবরাত্রিতে পুজিত নবদুর্গার প্রত্যেকটি রূপকে। সন্তানবাৎসলা, মঙ্গলময়ী এই দেবীর রুপভেদ যে কত ব্যাপক, মাতৃরূপিনী দেবীমুর্তি যে কতটা কল্যানকামিনী, কখনো ভয়ংকর আবার কখনো মহালক্ষীরূপিনী দেবী যে কতটা শক্তিশালী তা এই আলোচনার শেষ অব্দি দেখলে অন্তত কিছুটা অনুধাবন করতে পারবেন।

কৃত্তিবাসী রামায়ণে অকাল বোধন করেছিলেন দশরথ নন্দন শ্রীরামচন্দ্র। কিন্তু পুরান বলে অন্য কথা, বৃহদ্ধর্মপুরাণ-এ রামের জন্য ব্রহ্মার দুর্গাপূজার বিস্তারিত বর্ণনা পাওয়া যায়। এই পুরাণের মতে, কুম্ভকর্ণের নিদ্রাভঙ্গের পর রামচন্দ্রের অমঙ্গল আশঙ্কায় দেবতারা হলেন শঙ্কিত। তখন ব্রহ্মা বললেন, দুর্গাপূজা ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই। তাই রামচন্দ্রের মঙ্গলের জন্য স্বয়ং ব্রহ্মা যজমানী করতে রাজি হলেন। তখন শরৎকাল। দক্ষিণায়ণ। দেবতাদের নিদ্রার সময়। এতএব ব্রহ্মা স্তব করে দেবীকে জাগরিত করলেন। দেবী তখন কুমারীর বেশে এসে ব্রহ্মাকে বললেন, বিল্ববৃক্ষমূলে দুর্গার বোধন করতে। দেবতারা মর্ত্যে এসে দেখলেন, এক দুর্গম স্থানে একটি বেলগাছের শাখায় সবুজ পাতার রাশির মধ্যে পরমাসুন্দরী বালিকা নিদ্রামগ্ন। ব্রহ্মা বুঝলেন, এই বালিকাই জগজ্জননী দুর্গা। তিনি বোধন-স্তবে তাঁকে জাগরিত করলেন। ব্রহ্মার স্তবে জাগরিতা দেবী বালিকামূর্তি ত্যাগ করে চণ্ডিকামূর্তি ধারন করলেন। ব্রহ্মা বললেন, “রাবণবধে রামচন্দ্রকে অনুগ্রহ করার জন্যই তোমাকে অকালে জাগরিত করেছি। যতদিন না রাবণ বধ হয়, ততদিন তোমার পূজা করব। যেমন করে আমরা আজ তোমার বোধন করে পূজা করলাম, তেমন করেই মর্ত্যবাসী যুগ যুগ ধরে তোমার পূজা করবে।

যতকাল সৃষ্টি থাকবে, তুমিও পূজা পাবে এইভাবেই।” একথা শুনে চণ্ডিকা বললেন, “সপ্তমী তিথিতে আমি প্রবেশ করব রামের ধনুর্বাণে। অষ্টমীতে রাম-রাবণে হবে মহাযুদ্ধ । অষ্টমী-নবমীর সন্ধিক্ষণে রাবণের দশমুণ্ড বিচ্ছিন্ন হবে। সেই দশমুণ্ড আবার জোড়াও লাগবে। কিন্তু নবমীতে রামের বানে নিহত হবেন রাবণ । দশমীতে রামচন্দ্র করবেন বিজয়োৎসব।” তাইতো বাংলার লক্ষ লক্ষ দুর্গাপূজায় আজও বোধনের মন্ত্রে উচ্চারিত হয়:

হে দেবী, রাবণবধে রামকে অনুগ্রহ করার জন্য ব্রহ্মা তোমার অকালবোধন করেছিলেন, আমিও সেইভাবে আশ্বিন মাসের ষষ্ঠী তিথিতে সন্ধ্যায় তোমার বোধন করছি।

যাইহোক, ত্রেতাযুগে রাবণবধ ও সীতাউদ্ধারের জন্য রামচন্দ্র দুর্গতিনাশিনী দুর্গার অকালবোধন করে নবরাত্র ব্রত পালন করেছিলেন। নবরাত্র ব্রত আশ্বিনের শুক্লা প্রতিপদ থেকে নবমী পর্যন্ত । মা দুর্গা এই সময় প্রতিপদ তিথি থেকে নবমী অবধি মোট ন’দিন নয়টি রূপ ধারণ করেন। পিতামহ ব্রহ্মা দেবীর এই নয়টি রূপের নয়টি নামকরণ করেছিলেন। এই নয়টি নামের রয়েছে নয়টি বৈচিত্রময় রূপভেদও।

শ্রীশ্রীচন্ডীর দেবীকবচ অধ্যায়ের তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্লোকে নবদুর্গার উল্লেখ আছে এভাবেঃ

প্রথমং শৈলপুত্রীতি দ্বিতীয়ং ব্রহ্মচারিণী।

তৃতীয়ং চন্দ্রঘন্টেতি কুষ্মান্ডেতি চতুর্থকম্‌।।

পঞ্চমং স্কন্দমাতেতি ষষ্ঠং কাত্যায়নী তথা।

সপ্তমং কালরাত্রীতি মহাগৌরীতি চাষ্টমম্‌।।

নবমং সিদ্ধিদাত্রী চ নবদুর্গা প্রকীর্তিতাঃ।

উক্তোন্যেতানি নামানি ব্রহ্মনৈবমহাত্মানা।।

শ্রীশ্রীচন্ডীতেই প্রথম মহিষাসুরমর্দ্দিণী মাদুর্গার নয়টি রূপের বর্ণনা ও মহিমা প্রকাশিত। মহালয়ার সাথেসাথে কৃষ্ণপক্ষের অবসান ঘটে সুচনা হয় দেবীপক্ষের। পরদিন অর্থাত শুক্লপক্ষের প্রতিপদ থেকে নবমী পর্যন্ত ন’টি রাত্রি অবধি মাদুর্গা নয়টি রূপে পুজো গ্রহন। শরতকালীন এই নবরাত্রি উত্সবকে বলা হয় শারদ নবরাত্রি। মূলত এটি শক্তির আরাধনা। নবরাত্রির পরদিন বিজয়াদশমীর সাথে সাথে এই শক্তিপূজার সমাপন হয়।

দেবী বলেছিলেন, আশ্বিন মাসের শুক্লা প্রতিপদ থেকে নবমী পর্যন্ত তাঁর পুজাকাল বিশেষভাবে প্রশস্ত | এই নয়দিনে দেবী নয়টি রূপ ধারণ করেছিলেন | তাই ‘নবদুর্গা’ নামেই এঁদের খ্যাতি | এবার আমাদের সেই মঙ্গলময়ী, সন্তানবাৎসলার নয়টি রূপ জেনে নেওার সময়।

ব্রহ্মা মহাদেবী দুর্গার যে নবরূপের বর্ণনা দিয়েছেন তার মধ্যে প্রথমেই নাম পাওয়া যায় শৈলপুত্রীর ।

আশ্বিনের শুক্ল প্রতিপদে পুজিতা হন এই মঙ্গলময়ী দেবীমুর্তি। শৈলপুত্রী শব্দের অর্থ পর্বতের কন্যা। দেবীকে কন্যারূপে পাবার জন্য কঠোর তপস্যা করেন গিরিরাজ হিমালয় | এজন্য ভগবতী, ভক্ত বাৎসল্য প্রদর্শন করে করুণা -বসতঃ শৈলের পুত্রীত্ব স্বীকার করেন। দেবী শৈলপুত্রী মঙ্গলময়ী ও ভক্তবৎসলা। | অসুরদের অত্যাচারে দেবকুল যখন বিপর্যস্ত, বারংবার পরাজিত হচ্ছেন, তখন ব্রহ্মা পরামর্শ দিলেন দেব সৈন্যের সেনাপতি হবেন সেই কুমার, যে জন্মাবে হর-গৌরীর মিলনে | দেবতাদের আকুল প্রার্থনায় মা দূর্গা আবির্ভূতা হলেন শৈলপুত্রী রূপে | তাতে ফল হল তিনটি–দেবতাদের কার্যসাধন,হিমালয়ের বাঞ্ছাপূরণ ও শিবের তপস্যার পরিপূর্তি | উল্লেখ্য সতী দেহত্যাগ করলে শিব তাঁর শক্তিকে পুনরায় ফিরে পাবার জন্য তপস্যামগ্ন হয়েছিলেন | যাইহোক শিব ও শক্তির মিলনে জন্ম নিলেন কার্তিক–যিনি দেবতাদের সেনাপতি হয়ে নিহত করলেন ভয়ঙ্কর তারকাসুরকে ও স্বর্গ কে করলেন অসুরমুক্ত |  মাতা শৈলপুত্রীর বাহন বৃষ । এঁনার দক্ষিণ হস্তে ত্রিশূল আর বাম হস্তে কমল, তাই দেবীর অপর নাম শুল ধরিনি। ইনি পূর্ব জন্মে দক্ষ নন্দিনী সতী এবং পর জন্মে হিমালয় কন্যা পার্বতী ।

আরও পড়ুনঃ  কালীপূজায় পাঠাবলি / পশুবলি কতটা যৌক্তিক?

নবদুর্গার দ্বিতীয় দেবী হলেন ব্রহ্মচারিণী |

“ব্রহ্ম চারইতুং শীলমস্যা:” | ব্রহ্মজ্ঞানদানে ব্রহ্মকে প্রাপ্ত করানো তাঁর স্বভাব | দেবরাজ ইন্দ্রকে তিনি ব্রহ্মজ্ঞান দিয়েছিলেন ব্রহ্মচারিণী রূপে |

এখানে ‘ব্রহ্ম’ শব্দের অর্থ হল তপস্যা। ব্রহ্মচারিণী অর্থাৎ তপশ্চারিণী— তপ আচরণকারী। কথিত আছে যে—‘বেদস্তত্ত্বং তপো ব্রহ্ম’—বেদ, তত্ত্ব এবং তপ হল ‘ব্রহ্ম’ শব্দের অর্থ। দেবী ব্রহ্মচারিণীর রূপ- জ্যোতিতে পূর্ণ, অতি মহিমামণ্ডিত। তিনি ডান হাতে জপের মালা এবং বাঁ হাতে কমণ্ডলু ধারণ করে আছেন।

পূর্বজন্মের সতী যখন হিমালয়ের কন্যারূপে মহামায়া আদি শক্তি পার্বতী রূপে জন্মেছিলেন তখন তিনি নারদের পরামর্শে ভগবান শঙ্করকে পতিরূপে লাভ করার জন্য কঠিন তপস্যা করেন। সেই কঠিন তপস্যার জন্য তাকে তপশ্চারিনী বা ব্রহ্মচারিণী বলা হয়। তিনি সহস্র বর্ষ ধরে মাত্র ফল-মূলের আহার করে জীবন ধারণ করেছিলেন।এরপর শতবর্ষ তিনি শাক আহার করে জীবন নির্বাহ করেছিলেন । অতঃপর কয়েক সহস্র বছর নির্জলা, নিরাহারে থেকে তপস্যা করতে লাগলেন। গাছের পাতা বাঁ পর্ণ খাওয়া পর্যন্ত পরিত্যাগ করায় তার অন্য একটি নাম হয় ‘অপর্ণা’। কয়েক সহস্র বছর এই তপস্যা করায় ব্রহ্মচারিণী দেবীর শরীর কৃশ তথা একদম ক্ষীণ হয়ে গেল। এমন ক্ষীণ-কৃশ শরীর দর্শন করে মেনকার মুখ থেকে উঃ মাঃ শব্দটি বেরিয়ে গিয়েছিল। তাই দেবীর আরেক নাম উমা। অবশেষে পিতামহ ব্রহ্মা তাকে সম্বোধন করে প্রসন্ন হয়ে আকাশবাণীর মাধ্যমে বললেন, হে দেবী! আজ পর্যন্ত কেউ এরূপ কঠোর তপস্যা করে নি। তোমার দ্বারাই এরূপ তপস্যা সম্ভব। তোমার এই অলৌকিক কাজে চতুর্দিকে ধন্য ধন্য রব উঠেছে। তোমার মনোষ্কামনা সর্বতোভাবে পূর্ণ হবে। ভগবান চন্দ্রমৌলি শিবকে তুমি পতিরূপে পাবে। এবার তুমি তপস্যায় বিরত হয়ে গৃহে ফিরে যাও। মা পার্বতীর এই দ্বিতীয় রূপ ভক্ত এবং সিদ্ধদের অনন্ত ফল প্রদান করে। তাঁর উপাসনা দ্বারা মানুষের স্বভাবে তপ, ত্যাগ, বৈরাগ্য, সদাচার, সংযম বৃদ্ধি পায়। জীবনের কঠিন সংঘর্ষেও তাঁর মন কর্তব্যে বিচলিত হয় না। মা ব্রহ্মচারিণী দেবীর কৃপায় তাঁর সর্বদা সিদ্ধি ও বিজয় প্রাপ্তি হয়। আশ্বিন মাসের শুক্ল দ্বিতীয়ায় দেবী ব্রহ্মচারিণীর আরাধনা করা হয়ে থাকে। দেবী ব্রহ্মচারিণীর মূর্তি খুবই চাকচিক্যমণ্ডিত। দেবীর ডান হস্তে পদ্মফুল, বামহস্তে কমণ্ডলু। স্বচ্চিদানন্দ ব্রহ্মপ্রাপ্তি তাঁর শীল বা স্বভাব। ব্রহ্মচারীণি আজীবন কুমারী ।

মা দুর্গার তৃতীয় রূপ চন্দ্রঘন্টা |

মহালক্ষ্মীস্বরূপিনী দেবী দূর্গা সমস্ত দেবগণের অঙ্গের জ্যোতি অবলম্বনে মহিষাসুর -বধের জন্য প্রকটিতা হন | দেবীর দশহাতে অস্ত্র উপহার দিলেন দেবতাগণ | এরমধ্যে ঘন্টা দিলেন দেবরাজ ইন্দ্র | ওই ঘন্টার মধ্যে গজরাজ ঐরাবতের মহাশক্তি –“দদৌ তসৈ সহস্রাক্ষ ঘন্টামৈরাবতাদ গজাৎ”| তাই অতি প্রচন্ড ঐ ঘন্টাধ্বনি | পন্ডিতেরা বলেন ,মায়ের ঘন্টা সর্ববাদ্যময়ী | মহাবিশ্বের মূলে যে শব্দব্রহ্ম বা নাদব্রহ্ম ,তা মা চন্দ্রঘন্টার ঐ মহাঘন্টার ধ্বনি থেকেই উদ্ভুত | দেবীর মাথায় ঘন্টার আকারের অর্ধচন্দ্র অবস্থিত | তাই এঁর নাম চন্দ্রঘন্টা | এই দেবীর কৃপায় সাধকের সমস্ত কষ্ট আর বাধা দূর হয় ও সাধকের মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হয় |

এঁনার শরীরের রং স্বর্ণের মতো উজ্জ্বল । এই দেবী দশভুজা । এঁনার হাতে কমণ্ডলু , তরোয়াল , গদা , ত্রিশূল , ধনুর্বাণ , পদ্ম , জপ মালা থাকে । এঁনার বাহন সিংহ । দেবী তার ঘণ্টার ন্যায় প্রচন্ড চন্ড ধবনিতে দুরাচারী রাক্ষস , দানব , দৈত্য দের প্রকম্পিত করেন । শিব পার্বতীর বিবাহের সময় হঠাৎ তারোকাসুর প্রেত পিশাচ দৈত দানব সহ আক্রমণ করে তখন দেবী পার্বতী এক দশ ভুজ রুপী মঙ্গলময় দেবী রূপে চন্দ্র সম বিশাল শুভ ঘণ্টা বাজিয়ে সকল অশুভ শক্তি কে নিরস্ত্র করেন।  দেবী উগ্র রূপ ধারণ করেন নি কারণ জন্মের পর দেবী পার্বতী নিজের দশ মহাবিদ্যা ও বিশ্ব রূপ হিমালয় ও মেনকা কে দর্শন করালে মা মেনকা দেবী পার্বতী কে প্রতিশ্রুতি বদ্ধ করেন যে তাদের কাছে থাকা অবস্থায় পার্বতী নিজের কোনো উগ্র রূপ প্রকাশ করবেন না ও তৃতীয় নয়ণ কে লুকিয়ে রাখবেন

 

নবদুর্গার চতুর্থ মূর্তি কুষ্মান্ডা।

নবরাত্রের চতুর্থদিনে, অর্থাৎ চতুর্থী তিথিতে মাতৃপ্রাণ ভক্তগণ এই কুষ্মাণ্ডারূপেই আদ্যাশক্তিকে আহ্বান করে থাকেন। কুৎসিত তাপের নাম ‘কুষ্মা’ আর ‘অন্ড’ অর্থ উদর | যিনি উদরে কুষ্মা বহন করেন,তিনিই কুষ্মান্ডা | জননী করেন –পদাশ্রিত জনকে শান্তি দিতে জগতের ত্রিতাপ উদরস্থ করে এই মঙ্গলময়ী জননী | যারা অভয়ার পদ আশ্রয় করে না ,তারা প্রতিনিয়ত ত্রিতাপে দগ্ধ হয় | আর যারা ঐ রাঙা পদে আত্মার্পণ করে,তাদের কু-কাম,কালিমা ও তাপত্রয় উদরস্থ করেন জননী | তারা লাভ করে পরাশান্তি,মায়ের শান্তিপ্রদ অঙ্কদেশ বা কোল | কুষ্মান্ডা সন্তানতাপহারিনী কল্যাণময়ী জননী | কারুণ্যে ভরপুর মায়ের সৌম্যপ্রতিমা। দেবী সিংহবাহিনী, ত্রিনয়নী ও অষ্টভুজা। আটটি হাতে সুদর্শনচক্র, ধনুর্বাণ, রক্তপদ্ম, কমণ্ডলু, ইত্যাদি দৃষ্টিগোচর হয়। মায়ের বামহস্তে একটি অমৃতপূর্ণ কলসও রয়েছে। এখানে অমৃত ব্রহ্মের রূপক, দেবী ভগবতী পার্বতী অমৃতপূর্ণ কলস অর্থাৎ ব্রহ্মজ্ঞানের আধার হাতে নিয়ে বসে রয়েছেন। যোগ্য সাধক আপন তপোবল ও কৃচ্ছ্রতা দ্বারা মহামায়াকে প্রসন্ন করতে পারলে তবেই মা সেই অমৃতভাণ্ডের অমৃতধারায় সাধককে স্নান করিয়ে তৃপ্ত করবেন, ব্রহ্মজ্ঞান প্রদানে কৃতার্থ করবেন। মায়ের হাতে আরও একটি বস্তু রয়েছে, সেটি হল জপমালা। সেই জপমালা সিদ্ধমন্ত্রে মন্ত্রিত, তাহা অষ্টসিদ্ধি ও নবনিধি দান করতে সমর্থ। এবার যে ভক্ত রুচি অনুযায়ী যা চাইবে, কল্পতরু মা সেই অনুসারেই বাঞ্ছা পূর্ণ করবেন। যে সিদ্ধি ও সিদ্ধাই চাইবে, মা তাকে তাই দিয়ে ভোলাবে। আর যে পার্থিব সম্পদে অনীহা প্রকাশ করে ওই অমৃতপূর্ণ কলস, অর্থাৎ ব্রহ্মজ্ঞান চাইবে, মা তাকেও তাই দিয়েই সন্তুষ্ট করবেন।

আরও পড়ুনঃ  কালিদাস পণ্ডিতঃ দেবীর বরে গণ্ডমূর্খ থেকে মহাকবি

শাস্ত্রে বলা হয়েছে, বলিদানের মধ্যে কুমড়ো বলি মায়ের অধিক প্রিয়। কুমড়োকে সংস্কৃতে “কুষ্মাণ্ড” বলে, কুষ্মাণ্ডপ্রিয় দেবী তাই কুষ্মাণ্ডা নামে স্তুতা। এ তো গেল সহজ একটি ব্যাখ্যা, কিন্তু এর সুগভীর অর্থও রয়েছে। যেমন-

“কুৎসিত উষ্মা সন্তাপস্তাপত্রয়রূপো যস্মিন সংসারে। স সংসারে অণ্ডে উদর রূপায়াং যস্যাঃ।।”

সংসার তাপযুক্ত, ত্রিবিধ তাপে জরজর। সেই সংসারকে যিনি ভক্ষণ করেন, তিনিই কুষ্মাণ্ডা। কু- কুৎসিত, উষ্মা সন্তাপত্রয়ে পূর্ণ জগৎ যাঁর অণ্ডে তথা উদরে বিদ্যমান, তিনিই কুষ্মাণ্ডা।

দেবী কুষ্মাণ্ডার যেহেতু আটটি হাত, তাই তিনি “অষ্টভুজা” নামেও পরিচিতা। এনাকে “কৃষ্ণমাণ্ড” নামেও ডাকা হয়। মহাপ্রলয়ের পরে যখন সর্বত্র শুধু নিশ্ছিদ্র অন্ধকার ছেয়ে রয়েছে, তখন এই ভগবতী কুষ্মাণ্ডা “ঈষৎ হাস্য” করে ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি করেছিলেন। তাই আদ্যাশক্তি বলতে আমরা যাঁকে বুঝি, তিনিই ইনি। দেবীর বাসস্থান সৌরমণ্ডলে। ভীমাপর্বতেও দেবী নিবাস করেন বলে উল্লেখ আছে।দেবী পার্বতী সৃষ্টির রচয়িতা ব্রহ্মা ও তার স্ত্রী সরস্বতীকে চিন্তিত দেখে জিজ্ঞাসা করেন তাদের চিন্তার কারণ তখন তারা বলেন তারা বুঝতে পারছেনা সঠিক কি ভাবে সৃষ্টি কে সম্পূর্ণ রচনা করবেন দেবী তাদের চিন্তার তাপ হরণ করেন তাদের আশ্বাস দেন একদিন মহা শূন্যে উপবিত দেবী পার্বতী একাকী বসে আছেন হঠাৎ সেখানে শিবের আগমন ঘটে স্বামী কে পেয়ে দেবী মহামায়া আনন্দে হেসে ফেলেন ও সেই হাস্য তাপে সৃষ্টি হয় সূর্যাদি সৃষ্টির।

 

নবরাত্রির পঞ্চম রাতে দেবী পার্বতী পূজিত হন স্কন্দমাতা রূপে ।

আমরা যেমন দেবীকে গণেশজননী হিসেবে বেশি পুজো করি, পশ্চিম ভারতে আবার দেবী মান্যতা পান কার্তিকেয়র মাতা হিসেবে | কার্তিকের অরা এক নাম স্কন্দ |  ত্রিনয়নী এই দেবী চার হাতবিশিষ্টা | ডানদিকের উপরের হাতে ধরে আছেন শিশু কার্তিককে | প্রস্ফুটিত পদ্ম থাকে আর এক দক্ষিণ হস্তে | বাঁ দিকের একটি হাত বরাভয় দিচ্ছে | আর এক হাতে ধরে আছেন পদ্ম | এই রূপে দেবী দুর্গা সিংহ বাহনে উপবিষ্ট হন | তিনি বসে থাকেন ফুটে থাকা কমলে |

শিবের তেজ যখন মাতা পার্বতী গর্ভে ধারণ করতে যাবেন সেই সময় রতির অভিশাপের প্রভাবে অগ্নি শিবের তেজ বহন করে নিয়ে চলে যান। এরপর দেবগনের অনুরোধে পার্বতিও নিজ গর্ভের তেজ প্রদান করেন। উভয় তেজ সম্মিলিত হয়ে ধরত্রির বুকে পতিত হলে সেখানে এক পুত্রের জন্ম হয়। খুদার্ত সেই শিশুকে কৃতিকা রা স্তন্য পান করালে সেই শিশু কার্তিক নামে অভিহিত হয়। পরে সেই শিশু কে পার্বতী নিয়ে যেতে চাইলে কৃতীকা গণ অস্বীকার করেন। এরপর দেবী রাগে বগলা মুখী রূপ ধারণ করে শিশু স্কন্দ কে কৈলাসে নিয়ে আসেন

এই দেবীর কোনো বাহন নেই, তিনি প্রস্ফুটিত কমলে বসে থাকেন। স্বর্ণোজ্জ্বল গাত্রবর্ণের দেবী পদ্মের ওপর উপবিষ্টা বলে তাঁকে ‘পদ্মসনা’ও বলা হয়।

নবরাত্রির ষষ্ঠ দিনে ভক্তদের কাছে আরাধিতা হন মাতা কাত্যায়নী।

এই নাম এবং রূপের সঙ্গে জড়িয়ে আছে এক পৌরাণিক কাহিনি | বৈদিক যুগে কাত্যায়ন নামে এক ঋষি ছিলেন | এক পুত্রের পিতা কাত্যায়নের ইচ্ছে হয় একটি কন্যসন্তান লাভের | তার স্তবে তুষ্ট হয়ে স্বয়ং দেবী পার্বতী জন্ম নেন মহারিশি কাত্যায়নের কন্য রূপে | তখন তার নাম হয় কাত্যায়নী | আরেকটি মতে, মহিষাসুরের অত্যাচার বন্ধ করার জন্য ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর ও অন্যান্য দেবতা মিলে তাঁদের তেজ দিয়ে তৈরি করেন দেবীকে। দেবী দশমীর দিন মহিষাসুর বধ করেন। অন্য মতে, ঋষি কাত্যায়ণ নিজের মানস থেকে দেবীকে সৃষ্টি করেছিলেন বলে তাঁর অপর নাম ‘কাত্যায়নী’। এই দেবী অষ্টভূজা, ত্রিনয়নী ও সিংহবাহিনী।

আরও পড়ুনঃ  ভারতের এই ৯ মন্দিরে নারীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ || 9 Men Only Temples In India ||

৫১ শক্তিপীঠের একটি হল বৃন্দাবন মহাপীঠ | দেবী সেখানে বিরাজিতা কাত্যায়নীরূপে | তাঁর একটি কার্য অনন্যসাধারণ, সেটি হল সুদুর্লভ কৃষ্ণভক্তিদান | ‘চন্ডী’তে দেবীর সুখদা ও মোক্ষদা–দুটি স্বরূপের কথা জানা যায় | সুরথ রাজাকে দিলেন সুখ, সমাধি বৈশ্যকে দিলেন মোক্ষ | কাত্যায়নীরূপে দেবী ভক্তিদান করেন |

ভক্তিধন অতীব দুষ্প্রাপ্য বস্তু | এটি সাধনলব্ধ নয় | কোনো সাধনাতেই ভক্তি-সম্পত্তি লাভ করা যায় না | এটি একমাত্র কৃপালব্ধ সামগ্রী | কাত্যায়নীরূপিণী যোগমায়ার করুণায় তা লাভ হয় | তবে যাঁরা সুখ ও মোক্ষকে একান্তভাবে তুচ্ছ করতে পারে, যাঁদের কৃষ্ণসেবা ছাড়া আর কিছুই কাম্য নেই–তাঁদের দেবী দান করেন ভক্তি–প্রেমরূপ মহাসম্পদ |

ব্রজের গোপবালারা নন্দ-নন্দনকে পতিরূপে পাবার জন্য প্রার্থনা করেছিলেন কাত্যায়নী দেবীর কাছে | তাঁদের প্রার্থনার মন্ত্র ভাগবতে দৃষ্ট হয় এভাবে: —

“কাত্যায়নী! মহামায়ে! মহাযোগিন্যধিশ্বরী! নন্দগোপসুতে দেবী! পতিং মে কুরু তে নম: ||”

 

 

কালরাত্রিঃ

ঋগ্বেদের রাত্রিসুক্তে পরমাত্মাই রাত্রিদেবী। মহাপ্রলয়কালে এই রাত্রিরূপিণী মাতার কোলেই বিলয় হয় বিশ্বের।অনন্ত মহাকাশে নৃত্যরত কালভৈরবের দেহ থেকেই আবির্ভূতা ইনি দেবী যোগনিদ্রা মহাকালিকা বা কালরাত্রি নামে আখ্যাত । এখানে দেবী কৃষ্ণবর্ণা | আলুলায়িত কেশে তিনি ধাবিত শত্রুর দিকে | তার কণ্ঠে বিদ্যুতের মালিকা | ত্রিনয়নী দেবীর শ্বাস প্রশ্বাসে বেরিয়ে আসে আগুনের হলকা | ভীষণদর্শনা দেবীর তিন হাতে অস্ত্র | এক হাতে ভক্তদের প্রতি বরাভয় | এই রূপই উপাসিত হয় কালিকা রূপে | তবে এই রূপেও দেবী ভক্তের শুভ করেন | তাই অন্যদিকে তিনি শুভঙ্করী | দেবীর বাহন গর্দভ | ভক্তরা তার পুজো করেন নবরাত্রির সপ্তম রাতে |

পরমব্রহ্মই রাত্রি | ব্রহ্মময়ী মা ঐ রাত্রিরই শক্তি | রাত্রিতে জীবজগৎ বিরত হয় সমস্ত কার্য থেকে | বিশ্রামলাভ করে সকলে | মায়ের অঙ্গে বিশ্রাম নেয় নিখিল জীবনীবহ | মহাপ্রলয়ের রাত্রিই মহারাত্রি!! দেবী এই রাত্রিরূপা | মহারাত্রি থেকে কালরাত্রি গভীরতর | মহারাত্রিতে সংসার লয় হয়, কিন্তু পরমপুরুষ মহাবিষ্ণু জেগে থাকেন | কালরাত্রিতে মহাবিষ্ণুও ঘুমিয়ে পড়েন | অনন্তশয্যা বিস্তার করে নিদ্রিত ভগবান কি করেন? “শ্রীশ্রীচন্ডী” তে বলেন, তিনি যোগনিদ্রাকে ভজনা করেন | এই যোগনিদ্রাই মহাকালিকা বা কালরাত্রি | প্রত্যহ দিবাবসানে কর্মক্লান্তির পর মানুষ যাঁর কোলে বিশ্রাম নেয়, আবার প্রভাতে যাঁর কোল থেকে উত্থিত হয় নতুন উদ্যম নিয়ে—তিনি কালরাত্রি | দেবীর অংশভূতা কুন্ডলিনী কালিকা | বিশ্বকে, বিশ্বজীবকে, বিশ্বনাথ ও কালশক্তিকে যিনি স্তব্ধ করেন তিনিই দেবী কালরাত্রি—মায়ের সপ্তম রূপ |

মহাগৌরীঃ

তিনি সন্তানবত্সলা, শিবসোহাগিনী, বিদ্যুদ্বর্ণা মা দুর্গার প্রসন্ন মূর্তি। হিমায়লকন্যা ছিলেন গৌর বর্ণা। শিবের তপস্যা করে রৌদ্রে তিনি কৃষ্ণা হন | মহাদেব যখন গঙ্গাজল দিয়ে তাকে স্নান করান, তখন তিনি হয়ে ওঠেন ফর্সা | তার এই রূপের নাম হয় মহাগৌরী | প্রচলিত বিশ্বাস, নবরাত্রির অষ্টম রাতে তার পুজো করলে সব পাপ ধুয়ে যায় | সাদা পোশাক পরিহিতা, চার হাত বিশিষ্টা দেবীর বাহন ষাঁড় | দেবীর এক হাত শোভিত বরাভয় মুদ্রায় | বাকি তিন হাতে থাকে পদ্ম, ত্রিশূল এবং ডমরু |দেবী এই গৌরী রূপে অষ্ট বর্ষি বালিকা রূপে শিব কে নৃত্য করে প্রমোদ দেন পরে শিব তার পরিচয় জানতে চাইলে দেবী পার্বতী নিজের রূপ প্রকাশ করেন

অন্যমতে দেবাদিদেব একদিন কালরাত্রিদেবীকে উপহাস করলেন “কালো মেয়ে” বলে | দেবী অভিমানিনী হয়ে নিযুক্ত হলেন কঠিন তপস্যায় | তপস্যার পর নিজের কালো বরণ দিলেন ভর্তাকে আর নিজে হলেন গৌরী | শুধু গৌরী নয় –মহাগৌরী | যিনি বিদ্যুদ্বর্না | মহাকালী ছিলেন সন্তান-বৎসলা আর মহাগৌরী হলেন স্বামী–সোহাগিনী | নবদুর্গার অষ্টম রূপ |

কারও কারও মতে, হিমালয়কন্যা ছিলেন কৃষ্ণা, আবার কেউ কেউ বলেন, আট বছর বয়সি দেবীর গাত্রবর্ণ শঙ্খ, চাঁদ অথবা জুঁইফুলের মতো সাদা। শুধু গাত্রবর্ণই নয়, তাঁর পরিধেয় বস্ত্র, অলঙ্কারও শ্বেত-শুভ্র। শিবকে স্বামীরূপে কামনা করে কঠোর তপস্যা করেছিলেন দেবী পার্বতী। তাতে তাঁর গায়ের রং কৃষ্ণবর্ণ হয়ে যায়। তখনই তার নাম হয় ‘মহাগৌরী’। দেবীর হাতে থাকে ডমরু। দেবীর বাহন ষাঁড়। দেবী ত্রিনয়নী, চতুর্ভুজা।

সিদ্ধিদাত্রীঃ

অপরূপ লাবণ্যময়ী চতুর্ভুজা, ত্রিনয়নী, প্রাতঃসূর্যের মত রঞ্জিতা যোগমায়া মাহেশ্বরী ইনি সকল কাজে সিদ্ধি প্রদান করেন। নবদুর্গার নবম তথা শেষ রূপ হল সিদ্ধিদাত্রী | সিংহবাহিনী দেবীর চার হাতে আশীর্বাদী মুদ্রা | তিনি সিদ্ধি দান করেন | অর্থাত্‍ তার উপাসনায় সংসারে আসে সুখ এবং সমৃদ্ধি | সবাইকে বরাভয় দেন এই মাতৃকামূর্তি | দেবী ভগবত্‍ পুরাণে আছে, স্বয়ং মহাদেব দেবী পার্বতী কে সিদ্ধিদাত্রী রূপে পুজো করেছিলেন | এবং তার ফলে মহাদেব সকল সিদ্ধি লাভ করেন | সিদ্ধিদাত্রীর আশীর্বাদেই সর্ব সিদ্ধি লাভ করেন মহাদেব |

যিনি সাধককে সর্বকর্মে সিদ্ধিদান করেন,তিনিই সিদ্ধিদাত্রী | গীতায় শ্রীভগবান অর্জুনকে বলেছেন :- “যে যথা মাং প্রপদ্যন্তে তাংস্তথৈব ভজাম্যহম |” –যে আমাকে যেভাবে উপাসনা করে,তাকে সেইভাবে তুষ্ট করি | এই তুষ্টিকারিণী শক্তিই সিদ্ধিদাত্রী জননী–নবদুর্গার নবম ও শেষ রূপ | মা পদ্মের উপর আসীনা | সমস্ত যোগী,জ্ঞানী,ঋষি-মুনি,সাধক মায়ের আরাধনা করেন | অনিমা,মহিমা,গরিমা,লঘিমা,প্রাপ্তি,প্রকাম্য,ঈশিত্ব ও বশিত্ব এই আটপ্রকার সিদ্ধিই দান করেন বলে মায়ের নাম সিদ্ধিদাত্রী | মহাদেব মাতা সিদ্ধিদাত্রীর সাধনা করে সিদ্ধিলাভ করেন ও মায়ের দেহে ‘অর্ধনারীশ্বর’ রূপে অবস্থান করেন | এই দেবীর সাধনা শেষে সাধকের নবদুর্গার পূজা সম্পন্ন হয় |

 

নবরাত্রিতে দেবী পার্বতীর দুর্গা পুজোয় যোগসাধনার যোগপদ্ধতি অত্যন্ত উচ্চ মার্গের সাধনক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত। যথা এই নবরাত্রির প্রথম দিনের পুজোয় যোগীগণ তাদের মনকে ‘মূলাধার’ চক্রে স্থিত করেন। যা মানুষের শরীরের অভ্যন্তরেই প্রতিষ্ঠিত ‘কুলকুণ্ডলিনী’ রূপে – যিনি স্বয়ং মহাশক্তি, দৈবী ও ঐশী শক্তি, মহামায়া, মহাদুর্গা। এই হল নবদুর্গার চর্চিত কাহিনি।

5/5 - (1 vote)

Leave a Reply