সিদ্ধপীঠ তারাপীঠে লোকচক্ষুর অন্তরালে পূজিত হয় শিব এবং তারার এক বিরল মূর্তি। এই মূর্তিকল্পে শিবকে স্তন্যপান করাচ্ছেন দেবী তাঁরা। তাছাড়া ইন্টারনেট জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে এই মূর্তিকল্পের অসংখ্য চিত্রকল্প। কিন্তু কেন? কেন স্ত্রী হয়েও দেবী তাঁরা মায়ের মত নিজের স্তন্যদুগ্ধ পান করিয়েছিলেন তার স্বামী দেবাদিদেব মহাদেবকে? এই ছোট্ট ভিডিওতে আপনাদের জন্য রইল সেই প্রশ্নের উত্তর। ভিডিওটির মাধ্যমে নতুন কিছু জানতে পারলে চ্যানেলটিকে সাবস্ক্রাইব করে যাবেন এবং কমেন্টে একবার জয় হর-পার্বতী লিখে কমেন্ট করবেন।
আদ্যাশক্তি মহামায়ার শত সহস্র রূপের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ রূপ হচ্ছে তাঁরা। আবার দশ মহাবিদ্যার দ্বিতীয় দেবী হচ্ছেন এই পথপ্রদর্শিকা ও রক্ষিকা তারিণী দেবী। মমতাময়ী তাঁরা দেবী তার সকল সন্তানকে রক্ষা করেন। ঠিক যেমন তিনি ভয়ংকর বেশে সাধক বামাক্ষ্যাপাকে দর্শন দিয়েছিলেন এবং মাতৃমূর্তিতে কোলেও তুলে নিয়েছিলেন। পুরাণ অনুসারে জানা যায় এই দেবী বিশ্বের উৎস হিরণ্যগর্ভের শক্তি এবং মহাশূন্যের প্রতীক। তার গায়ের রঙ নীল বর্ণের হওয়ার কারণে তাঁকে বলা হয় মহানীলসরস্বতী। দেবী তাঁরা এলোকেশী ও পিঙ্গল জটা ধারিণী, মস্তকে অর্ধচন্দ্র ও পঞ্চমুদ্রাখচিত মুকুট পরিধান করেন। তিনি ত্রিনয়না, এবং তার গলায় রয়েছে সর্প যজ্ঞোপবীত। দেবী তারার পরিধানে থাকে ব্যাঘ্রচর্ম এবং অস্থি দিয়ে তৈরি মালা। চতুর্ভূজা এই দেবী তার তাঁর চার হাতে ধারন করেন পদ্ম, খড়গ, অসুরমুণ্ড ও কাস্তে। এবং তাঁর বাম চরণ স্থাপিত থাকে শবরূপী শিবের হৃদয়ে।
প্রিয় দর্শক, এতক্ষণ আপনারা শ্রবণ করলেন তাঁরা দেবীর রূপ বর্ণনা। এবার আমাদের জানার পালা কেন তিনি শিবকে স্তন্যপান করিয়েছিলেন।
এই ঘটনার শুরু সমুদ্র মন্থন থেকে। পুরাণ অনুসারে জানা যায়, দেবাসুরের সংগ্রামে বারংবার নাজেহাল হওয়া দেবতাদের প্রয়োজন ছিল অমরত্ব প্রাপ্তির। কিন্তু অমরত্ব এত তুচ্ছ বিষয় নয়। শুধুমাত্র ক্ষীরোদ সাগর মন্থন করে সেখান থেকে অমৃত উত্তোলন করতে পারলেই অমরত্বের অধিকারী হবেন স্বর্গের দেবতারা। এক পর্যায়ে কিছুটা শঠতার আশ্রয় নিয়ে অসুরগণকেও তাদের দলে শামিল করে ক্ষীরোদ সাগর মন্থন শুরু করলেন দেবতাগণ। কিন্তু কোন উৎকৃষ্ট বস্তু প্রাপ্তির আগে নিকৃষ্ট বস্তুকেও গ্রহণ করতে হয়। তাই অমৃতের আগে সমুদ্র মন্থন থেকে উত্থিত হল হলাহল নামক বিষ। এই বিষ এতটাই তীব্র ও শক্তিশালী যে তা উত্থিত হওয়ার পরক্ষণেই সমগ্র সৃষ্টি নীল বর্ণ ধারণ করতে শুরু করল। এখন উপায় কি? এই হলাহলের কোন সদগতি না করতে পারলে সমগ্র সৃষ্টি ধ্বংস হয়ে যাবে নিমেষেই। ঠিক সেই সময় এগিয়ে এলেন দেবাদিদেব মহাদেব। এরপর সেই তীব্র গরল হলাহল পান করলেন তিনি। এই হলাহল বা কালকূট পান করার ফলে দেবাদিদেব মহাদেবের সমস্ত শরীর নীল বর্ণ ধারন করল। এবং বিষের তীব্র যন্ত্রণায় কাতর হয়ে পড়লেন তিনি।
আপনারা জানেন শিব অর্ধনারীশ্বর। তার অর্ধেক শিব এবং অর্ধেক শক্তি। তাই শিবের এই কাতর অবস্থা দেখে এগিয়ে এলেন শক্তি। এবার তিনি তাঁরা রূপ ধারণ করে পরম স্নেহে কোলে তুলে নিলেন দেবাদিদেব মহাদেবকে। এরপর তার স্তন্যদুগ্ধ পান করালেন শিবকে। যে তীব্র গরলের প্রভাবে মহাদেবের শরীর নীল বর্ণ ধারণ করেছিল, দেবী তারার অমৃতসম স্তন্যদুগ্ধের প্রভাবে সেই বিষের প্রভাব আস্তে আস্তে কমতে শুরু করল। আর সেই থেকেই এই মূর্তিকল্পের উদ্ভব।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, স্ত্রী হয়ে কেন স্বামীকে স্তন্যদুগ্ধ পান করালেন শক্তি? এ প্রশ্নের উত্তর কিছুটা জটিল হলেও সংক্ষেপে এটুকুই বলা যায়, শিব ও শক্তির মধ্যকার সম্পর্ককে স্থূলভাবে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক বলা হলেও তাঁরা আদতে এক এবং অভিন্ন সত্বা। শিবের উপর যে কোন সংকটে পাশে দাড়িয়েছেন শক্তি। তাছাড়া দেবী আদ্যাশক্তি বিশ্বজনীন মাতা। তাই কারো স্ত্রী হওয়ার আগে তিনি একজন মাতা। এবং এই কারনেই স্ত্রী হওয়ার স্বত্বেও স্বামীর সংকটে তিনি ধারণ করেছেন মাতৃরূপ।