You are currently viewing ভারতের এই ৯ মন্দিরে কোন পুরুষ প্রবেশ করা নিষিদ্ধ || 9 Women Only Temples in India ||

ভারতের এই ৯ মন্দিরে কোন পুরুষ প্রবেশ করা নিষিদ্ধ || 9 Women Only Temples in India ||

দেবালয়ে দেববিগ্রহ দর্শন করতে প্রতিদিন হাজির হয় হাজার হাজার মানুষ। সেখানে নেই কোন ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গের ভেদাভেদ। ধনী-গরীব, উচু-নিচু নির্বিশেষে সবাই সমানভাবে প্রাধান্য পায় মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত দেবমূর্তির সামনে। কিন্তু আমাদের এই ভারতবর্ষেই এমন কিছু মন্দির আছে যেখানে প্রবেশ করার জন্য রয়েছে বেশ কিছু বাধ্যবাধকতা। আপনারা অনেকেই কেরালার শবরীমালা মন্দিরের নাম শুনে থাকবেন যেখানে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ঋতুমতী কোন নারী প্রবেশ করতে পারতেন না। অবশেষে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে নারীর প্রবেশাধিকার প্রতিষ্ঠিত হয় ওই মন্দিরে। আপনারা অনেকেই জানেন এই শবরীমালা মন্দির ছাড়াও ভারতের বহু মন্দির ও দেবালয়ে আজও নারীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ। কিন্তু আপনি কি এটা জানেন ভারতবর্ষের বেশ কিছু মন্দির রয়েছে যেখানে নারী নয় বরং পুরুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ? কি আশ্চর্য হচ্ছেন? সুপ্রাচীনকাল থেকে যে সমাজ পুরুষ দ্বারা শাসিত হয়ে আসছে সেই সমাজে কোন মন্দিরে পুরুষেরই প্রবেশ নিষিদ্ধ সেটা বেশ আশ্চর্যজনক ঘটনা বটে। এই নিষেধাজ্ঞা কোন কোন ক্ষেত্রে স্থায়ী, কোন কোন ক্ষেত্রে অস্থায়ী আবার কোন কোন ক্ষেত্রে শর্তসাপেক্ষ। আসুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক ভারতের এমন ৯টি জনপ্রিয় মন্দিরের কথা যেখানে পুরুষের প্রবেশ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। ​

১. ব্রহ্মা মন্দির, পুস্কর, রাজস্থান।

বিভিন্ন পুরাণের বেশ কয়েকটি ঘটনা দ্বারা জানা যায়, প্রজাপতি ব্রহ্মা মর্ত্যলোকে পূজা প্রাপ্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও সারা বিশ্বে হাতে গোনা কয়েকটি মন্দির রয়েছে যেখানে ব্রহ্মার পূজা করা হয়ে থাকে। রাজস্থানের পুস্করে অবস্থিত এই ব্রহ্মা মন্দির ঠিক তেমনি ভারতের প্রধান তিনটি ব্রহ্মা মন্দিরের মধ্যে একটি। কিন্তু এই মন্দিরটি প্রজাপতি ব্রহ্মার মন্দির হিসেবে যতটা খ্যাতি অর্জন করেছে তাঁর চেয়ে বেশী খ্যাতি অর্জন করেছে এই মন্দিরে পুরুষের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার কারনে। সারা বছরই কঠোর ভাবে পুরুষের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা পালন করা হয় এই মন্দিরে। কিন্তু কেন? পুরাণ বলছে, এই স্থানেই কোন এক সময় প্রজাপতি ব্রহ্মা সস্ত্রীক একটি যজ্ঞের আয়োজন করেছিলেন। কিন্তু দেবী সরস্বতী যজ্ঞস্থলে আসতে দেরী করার কারনে ভগবান ব্রহ্মা গায়ত্রীকে বিবাহ করে যজ্ঞের আনুষ্ঠানিকতা পূর্ণ করেছিলেন। পরবর্তীতে দেবী সরস্বতী এই ঘটনা জানতে পেরে অভিশাপ দেন যে, এই মন্দিরে কখনো কোন পুরুষ প্রবেশ করতে পারবে না। এবং যদি কেউ জোরপূর্বক প্রবেশ করে তাহলে তাঁর দাম্পত্য জীবন কখনোই সুখের হবে না। এবং এই পৌরাণিক কাহিনীর ভিত্তিতেই রাজস্থানের পুস্করে অবস্থিত এই মন্দিরে আজ পুরুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ।

আরও পড়ুনঃ  মহর্ষি ভৃগু কেন বিষ্ণুর বুকে পদাঘাত করেছিলেন? Why Rishu Bhrigu Kicked on The Chest of Lord Vishnu?

২. কামাখ্যা মন্দির, আসাম।

আপনারা অনেকেই আসামের কামাখ্যা মন্দিরের নাম শুনে থাকবেন। শাক্তমতে দেবী সতীর শরীরের ৫১টি খণ্ড যে স্থানগুলোতে পতিত হয়েছিল সেই স্থানগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে আসামের এই কামাখ্যা মন্দির। এই স্থানে দেবী সতীর যোনীখণ্ড পতিত হয়েছিল বিধায় চারটি প্রধান শক্তিপীঠেরও একটি হচ্ছে এই কামাখ্যা মন্দির। প্রতিবছর দেশ বিদেশ থেকে লক্ষ লক্ষ পর্যটক ছুটে আসেন রহস্যময় এই মন্দিরের আঙিনায়। তবে সারা বছর এই মন্দিরে পুরুষের প্রবেশে কোন নিষেধাজ্ঞা না থাকলেও অম্বাবুচীর সময় দেখা যায় এর ব্যাতিক্রম। আষাঢ় মাসে মৃগ শিরা নক্ষত্রের তিনটি পদ শেষ হলে পৃথিবী বা ধরিত্রী মাতা ঋতুময়ী হয়। এই সময়টিতে এই কামাখ্যা মন্দিরে পালিত হয় অম্বুবাচী উৎসব। যেহেতু এসময় দেবী রজঃস্বলা হয়ে থাকেন, তাই এই সময় ৪ থেকে ৫ দিন পুরুষের জন্য বন্ধ হয়ে যায় কামাখ্যা মায়ের দুয়ার। এসময় সকল প্রকার মাঙ্গলিক কার্য এবং দেবী দর্শন বন্ধ থাকলেও স্বাভাবিক পূজা-অর্চনার দায়ীত্ব পালন করেন মহিলা যাজক ও সন্যাসীরা।

৩. আট্টুকাল ভগবতী মন্দির, কেরল।

কেরালার আট্টুকালে অবস্থিত এই অনিন্দ্যসুন্দর মন্দিরটির নাম আট্টুকাল ভগবতী মন্দির। এই মন্দিরে অধিষ্ঠাত্রী দেবি ভগবতী হচ্ছেন স্বয়ং ভদ্রকালী। ভগবান শিবের তৃতীয় নেত্র থেকে জন্ম নেওয়া অসুর দারুকাকে বধ করেছিলেন এই দেবী। এই মন্দিরে তিনি পূজিতা হন আট্টুকাল দেবী বা আট্টুকাল আম্মা নামে। তবে সমগ্র ভারতবর্ষে এই মন্দিরটি পরিচিতি পেয়েছে এখানকার নারীর প্রাধান্য ও কর্তৃত্বের জন্য। এই মন্দিরের প্রধান এবং সবচেয়ে বড় উৎসব আট্টুকাল পোঙ্গাল উৎসবে কোন পুরুষ প্রবেশ করতে পারে না। এই উৎসবের সমস্ত আচার পালিত হয় শুধুমাত্র মহিলাদের দ্বারা। একারনে এঁকে মহিলাদের শবরীমালা মন্দির বলেও ডাকা হয়। মজার ব্যাপার হচ্ছে প্রতিবছর পোঙ্গালের সময় এখানে লক্ষ লক্ষ মহিলারা উৎসবে সামিল হন যা গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে স্থান করে নিয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  মহাভারতের ১২ জন শিশু অভিনেতার আসল পরিচয় || [Then and Now] 12 Young Actors of Mahabharat

৪. দেবী কন্যাকুমারী ভগবতী মন্দির, কন্যাকুমারী।

তামিলনাড়ুর কন্যাকুমারীতে অবস্থিত দেবী কন্যাকুমারী মন্দিরে কন্যাকুমারী রূপে পূজিতা হন দেবী মহাদেবী। দেবী সতীর শরীরের ডান কাঁধ এবং মেরুদণ্ডের অংশটি এখানে পতিত হওয়ার কারনে এটি ৫১ শক্তিপীঠেরও একটি অন্যতম পীঠস্থান। এই মন্দিরে দেবীকে কুমারী রূপে পূজা করার কারনে এখানে সার্বক্ষণিকভাবে পুরুষের প্রবেশ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। যদিও পুরুষ সন্যাসীরা মন্দিরের ফটক পর্যন্ত যেতে পারেন, তবে বিবাহিত পুরুষের জন্য মন্দিরের প্রবেশাধিকার একেবারেই নিষিদ্ধ।  বলা হয় শিব পার্বতীর বিবাহের দিন এই স্থানে মহাদেব মহাদেবীর প্রতি অসম্মানজনক আচরণ করেছিলেন বিধায়, আজ অবধি এই মন্দিরে কোন পুরুষের প্রবেশের অধিকার নেই।

৫. ​দেবী মাতা মন্দির, মুজফ্ফরপুর, বিহার।

আসামের কামাখ্যা মন্দিরের মত বিহারের মুজাফফরপুরের মাতা মন্দিরেও রয়েছে একটি বিশেষ বিধান। দেবী কামাখ্যার মত এই শক্তি স্থলেও দেবী ভগবতী রজঃস্বলা হন বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে। ফলে সেই সময়ে সমস্ত পুরুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ হয়ে যায় মন্দিরে। এসময় এই মন্দিরের পূজা-অর্চনা ও অন্যান্য রীতি রেওয়াজ পালন করে থাকেন মহিলারা। এই নিয়ম এখানে এতটা কঠোরভাবে পালন করা হয় যে, কোন পুরুষ, পুরোহিত বা সন্যাসীরাও এসময় মন্দিরে প্রবেশ করতে পারেন না।

৬. সন্তোষী মায়ের মন্দির, যোধপুর।

রাজস্থানের যোধপুরে অবস্থিত সন্তোষী মাতার মন্দিরেও রয়েছে পুরুষের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা। এই মন্দিরের অধিষ্ঠাত্রী দেবী সন্তোষী। তিনি এখানে পূজিতা হন মহিলা যাজক দ্বারা এবং মন্দিরের সমস্ত আচার পালিত হয় মহিলাদের দ্বারা। শুক্রবার ছাড়া সপ্তাহের অন্যান্য দিন পুরুষেরা মন্দিরের দরজা থেকে দেবী দর্শন করতে পারলেও তাঁর পূজা করার অধিকার পুরুষের নেই। কিন্তু শুক্রবার এই মন্দিরে পুরুষের প্রবেশ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। সপ্তাহের এই দিনে মহিলারা উপবাস করে মহাসমারোহে দেবীর পূজা অর্চনা করে থাকেন।

৭. চক্কুলাথুকাবু মন্দির, কেরল।

কেরালার আট্টুকাল ভগবতী মন্দিরের মত চক্কুলাথুকাবু মন্দিরেও রয়েছে পুরুষদের জন্য প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা। চক্কুলাথুকাবু মন্দিরের অধিষ্ঠাত্রী দেবী হচ্ছে ভগবতী বা দেবী দুর্গা। এই মন্দিরেও প্রতিবছর ১০ দিন ব্যাপী পোঙ্গাল উৎসবের আয়োজন করা হয়ে থাকে মন্দিরের পক্ষ থেকে। এই সম্পূর্ণ আয়োজনে মন্দির চত্বরে নিষিদ্ধ থাকে পুরুষের প্রবেশ। এই উৎসবের শেষ দিন বা ডিসেম্বর মাসের প্রথম শুক্রবারে ধানু নামে আরও একটি উৎসবের আয়োজন করা হয়ে থাকে যেখানে নারী পূজা নামক একটি বিশেষ ধর্মানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এই নারী পূজায় এখানকার পুরোহিত গত ১০ ব্যাপী উপবাসী নারীদেরকে ভগবতী জ্ঞানে পা ধুইয়ে দেন।

আরও পড়ুনঃ  যদি রামায়ণে শ্রীকৃষ্ণ এবং মহাভারতে শ্রীরামচন্দ্র আসতেন তাহলে কি ঘটত?

৮. চেঙ্গান্নুর ভগবতী মন্দির, কেরল।

দক্ষিণ ভারতের এই মন্দিরটির অধিষ্ঠাত্রী দেবতা দেবী পার্বতী। কামাখ্যা মন্দিরের মত এই মন্দিরেও প্রতিবছর একটি নির্দিষ্ট সময় দেবী রজঃস্বলা হন। ফলে ৩ থেকে ৫দিনের জন্য বন্ধ হয়ে যায় মন্দিরের দরজা। দেবী রজঃস্বলা হওয়ার প্রথম দিনে দেবী পার্বতীকে শিবের পাশ থেকে সরিয়ে গর্ভগৃহের অন্য একটি কক্ষে স্থানান্তরিত করা হয়। এরপর ৪র্থ দিনে দেবী পার্বতীকে স্থানীয় পাম্বা নদীতে নিয়ে মহাসমারোহে স্থান করিয়ে দেন মহিলারা। এই অনুষ্ঠানকে স্থানীয়ভাবে বলা হয় আরাট্টু। এবং দেবী রজঃস্বলা হওয়ার প্রথম দিন থেকে শুরু করে ৫ম দিন পর্যন্ত মন্দিরে পুরুষের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকে। উল্লেখ্য দেবী ঋতুমতী হওয়ার পর থেকে পৌরহিত্যের ভারও পালন করেন মহিলারা। চতুর্থ দিনে দেবীকে স্থান করিয়ে অভিষেক করার পরেই কেবল পুরুষ পুরোহিত তাঁর পূজা করতে পারেন।

৯. দেবীপুরম, বিশাখাপত্তনম, অন্ধ্র প্রদেশ।

কামাখ্যা মন্দির ও চেঙ্গান্নুর ভগবতী মন্দিরের অনুকরণে নির্মিত আরও একটি মন্দির হচ্ছে দেবীপুরম। এখানকার অধীষ্ঠাত্রী দেবতা হচ্ছেন দেবী কামাখ্যা। অধুনা এই মন্দিরের প্রায় সমস্ত নিয়ম কানুন পালিত হয় আসামের কামাখ্যা মন্দিরের অনুকরণে। প্রতিবছর একটি নির্দিষ্ট সময়ে এখানে দেবী ঋতুমতী হন। এসময় মহিলারাই সমস্ত আচার অনুষ্ঠান পালন করেন এবং পুরুষদের প্রবেশ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়ে থাকে। তবে এসময়ে আয়োজিত অনুষ্ঠান ও মন্দিরের অসামান্য নির্মাণশৈলী দর্শন করতে বহু মানুষ দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন এই মন্দির চত্বরে।

আজকের ভিডিওতে আমরা দেখিয়েছি ভারতের এমন ৯টি মন্দির যেখানে স্থায়ী বা অস্থায়ীভাবে অথবা বিশেষ কারনে নিষিদ্ধ থাকে পুরুষদের প্রবেশ। আপনারা চাইলে আগামী কোন একটি ভিডিওতে তুলে ধরা হবে ভারতের সেই সকল মন্দিরের কথা যেখানে পুরুষ নয় নারীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ।

5/5 - (1 vote)

Leave a Reply