You are currently viewing ভারতের এই ৯ মন্দিরে নারীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ || 9 Men Only Temples In India ||

ভারতের এই ৯ মন্দিরে নারীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ || 9 Men Only Temples In India ||

সনাতন ধর্মে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছেন নারীগণ। ঈশ্বরের নানাবিধ রূপের মধ্যে নারী রূপের প্রাধান্য বরাবর লক্ষ্য করা গেছে সনাতন ধর্মে। তাছাড়া যেকোন পূজা-পার্বণে পূজার উপকরণ সংগ্রহ, শঙ্খধ্বনি ও উলুধ্বনি করা, প্রতিমা বরন করা, প্রসাদ প্রস্তুত করা, প্রতিমা বিসর্জনের সময় সিঁদুর দান থেকে শুরু করে পূজার অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিধি পালনে নারীদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু জানেন কি আমাদের এই ভারতবর্ষেই এমন ৯টি মন্দির রয়েছে যেখানে আজও নারীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ? তবে তাঁদের প্রবেশে এই নিষেদ্ধাজ্ঞার পিছনে রয়েছে বেশ কিছু কারন। আসুন জেনে নেওয়া যাক সেই ৯টি মন্দিরের নাম ও কি কারনে সেখানে আজও নারীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ।

১. পদ্মনাভস্বামী মন্দির, কেরালা

আপনারা অনেকেই পদ্মনাভ স্বামী মন্দিরের নাম শুনে থাকবেন। কেরালার তিরুবনন্তপুরমে অবস্থিত এই মন্দিটির অধিষ্ঠিত দেবতা হচ্ছেন অনন্ত শয্যায় শায়িত এবং অনন্ত নাগ বেষ্টিত ভগবান শ্রীবিষ্ণু। আপনারা অনেকেই জানেন এই মন্দিরের অভ্যন্তরের গুপ্ত কক্ষগুলো থেকে বিপুল পরিমান ধনরত্ন আবিষ্কার করা হয়েছে। তবে আপনারা অনেকেই হয়ত জানেন না এই মন্দিরে নারীদের চলাচলে রয়েছে বেশ কিছু বিধি নিষেধ। বিধি মোতাবেক এই মন্দিরে নারীদের পুজো দিতে কোন সমস্যা নেই তবে তাঁরা মন্দিরের গর্ভগৃহ বা গুপ্ত কক্ষগুলোতে প্রবেশ করতে পারেন না। সূত্র বলছে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে এই মন্দিরের ভল্টগুলো নিরীক্ষণ করার সময় পুরাতত্ত্ব বিভাগের একজন মহিলা গবেষককে এই মন্দিরের গুপ্তধন কক্ষে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় নি। তাছাড়া এই মন্দিরে প্রবেশ করার জন্য মহিলাদের মেনে চলতে হয় একটি বিশেষ ড্রেস কোড। স্কার্ট, জিন্স, চুড়িদার বা অন্য কোনও পোশাকে এখানে নারীদের প্রবেশ করা নিষেধ। শুধুমাত্র শাড়ী পরেই নারীদের পক্ষে এই মন্দিরে প্রবেশ করা সম্ভব। মজার ব্যাপার হল এখানে প্রবেশ করার জন্য পুরুষদেরকেও মেনে চলতে হয়বিশেষ ড্রেস কোড। ভেস্তি অর্থাৎ ধুতি পরিধান করে এবং অঙ্গবস্ত্র তথা সাদা চাদর গায়ে জড়িয়ে প্রবেশ করতে হয় এই মন্দিরে।

আরও পড়ুনঃ  সরস্বতী পূজায় কি কি করতে হবে? কি কি করা যাবে না?

২. কার্তিকেয় মন্দির, পুস্কর, রাজস্থান

শিব-পার্বতীর পুত্র কার্তিকেয়কে উৎসর্গ করেই নির্মিত হয়রছে রাজস্থানের পুষ্করে অবস্থিত এই অনিন্দ্যসুন্দর মন্দিরটি। দেবসেনাপতি কার্তিকেয়র বৈবাহিক অবস্থা নিয়ে প্রচলিত রয়েছে নানা বিতর্ক। কোন মতে তিনি বিবাহিত আবার কোন মতে অবিবাহিত। তবে এই মন্দিরে তিনি পূজিত হন ব্রহ্মচারী বা অবিবাহিত হিসেবে। যেহেতু ব্রহ্মচারীগন নারীসঙ্গ থেকে বিরত থাকেন তাই এই মন্দিরে নিষিদ্ধ হয়েছে মহিলাদের প্রবেশ। স্থানীয় জনশ্রুতি থেকে জানা যায়, যদি কোন নারী পরম ভক্তি ভরে এখানে এসে কার্তিকেয়র পুজো দেন তবুও নাকি তিনি নাকি আশির্বাদ প্রাপ্তির পরিবর্তে অভিশপ্ত হবেন। তাই সাধারনত কোন নারী দৈবিক এই কোপ মাথায় নিয়ে মন্দিরে প্রবেশ করতে চান না।

৩. জৈন মন্দির, রনকপুর, রাজস্থান

ভারতবর্ষে যতগুলো নয়নাভিরাম মন্দির রয়েছে তাঁর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে রাজস্থানের রনকপুরের এই জৈন মন্দির। প্রায় ১৪৪৪ টি সাদা এবং কারুকার্যখচিত স্তম্ভ দ্বারা গঠিত এই মন্দিরটি জৈন ধর্মাবলম্বীদের ১৫ শতকে তৈরি হওয়া পাঁচটি প্রধান তীর্থস্থানের মধ্যে অন্যতম। তবে এ মন্দিরে মহিলাদের প্রবেশে সরাসরি কোন নিষেধাজ্ঞা না থাকলেও, এখানে প্রবেশ করতে হলে নারীদেরকে মেনে চলতে হয় মন্দির কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত বেশ কিছু নিয়ম কানুন। যেমন মন্দিরে প্রবেশকালে চামড়া দিয়ে তৈরি কোন বস্তু বহন করা যাবে না, নারীরা পশ্চিমা পোশাক পরিধান করে মন্দিরে প্রবেশ করতে পারবেন না এবং হাটুর উপরে পোশাক পরেও মন্দিরে প্রবেশ নিষিদ্ধ। এসকল নিয়ম কানুন মন্দিরের পাশে একটি সাইনবোর্ডের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হয় আগত দর্শনার্থীদেরকে। তবে এখানকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিষেধাজ্ঞা হচ্ছে কোন নারী ঋতুবতী বা রজঃস্বলা অবস্থায় কোনভাবেই এই মন্দিরে প্রবেশ করতে পারবেন না।

৪. শনি শিংনাপুর মন্দির,মহারাষ্ট্র

সারা দেশে হাজার হাজার শনিদেবের মন্দির থাকলেও মহ্রাষ্ট্রে অবস্থিত শনি শিংনাপুর মন্দিরটি সারা ভারতবর্ষ জুড়ে বিখ্যাত। এখানে একটি কালো কষ্ঠীপাথরকে পূজা করা হয় শনিদেবের প্রতিমূর্তি হিসেবে। জনশ্রুতি রয়েছে এই মন্দির তথা পাথরটি স্বয়ম্ভু। অর্থাৎ এটি নিজে থেকেই ভূমিতে উত্থিত হয়েছিল। এরপর একজন রাখালকে শনদেব নিজেই স্বপ্নে দর্শন দিয়ে পাথরটিকে পূজা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তবে শর্ত ছিল কোনভাবেই এই পাথরকে কেন্দ্র করে মন্দির নির্মাণ করা যাবে না। অর্থাৎ খোলা আকাশের নিচেই শনিদেবকে পূজা করতে হবে। বলা হয় শিংনাপুর এমন একটি গ্রাম যেখানে কেউই তাদের ঘরে তালা ব্যাবহার করেন না। তা সত্বেও এখানে নাকি কখনোই কোন চুরি হয় নি। কারন স্বয়ং কর্মফলদাতা শনিদেব নিজেই এখানে চৌর্যবৃত্তির দণ্ড দেন। এই মন্দিরের সবচেয়ে আশ্চর্যজনক ব্যাপারটি হচ্ছে গত ৪০০ বছর ধরে এখানে নারীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল। তবে ২০১৬ সালে  “ভূমাতা রণরঙ্গিনী ব্রিগেড” নামের একটি মহিলা সংগঠনের আন্দোলনের মুখে মন্দিরের ট্রাস্টি বোর্ড সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে বাধ্য হয়।

আরও পড়ুনঃ  কৃষ্ণের আগে কেন রাধার আরাধনা করা হয়? রাধে রাধে

৫. পাটবাউসি, আসাম

আসামের এই মন্দিরের আরাধ্য দেবতা হলেন বিভিন্ন বৈষ্ণব গুরু যেমন শ্রীমন্ত শঙ্করদেব, শ্রী মাধবদেব, শ্রী দামোদর দেব প্রমুখ। এই মন্দিরের পবিত্রতা রক্ষার জন্য মেয়েদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল প্রায় ৫০০ বছর আগে। এছাড়াও ঋতুবতী মহিলারা এই মন্দিরে প্রবেশ করলে মন্দিরের পবিত্রতা নষ্ট হবে বলে মত দেওয়া হয়েছিল মন্দির কতৃপক্ষ থেকে। মন্দির কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে জানা যায় এই নিয়ম নাকি ৫০০ বছরের পুরোনো। কিন্তু ২০১০ সালে আসামের রাজ্যপাল জে বি পাটনায়ক এই রীতির বিরোধিতা করেন এবং তার সাথে ২০ জন মহিলা নিয়ে গিয়ে মন্দিরের প্রাচীন রীতি ভেঙে দেন। তবে পরবর্তী সময়ে আবারও আগের নিয়ম বলবৎ হয়ে যায়।

৬. আয়াপ্পন মন্দির (শবরীমালা মন্দির), কেরালা

কেরালার শবরীমালা মন্দিরের কথা সারা ভারতবর্ষব্যাপী বিস্তৃত। বহুকাল থেকে এই মন্দিরে ১০ বছর থেকে ৫০ বছর বয়সী মহিলাদের প্রবেশ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ ছিল। অন্যভাবে বলতে গেলে ঋতুমতী নারীদের এই মন্দিরে প্রবেশ করার কোন অধিকার ছিল না। মূলত মন্দিরের অধিষ্ঠাত্রী দেবতা আইয়াপ্পা ব্রহ্মচারী হওয়ার কারনেই মহিলাদের প্রবেশ রদ করা হয় এই মন্দিরে। অনেক দিন ধরেই এ মন্দিরের এই প্রাচীন রীতি নিয়ে অসন্তোষ বাড়ছিল জনমনে। এবং এই অসন্তোষ গড়িয়েছিল আদালত পর্যন্ত। তবে ২০১৮ সালের এক ঐতিহাসিক রায়ে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট এই মন্দিরে নারীদের প্রবেশাধিকার প্রতিষ্ঠিত করে। তবে বাস্তবে সুপ্রিম কোর্টের সেই নির্দেশ কতটা বাস্তবায়িত হচ্ছে তা আজও প্রশ্নবিদ্ধ।

৭. শ্রীকৃষ্ণের মন্দির, কেরালা

কেরালার এই শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের নিয়ম কানুন অনেকটা পদ্মনাভস্বামী মন্দিরের মতই। এখানকার মন্দির চত্বরে মহিলাদের প্রবেশে কোন বাঁধা নেই বৈকি। তবে এই মন্দিরের মূল মর্মস্থল হচ্ছে নালাম্বালাম মন্দির। এবং এই নালাম্বালাম মন্দিরে কোন নারীর প্রবেশ নিষিদ্ধ। জানা যায় বহুকাল আগে পদ্মনাভ স্বামী মন্দিরের দুইজন সন্যাসী এখানে বাস করতেন। এই সন্যাসীগণ ব্রহ্মচারী তথা চিরকুমার হওয়ার কারনে এই মন্দিরে নারীদের প্রবেশে নিরুৎসাহিত করা হত। তবে বর্তমানে সেই সন্যাসীগণ আর এখানে না থাকলেও নারীদের জন্য সেই নিষেধাজ্ঞা রয়ে গেছে মন্দিরের নিয়ম হিসেবে।

আরও পড়ুনঃ  অবিবাহিত হনুমানের পুত্র মকরধ্বজ! পৌরাণিক কাহিনী || Makardhwaj - The Son of Brahmachari Hanuman

৮. মাওয়ালী মাতার মন্দির, ছত্তিসগড়

ছত্তিসগড়ের মাওয়ালী মাতার মন্দিরের রয়েছে মহিলাদের প্রবেশ না করার অদ্ভুত নিয়ম। এই মন্দিরে মহিলাদের প্রবেশ না করার নির্দেশ জারি করেছিলেন দুজন পুরোহিত। বলা হয় শ্যামলাল সাধু এবং শিব ঠাকুর নামের এই দুই পুরোহিত ঐশ্বরিক আদেশেই মহিলাদের ওপর এই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন। তাঁদের মতে একদিন ঈশ্বর নিজে মাটি থেকে উঠে এসে তাঁর মন্দিরে মহিলাদের প্রবেশে আপত্তি জানান। তারপর থেকেই বন্ধ করে দেওয়া হয় নারীর প্রবেশ। তবে এখানে মহিলাদের জন্যও একটি বিশেষ স্থান তৈরি করা হয়েছে মন্দিরের ভিতরে যেখানে মহিলাদের প্রবেশ করতে বাঁধা নেই।

৯. লর্ড কার্তিকেয়ার মন্দির, পেওয়া হরিয়ানা

পাঞ্জাব ও হরিয়ানার সীমান্তে অবস্থিত এই মন্দিরের অধিষ্ঠাত্রী দেবতা পার্বতী নন্দন শ্রী কার্ত্তিকেয়। রাজস্থানের কার্তিকেয় মন্দিরের মত হরিয়ানার কার্তিকেয় মন্দিরেও রয়েছে নারীদের জন্য প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা। বলা হয় দেবতাদের সেনাপতি কার্ত্তিক দেব চিরকুমার হওয়ার কারনে এস্থানে নারীদের প্রবেশ নিষেধ বলে জানা যায়। স্থানীয় জনশ্রুতি থেকে জানা যায়, একদা দেবসেনাপতি কার্তিক এখানেই ধ্যানে বসেছিলেন। তখন ব্রহ্মা তাঁর ধ্যান ভঙ্গের জন্য একজন অপসরাকে পাঠিয়েছিলেন। অপ্সরার প্রচেষ্টায় যখন তাঁর ধ্যান ভাঙে, তখন তিনি অত্যান্ত ক্রুদ্ধ হয়ে সেই দৈব অপ্সরাকে পাথরে পরিনত করেছিলেন।  এছাড়াও তিনি সাবধানবানী হিসেবে বলেছিলেন যে, এই মন্দিরে কোনও মহিলা ঢুকলে তাকেও তিনি পাথর বানিয়ে দেবেন। তারপর থেকেই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয় এই মন্দিরে।

প্রিয় দর্শক, এগুলো ছাড়াও ভারতবর্ষের বিভিন্ন মন্দিরে বিভিন্ন কারনে প্রবেশ করতে পারেন না নারীরা। এই রীতি রেওয়াজগুলোকে আপনি কিভাবে দেখেন তা জানার আগ্রহ রইল সনাতন এক্সপ্রেসের পক্ষ থেকে। তবে কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করার আগে শালীনতা বজায় রাখার আহবান রইল আপনাদের প্রতি।

5/5 - (1 vote)

Leave a Reply