You are currently viewing দেবী দুর্গার কোন হাতে কোন অস্ত্র? কোন অস্ত্রের কি মহিমা?

দেবী দুর্গার কোন হাতে কোন অস্ত্র? কোন অস্ত্রের কি মহিমা?

সমগ্র বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের প্রসবিত্রী দেবী আদ্যাশক্তি। তিনি সকল জীবের জননী হলেও আমাদের বাঙালী সমাজে তিনি পূজিতা হন কন্যা রূপে। আশ্বিনের শারদপ্রাতে আলোকমঞ্জির বেজে ওঠার সাথে সাথে পিত্রালয়ে উপস্থিত হন মাতা দশপ্রহরণধারিণী। তার আগমনে খুশির হিল্লোল বয়ে যায় আপামর বাঙালী সমাজে তথা শাক্ত বিশ্বাসের অনুগামীদের। এসময় বাপের বাড়িত বেড়াতে আসে কন্যা, সমস্ত আত্মীয়-স্বজন মিলে হইহুল্লোড়, পুজো দেখা, পেট পুজো ইত্যাদিতে মেতে ওঠেন বঙ্গভূমির অমৃতের সন্তানের দল। মা দুর্গার আগমন গমন, পুজো বিধি, অঞ্জলী প্রদান, হাতের অস্ত্র শস্ত্র প্রভৃতি বিষয় হয়ে ওঠে আমাদের আলোচনার বিষয়। আমরা আমাদের পূর্ববর্তী একটি ভিডিওতে মা দুর্গার আসা যাওয়ার জন্য ব্যাবহৃত যে ঘোটক, নৌকা, দোলা ইত্যাদি বাহন ব্যাবহৃত হয় তার কারন ব্যাখ্যা করেছি। আপনারা চাইলে উপরের আই বাটনে ক্লিক করে ভিডিওটি দেখে নিতে পারেন। এরই ধারাবাহিকতায় আজ আমরা জানতে চলেছি মাতা দশভূজার দশটি অস্ত্র সম্বন্ধে। আজ আমরা জানব মা দুর্গার কোন হাতে কোন অস্ত্র থাকে? এবং এসকল অস্ত্র বহন করার কারন বা গুরুত্ব কি? আশা করছি এই আয়োজনে আমাদের সাথে শেষ পর্যন্ত থাকবেন এবং কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জয় মা দুর্গা লিখে কমেন্ট করবেন।

দশপ্রহরণধারিনী দেবী দুর্গা
দশপ্রহরণধারিনী দেবী দুর্গা

জাগো, তুমি জাগো

জাগো দুর্গা, জাগো দশপ্রহরণধারিনী

অভয়াশক্তি বলপ্রদায়িনী

তুমি জাগো

প্রিয় দর্শক, আপনারা নিশ্চই খেয়াল করেছেন এখানে দেবী দুর্গাকে দশপ্রহরণধারিনী নামে সম্বোধন করা হয়েছে। কিন্তু জানেন কি, এই দশপ্রহরণধারিনী শব্দের অর্থ কি? আসলে দশটি প্রহরণ যিনি ধারন করেন তিনিই হচ্ছে দশপ্রহরণধারিনী। আর প্রহরন শব্দের অর্থ হচ্ছে সেই বস্তু যা দ্বারা প্রহার করা হয়। তাই দশটি অস্ত্র নিজের দশটি ভূজায় বহন করেন বলেই তার নাম দশপ্রহরণধারিনী। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, দেবী তার কোন হাতে কোন অস্ত্র ধারণ করে থাকেন?  এই প্রশ্নের সহজ উত্তর হচ্ছে দেবীর ধ্যানমন্ত্র। আজ্ঞে হ্যাঁ, দেবীর ধ্যানমন্ত্র আবৃত্তি ও ভালোভাবে বোঝার চেষ্টা করলেই কোন হাতে কোন অস্ত্র তা আমাদের বোধগম্য হবে। তাহলে আসুন প্রথমে দেবীর ধ্যানমন্ত্রের সেই বিশেষ অংশটুকু পাঠ করা যাক।

ত্রিশুলং দক্ষিণে ধ্যেয়ং খর্গং-চক্রং ক্রমাদধঃ।।

তীক্ষ্ণবাণং তথা শক্তিং দক্ষিণেষু বিচিন্তয়েৎ।

খেটকং পূর্ণচাপঞ্চ পাশমঙ্কুশমেব চ।।

ঘণ্টাং বা পরশুং বাপি বামতঃ সন্নিবেশয়েৎ।

অর্থাৎ, দেবী তাঁর দক্ষিণ হস্তে উপরের দিক থেকে ধারণ করেন ত্রিশূল, খড়গ, চক্র, তীক্ষ্ণবান, এবং শক্তি। আবার বাম হস্তে নিচের দিক থেকে ধারণ করেন খেটক, পূর্ণচাপ, পাশ, অঙ্কুশ, ঘন্টা বা কুঠার। তবে অনুবাদের রকমফেরে এই দশ অস্ত্রের নাম নিয়ে বিতর্ক দেখা যায় পণ্ডিতগণের মধ্যে। তাই সাধারন ভাবে শঙ্খ, চক্র, গদা, পদ্ম, ত্রিশূল, খড়গ, ধণুর্বান, ঘন্টা, নাগপাশ ও বজ্রাস্ত্রের ব্যাবহার দেখা যায় দেবীসজ্জায়। প্রিয় দর্শক, এবার আসুন দেবী দুর্গার এই প্রচলিত দশ অস্ত্রের গুরুত্ব ও তাৎপর্য জেনে নেওয়া যাক।

আরও পড়ুনঃ  হাজার বছর ধরে জাপানে পূজিত হচ্ছেন হিন্দু দেবতারা || Japanese Versions of Hindu Gods ||
দশবিধ অস্ত্রে সজ্জিতা দেবী দুর্গা
দশবিধ অস্ত্রে সজ্জিতা দেবী দুর্গা

শঙ্খ

মহিষাসুরের সাথে যুদ্ধের আগে বরুণ দেব দেবী দুর্গাকে দিয়েছিলেন শঙ্খ বা শাঁখ।  দেবী দুর্গা তাঁর বাম হাতে ধারন করেছিলেন বরুনদেব প্রদত্ত্ব এই দৈবশঙ্খ৷আপনারা জানেন শঙ্খের ধ্বনি মঙ্গলময় যা মহাজাগতিক জাগরণের প্রতীক। আবার সেযুগে যুদ্ধে আহবান করতে বা যুদ্ধের প্রারম্ভে শঙ্খনাদ করে শত্রুকে জানিয়ে দেওয়া হত যুদ্ধের অভিপ্রায়। পুরাণমতে, সৃষ্টির আদিতে যখন সমগ্র বিশ্ব চরাচর জলমগ্ন ছিল তখন শ্রী বিষ্ণু শাঁখের আধারে অবস্থান করছিলেন সমুদ্রের তলদেশে। এরপর দেবতাদের প্রার্থনায় শ্রীবিষ্ণু সমুদ্র থেকে উঠে এসেছিলেন শঙ্খধারী বেশে। এছাড়াও সমুদ্র মন্থন থেকে উঠে আসা শঙ্খ, অসুর শঙ্খচূড়ের অমরত্ব প্রভৃতি কারনে সনাতন ধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হচ্ছে এই শঙ্খ।

শঙ্খ
শঙ্খ

চক্র

দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গাকে চক্র দান করেছিলেন ভগবান শ্রী বিষ্ণু। এই সুদর্শন চক্র স্থান পেয়েছিল দেবীর দক্ষিণ হস্তে। এখানে “সু” শব্দের অর্থ সুন্দর আর “দর্শন” শব্দের অর্থ্য দৃশ্যমান। অর্থাৎ, তীব্র গতিতে ঘুর্ণায়মান এই সুদর্শন চক্র দেখতে  ব্রহ্মাণ্ডেরই মত উজ্বল ও অপরূপ সুন্দর । যার কেন্দ্রবিন্দু থেকে সমস্ত তেজ ও শক্তি সঞ্চারিত-বিচ্ছুরিত হয়ে চলেছে। সেই কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থানকারী শক্তি সম্পর্কে আমরা হয়ত অবগত নই। দেবীর হাতে ব্রহ্মাণ্ডস্বরূপ চক্রের উপস্থিতি আমাদেরকে জানান দেয় যে, তিনিই এই ব্রহ্মাণ্ডের কেন্দ্র যার থেকে এই বিপুল তেজরাশি ও শক্তি সঞ্চারিত ও বিচ্ছুরিত হয়। কারণ দেবী প্রকৃতি স্বরূপা আদ্যাশক্তি। তিনি ব্রহ্মাণ্ড প্রসবিনী ও নিয়ন্ত্রনকত্রী। অর্থাৎ কাল বা সময় দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এই ব্রহ্মাণ্ড যার ধাত্রে বিকশিত তিনিই হলেন দেবী দুর্গা যিনি আদ্যাশক্তির অংশপ্রকাশ।

সুদর্শন চক্র
সুদর্শন চক্র

কালদণ্ড বা গদা

দেবীর বাম হাতে সুসজ্জিত গদা বা কালদণ্ডটি মহিষাসুর নিধন যজ্ঞে দেবী মহামায়াকে প্রদান করেন স্বয়ং ধর্মরাজ যম। গদা বা কালদন্ড হল মহা প্রীতি, আনুগত্য, ভালবাসা এবং ভক্তির প্রতীক। একইসাথে কালদণ্ড শক্তিরও প্রতীক। কাল বা মহাকালের প্রতি আমরা সকলেই অনুগত কারন কালের উর্ধে কেউ নেই। মহাকালের করাল গ্রাস সবকিছুকেই ধবংস করে দিতে পারে। তাই যম কতৃক প্রদত্ত এই অস্ত্র দেবী দুর্গার প্রতি মহাপ্রীতি ও আনুগত্য প্রকাশ করায়। আবার দেবী দুর্গার হাতে গদা বা কালদণ্ডকে সম্মোহনকারী শক্তি হিসেবেও দেখা হয়। দেব, দানব, মানব এবং সকল শুভ ও অশুভ শক্তি এই মহাশক্তির নিয়ন্ত্রনাধীন। তাছাড়া প্রয়োগিকভাবে মহিষাসুরকে বধ করার নিমিত্তে বা সম্মোহিত করার জন্য গদা বা কালদণ্ড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।

গদা
গদা

পদ্ম, অক্ষমালা ও কমণ্ডলু

ক্ষেত্রবিশেষ দেবী দশপ্রহরণধারিনীর হাতে শোভা পায় পদ্ম, অক্ষমালা ও কমণ্ডলু। পুরাণমতে, এই তিন পবিত্র বস্তু দান করেছিলেন প্রজাপ্রতি ব্রহ্মা। পদ্ম পাঁকে জন্মায় তবুও সে পবিত্র। সেইহেতু আলো থেকে অন্ধকারে উত্তরনের পথের প্রতীক হল পদ্ম। আমাদের সনাতন শাস্ত্র গ্রন্থে এই সমগ্র জীব জগৎ তথা সৃষ্টিকে  প্রস্ফুটিত পদ্মের সাথে তুলনা করা হয়েছে। তাছাড়া পদ্মের নিষ্কলুষ পবিত্রতার কারনে আমাদের বহু দেবদেবীদের অধিষ্ঠানও প্রস্ফুটিত পদ্মের উপর। পদ্ম ছাড়াও ব্রহ্মা প্রদত্ত্ব অক্ষমালা ও কমণ্ডলু ধারণ করেন দেবী দুর্গা যা মূলত পবিত্রতার প্রতীক।

আরও পড়ুনঃ  রামায়ণ থেকে মহাভারত পর্যন্ত জীবিত ছিলেন এই ৬ জন || People Who Lived Across Treta to Dwapara Yuga ||
পদ্ম, অক্ষমালা ও কমণ্ডলু
পদ্ম, অক্ষমালা ও কমণ্ডলু

ত্রিশূল

মহিষাসুর বধে দেবী দুর্গার প্রধান অস্ত্র ছিল ত্রিশূল। আপনারা জানেন ত্রিশুল মূলত দেবাদিদেব মহাদেবের অস্ত্র যা তিনি মহিষাসুর নিধন যজ্ঞে মহাদেবীর হাতে সমর্পন করেছিলেন। শাস্ত্রমতে ত্রিশূল হচ্ছে ত্রিকাল দণ্ড স্বরূপ যা অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের প্রতীক।  আবার ত্রিশূলের তিনটি ফলা তিনটি গুণযুক্ত। এই ত্রিগুন হল সতঃ রজঃ ও তমঃ। আপনারা অনেকেই জানেন ত্রিশূলের মধ্য ভাগের ফলাটি সত্ত্বঃ গুন সমৃদ্ধ ও বাকি দুই দিকের দুটি ফলা রজঃ গুন ও তমঃ গুন বিশিষ্ট।

ত্রিশূল
ত্রিশূল

খড়গ

দেবীর ডান হস্তে উদ্দত অবস্থায় দৃশ্যমান হয় লাল টকটকে খড়গ বা খাঁড়া। এই খড়গ মূলত ভয়াবহতার বহিঃপ্রকাশ। খড়গ দিয়েই দেবী মহামায়া অসুরের মস্তক ছিন্ন করে মুন্ডমালা ধারন করেছিলেন নিজের কন্ঠে। শ্রী শ্রী চণ্ডীতে বর্ণিত দেবী চামুণ্ডা অসুর নিধন কালে তাঁর হস্তে রক্তবর্না খড়গ দ্বারা অশুভকে নাশ করেছিলেন। আপনারা জানেন, অষ্টমী ও নবমীর সন্ধিক্ষণে যে ৪৮ মিঃ সময় থাকে সেই সময় দেবী দুর্গা পূজিতা হন চামুণ্ডা রূপে। সাধারনত এই সময়ে দেবীর উদ্দেশ্যে বলি প্রদান করা হয়ে থাকে। আর খড়গ হল সেই বলি প্রদানের অস্ত্র। তবে সাধারনভাবে পশু, কুমড়ো বা অন্যান্য বস্তু বলি দেওয়া হলেও প্রকৃত বলি হল, বিবেক বুদ্ধির মধ্যে নিহিত অশুভের নিধন যজ্ঞ। হিংসা, গ্লানি, ক্রোধ, অহং সহ ষড় রিপু থেকে নিজের আত্ম শক্তিকে পরিশুদ্ধির প্রক্রিয়া। তাই দেবীর হস্তে সজ্জিত খড়গ হল, পরম মোক্ষের প্রতীক। এই খড়গ সর্বদা উদ্দত থাকে অশুভকে নাশ করে অভয় ও মোক্ষ প্রদান করার জন্য।

খড়গ
খড়গ

তীর ধনুক

দেবী মহামায়ার দক্ষিণ শ্রীহস্তে পরিলক্ষিত হয় তীর ও ধনুক। পুরাণমতে, মহিষাসুরের সাথে যুদ্ধের প্রারম্ভে পবন দেব দেবী দুর্গাকে এই ধনুর্বাণ প্রদান করেন। ধণুর্বান যুদ্ধক্ষেত্রের এক অনিবার্য অস্ত্র যা মহিষাসুর বধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল দেবী দুর্গার পক্ষে। তবে প্রকৃতপক্ষে এই ধনুর্বাণ স্থির ও অবিচল লক্ষ্যের প্রতীক। জীবনের নানা পর্যায়, মুহুর্ত বা ঘটনাক্রম আমাদেরকে প্রতিনিয়তই পরীক্ষার মুখে ফেলে দেয়, যা আমাদের কাছে যুদ্ধেরই নামান্তর মাত্র। তাই সেই যুদ্ধে জয় পেতে, স্থির ও অবিচল লক্ষ্য নির্ধারণ করা আমাদের কাছে অনিবার্য হয়ে পড়ে। আর সঠিক লক্ষ্য ও সঠিক পথ নির্বাচন করতে পারলে জীবনের সকল প্রকার জটিল পরিস্থিতি থেকে পরিত্রান পাওয়া সম্ভব। তাই তীর ধনুক সেই লক্ষ্যভেদের প্রতীকরূপে দেবীর হাতে সজ্জিত থাকে রণাঙ্গনে।

আরও পড়ুনঃ  সরস্বতী পূজায় কি পড়াশোনা করা নিষিদ্ধ? Why Studying Prohibited During Saraswati Puja?
ধনুর্বাণ
ধনুর্বাণ

ঘন্টা

মাতা আদ্যাশক্তি মহিষাসুরমর্দ্দিনিরূপে বাম হস্তে ধারণ করেন ঘন্টা। শ্রী শ্রী চণ্ডীতে বর্নিত ঘটনা অনুসারে জানা যায়, দেবী মহিষাসুরকে যুদ্ধে আহ্বান করার সময় সতর্ক বার্তা স্বরূপ অট্টহাসি হেসেছিলেন এবং শাঁখ ও ঘন্টার ধ্বনিতে তাঁকে যুদ্ধপ্রস্ততির নির্দেশ দিয়েছিলেন। পুরাণ বলছে, দেবরাজ ইন্দ্রের বাহন ঐরাবত এই ঘণ্টাটি অর্পণ করেছিলেন দেবীর শ্রীহস্তে। এই ঘণ্টার ধ্বনিতে যুদ্ধের সূচনা হওয়ার পরে শাঁখ ও ঘণ্টার মিলিত নিনাদে অশুভ শক্তির বিনাশের কাল ঘোষিত হয়েছিল যা আসুরিক শক্তিকে দুর্বল ও নিস্তেজ করে দিয়েছিল। তাই ঘণ্টা আসুরিক শক্তির বিনাশের সংকেত। শাস্ত্রে বলা হচ্ছে, ‘সা ঘণ্টা পাতু নো দেবি পাপেভ্যো নঃ সুতাম্ইব’। অর্থাৎ ভক্তরা মায়ের কাছে প্রার্থনা করছেন, মা তোমার ওই যে ঘণ্টা অসুরদের তেজ হরণ করেছিল, আমরাও সেই ঘণ্টার শরণ নিচ্ছি, আমাদের পাপকে সেই ঘণ্টা যেন হরণ করে নেয়।

ঘন্টা
ঘন্টা

নাগপাশ

দেবী দুর্গা তাঁর বাম হস্তে ধারণ করেন নাগপাশ যা বরুন দেব মহাদেবীকে প্রদান করেছিলেন মহিষাসুর নিধন যজ্ঞে। আবার মতান্ত্বরে শেষনাগ দেবী দুর্গাকে অসুরবধের অস্ত্র হিসেবে প্রদান করেছিলেন এই নাগপাশ৷ পুরাণ বলছে, দেবী যখন মহিষ রূপী অসুরকে নিয়ন্ত্রন করতে ক্লান্ত তখন এক মাত্র নাগপাশেই তিনি ক্ষনে ক্ষনে রূপ পরিবর্তনকারী অসুরকে আবদ্ধ করে তার কেশ বাম মুঠোয় ধরে ফেলেন। আর নাগপাশে জর্জরিত অসুরের চেতনা ফেরে যে তিনি দেবীর নিকট বন্দি হয়েছেন। মূলত আসুরিক প্রবৃত্তি লাঘব এবং মনে বিশুদ্ধ চেতনার বিকাশে দেবী দুর্গার হাতে শোভা পায় সর্প বা নাগপাশ।

নাগপাশ
নাগপাশ

বজ্র

দেবরাজ ইন্দ্রের অমোঘ অস্ত্র বজ্রাস্ত্র। অসুরের বিরুদ্ধে সংগ্রামে দেবী দশভূজাকে সেই অমোঘ অস্ত্র প্রদান করেছিলেন দেবরাজ। দেবী তাঁর বাম হস্তে এই বজ্র ধারণ করে নেমে পড়েছিলেন অসুর নিধনে। বজ্রাস্ত্র  কঠোর ও সংহতির প্রতীক। আমাদের যাপিত জীবনে ও চরিত্রে কোমলতার পাশাপাশি প্রয়োজন কঠোরতারও। আবার সংহতি পূর্ণ সমাজ জীবন সব মানুষেরই কাম্য। তাই এই দুইয়ের প্রতিকীরূপে দেবীর হাতে শোভা পাচ্ছে বজ্র।

বজ্র
বজ্র

এছাড়াও দেবী অস্ত্র সজ্জায় সুসজ্জিত হওয়ার পাশাপাশি দেবীকে নানা আভরনে সুসজ্জিত করেন কুবের। অগ্নি দেবী মহামায়াকে দেন তেজ। সূর্যদেব দেবীকে প্রদান করেন তপ্ত কাঞ্চন বর্ণ। আর চন্দ্র দেব দেবীকে দেন কোটি চন্দ্র প্রভা। বিশ্বকর্মা দেবীকে দেন অভেদ্য কবজ কুন্ডল, এবং অক্ষয় বস্ত্র যা দেবীর রক্ষা কবচ হিসাবে কাজ করেছিল। গিরিরাজ হিমালয় দেবীকে দিয়েছিলেন তাঁর বাহন সিংহ। দেবীর এই রূপ আদ্যাশক্তির দৃশ্যমান সকল রূপের মধ্যে সর্বোচ্চ। তিনি পূর্ণ জ্যোতির্ময়ী রূপে রক্ষা করেন তাঁর সন্তানদেরকে এবং এই সমগ্র সৃষ্টিকে।

 

5/5 - (1 vote)

Leave a Reply