You are currently viewing রামায়ণ থেকে মহাভারত পর্যন্ত জীবিত ছিলেন এই ৬ জন || People Who Lived Across Treta to Dwapara Yuga ||

রামায়ণ থেকে মহাভারত পর্যন্ত জীবিত ছিলেন এই ৬ জন || People Who Lived Across Treta to Dwapara Yuga ||

আপনি জানেন কি, সনাতন ধর্মের যুগের ধারণা অনুসারে ত্রেতাযুগের আয়ুষ্কাল ছিল ১২৯৬০০০ বছর এবং দ্বাপর যুগের আয়ুষ্কাল ছিল ৮,৬৪,০০০ বছর। ভগবান শ্রীবিষ্ণু দ্বাপরে মর্ত্ত্যে এসেছিলেন রাম রূপে এবং ত্রেতাতে এসেছিলেন কৃষ্ণরূপে। আর এই দুই যুগের দুটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হচ্ছে রামায়ণ ও মহাভারত। কিন্তু কোন ব্যক্তির পক্ষে কি রামায়ণের যুগ থেকে মহাভারতের যুগ পর্যন্ত বেঁচে থাকা সম্ভব? আজ্ঞে হ্যাঁ সম্ভব বটে। আর এই অসম্ভবের প্রমাণ পাওয়া যায় রামায়ণ ও মহাভারতের কিছু চরিত্র থেকে। আজ আমরা আপনাদের সামনে এমন ১০ জন চরিত্রকে তুলে ধরতে চাই যাদের উল্লেখ রয়েছে রামায়ণ ও মহাভরত উভয় গ্রন্থেই। অর্থাৎ এই ব্যক্তিরা বেঁচে ছিলেন রামায়ণের যুগ থেকে মহাভারতের যুগ পর্যন্ত। লেখাটি ভালো লাগলে কমেন্টে একবার জয় শ্রীবিষ্ণু লিখে যাবেন।

১. পরশুরাম

রামায়ণ ও মহাভারতের এক অমর চরিত্র হচ্ছেন পরশুরাম। পিতা ঋষি জমদগ্নি ও মাতা স্ত্রী রেণুকার কণিষ্ঠ সন্তান ছিলেন পরশুরাম। তবে জন্মসূত্রে ব্রাহ্মণ হলেও ভগবান শিবের আরাধনা করে তিনি লাভ করেছিলেন কুঠার বা পরশু নামের এক অমোঘ অস্ত্র। আর এই পরশুর কারণেই তাঁর নাম হয়েছিল পরশুরাম। এই কুঠার দিয়ে তিনি একুশ বার পৃথিবী থেকে ক্ষত্রিয়দের নিশ্চিহ্ন করেছিলেন। তাছাড়া পিতার আদেশে নিজের মাতা রেণুকার মস্তকও কর্তন করেছিলেন তিনি।

রামায়ণ থেকে জানা যায়, মহেন্দ্র পর্বতে দীর্ঘদিন তপস্যা করার পর প্রচুর ব্রহ্মতেজ অর্জনের করে পরশুরাম পর্বত থেকে নেমে আসেন সমতলে। সেসময়, মিথিলার রাজা জনকের রাজসভায় আয়োজিত হয়েছিলেন দেবী সীতার স্বয়ংবর। শর্ত ছিল এই স্বয়ংবরে যিনি হরধণুতে গুণ চড়াতে পারবেন তিনিই মাতা সীতার পতি হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করবেন। কিন্তু সভায় উপস্থিত সকল রাজা ও যুবরাজগণ ধনুকটিকে গুণ চড়ানো তো দূরের কথা সেটিকে উত্তোলন করতেই ব্যার্থ হলেন। ঠিক তখন মর্যাদা পুরুষোত্তম শ্রীরামচন্দ্র সেই ধণুকে গুণ চড়াতে গিয়ে সেটিকে ভেঙে ফেলেন। হরধণু ভঙ্গের তীব্র শব্দে প্রকম্পিত হল চারিদিক। পরশুরাম বুঝতে পারলেন কেউ একজন হরধণুক ভঙ্গ করেছেন। আর এতেই পরশুরামের তীব্র ক্রোধ জেগে উঠল। কারণ তিনিই ভগবান শিবের এই ধনুটিকে জনক রাজাকে দান করেছিলেন। ফলে ক্রুদ্ধ পরশুরাম সম্মুখীন হলেন শ্রী রামচন্দ্রের। ক্রোধে মত্ত হয়ে তিনি ভগবান শ্রীবিষ্ণুর অবতার শ্রীরামচন্দ্রকে চিনতে পারলেন না। তিনি রামকে নির্দেশ দিলেন তার বৈষ্ণবী ধনুকে গুন পরিয়ে দেখানোর জন্য। আর রাম যদি এতে ব্যর্থ হন তাহলে তাকে দ্বন্দ্বযুদ্ধে অবতীর্ণ হতে হবে বলে চ্যালেঞ্জ করেন পরশুরাম। ফলে যা হওয়ার তাই হল। পরশুরামের তপস্যার্জিত সমস্ত শক্তি বিনষ্ট করেন রাম। ফলে পরশুরামের তেজ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। এরপর ইনি নির্বীর্য হয়ে রামচন্দ্রকে পূজা ও প্রদক্ষিণ করে মহেন্দ্র পর্বতে ফিরে যান।

পরশুরাম
পরশুরাম

মহাভারত থেকে জানা যায়, পরশুরাম ছিলেন কুরু ও পাণ্ডবদের অস্ত্রগুরু দ্রোণাচার্য, পিতামহ ভীষ্ম ও কর্ণের অস্ত্রগুরু। মহাভারতেও পরশুরাম ছিলেন এক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। একদা নিজ ভ্রাতা বিচিত্রবীর্যের জন্য কাশীরাজের তিন কন্যা অম্বা, অম্বালিকা ও অম্বিকাকে বলপূর্বক অপহরণ করেছিলেন ভীষ্ম। তারই জেরে পরশুরামের কাছে বিচার চেয়েছিলেন অম্বা। পরশুরাম ভীষ্মের কাছে দুটি শর্ত রেখেছিলেনঃ অম্বাকে বিবাহ করো অথবা আমার সাথে যুদ্ধ করো। ভীষ্ম আজীবন ব্রহ্মচারী হওয়ায় গুরুর সাথে যুদ্ধ করার শর্তটি বেছে নিয়েছিলেন। তবে ভীষ্ম ও পরশুরামের মধ্যে সংঘটিত গুরু-শিষ্যের এই যুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরেও কেউ কাউকে পরাজিত করতে পারেননি।

আরও পড়ুনঃ  শ্রীকৃষ্ণ কেন কালী রূপ ধারন করেছিলেন? Why Shri Krishna Took the Form of Goddess Kali?

আবার মহাভারতের যুদ্ধে কর্ণের করুণ মৃত্যুর অন্যতম কারণ ছিলেন পরশুরাম। আপনারা জানেন কর্ণ নিজের পরিচয় গোপন করে পরশুরামের কাছে অস্ত্রশিক্ষা করেছিলেন। তবে পরশুরাম যখন কর্ণের আসল পরিচয় জানতে পারেন, তখন তিনি তাকে অভিশাপ দিয়েছিলেন, প্রয়োজনের সময় এই অস্ত্রবিদ্যা তাঁর কোন কাজে আসবে না। আর ঠিক এই কারণেই অর্জুনের সাথে যুদ্ধের সময় দিব্যাস্ত্রের জ্ঞান স্মরণ করতে পারেননি কর্ণ। ফলে নিজ ভ্রাতা অর্জুনের হাতে করুণ মৃত্যু হয় কর্ণের।

যাইহোক, পরশুরাম শুধুমাত্র ত্রেতা থেকে দ্বাপর পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন তাই নয়। সনাতন শাস্ত্রমতে তিনি সপ্ত চিরঞ্জীবীদের মধ্যে অন্যতম। কারণ পিতার আদেশ পালন করতে গিয়ে নিজের মাতার শিরোচ্ছেদ করার জন্য তাঁর পিতা তাকে অমর হওয়ার বরদান করেছিলেন। এবং সেই হিসেবে পরশুরাম আজও এই পৃথিবীতে বেঁচে আছেন। বলা হয়,  কলিযুগের শেষে ভগবান বিষ্ণু যখন কল্কি অবতাররূপে জন্মগ্রহণ করবেন তখন তিনি পরশুরামের শিষ্যত্ব বরণ করবেন।

২. মায়াসুর বা ময়দানব

পররশুরামের মত প্রভাবশালী চরিত্র না হলেও রামায়ণ ও মহাভারত দুই মহাকাব্যেই উপস্থিতি রয়েছে মায়াসুর বা ময়দানবের। দেবতাদের শিল্পী যেমন বিশ্বকর্মা , অসুরদের শিল্পীও তেমন ময়দানব। ময়দানব দীর্ঘদিন ধরে ব্রহ্মার তপস্যা করেন। এবং তাঁর তপস্যায় সন্তুষ্ট প্রজাপতি ব্রহ্মা তাকে বর দিয়েছিলেন যে, তিনি শিল্পকার্যে বিশেষ দক্ষতা অর্জন করবেন। একারণে দানবগুরু শুক্রাচার্যের বিশেষ প্রিয়পাত্র ছিলেন এই ময়দানব।

মায়াসুর বা ময়দানব
মায়াসুর বা ময়দানব

রামায়ণ থেকে জানা যায়, ময়দানব অসুর হলেও তিনি একেবারেই হিংস্র স্বভাবের ছিলেন না। তাছাড়া ময়দানবের পত্নীভাগ্যও ছিল যথেষ্ট ভালো। হেমা নামক এক অপ্সরার সঙ্গে তাঁর বিবাহ হয়। ময়দানব ও হেমার ঘরে জন্ম নিয়েছিলেন মায়াবী ও দুন্দুভি নামক দুই পুত্র। কিন্তু এই দম্পত্তি চেয়েছিলেন একটি কন্যা সন্তান। তাই তারা কৈলাস পর্বতে গিয়ে দেবাদিদেব মহাদেবের তপস্যায় রত হন। এসময় মধুরা নামক এক অপ্সরাকে কন্যারূপে লাভ করেছিলেন ময়দানব ও হেমা দম্পত্তি। তারা এই কন্যার নাম রেখেছিলেন মন্দোদরী। কালক্রমে রাক্ষসপতি রাবণের সাথে সাক্ষাৎ ঘটে অপরূপ রূপবতী মন্দোদরীর। আর এভাবেই মন্দোদরীরই বনে গিয়েছিলেন লঙ্কেশ্বর দশাননের পাটরানী। আর ময়দানব হয়েছিলেন লঙ্কাধিপতি রাবণের শ্বশুর।

মহাভারত থেকে জানা যায়, পাণ্ডবদের সাথে কলহ করা উচিত হবে না ভেবে ধৃতরাষ্ট্র কুরুরাজ্যের একটি সামান্য অংশ পাণ্ডবদেরকে দান করেছিলেন। পাণ্ডবরা সেই অংশে ‘খাণ্ডবপ্রস্থ’ নামের তাদের নিজস্ব রাজ্য স্থাপন করেন। মহাভারত অনুসারে খাণ্ডব বন দহন করার সময় শ্রীকৃষ্ণ ও অর্জুন ময়দানবকে প্রাণে রক্ষা করেছিলেন। এবং এই কৃতজ্ঞতায় অসুরর শিল্পী ময়দানব পাণ্ডবদের জন্য ইন্দ্রপ্রস্থ নামক এক অতি সুন্দর রাজধানী নগর তৈরী করে দেন।

৩. বিভীষণ

রামায়ণে উল্লেখিত চরিত্রগুলোর মধ্যে বিভীষণ একটি উল্লেখযোগ্য চরিত্র। মাতা সীতাকে অপহরণের জেরে রাম-রাবণের যুদ্ধ যখন অনিবার্য হয়ে পড়েছিল, তখন লঙ্কাপতি রাবণের ভ্রাতা বিভীষণ যোগ দিয়েছলেন রামের পক্ষে। তিনি ছিলেন পরম বিষ্ণুভক্ত এবং চেষ্টা করেছিলেন তাঁর ভ্রাতা রাবণকে অন্যায় ও পাপের পথ থেকে ফিরিয়ে আনতে। কিন্তু তিনি যখন কোনভাবেই রাবণকে ন্যায়ের পথে আনতে পারেননি, তখন তিনি শ্রী রামের বশ্যতা স্বীকার করে নিজ ভ্রাতার বিপক্ষে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। বলাই বাহুল্য, বিভীষনের কারনেই রাবণের বিপক্ষে যুদ্ধ করে জয়লাভ করা অনেকেটাই সহজ হয়েছিলে রাম ও তাঁর সেনাবাহিনীর পক্ষে।  যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর লঙ্কার পরবর্তী রাজাও হন বিভীষণ।

বিভীষণ
বিভীষণ

মহাভারত অনুসারে জানা যায়, পাণ্ডবরা যখন রাজসূয় যজ্ঞের আয়োজন করেন, তখন বিভীষণ সেই যজ্ঞের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন। পাশাপাশি তিনি তাঁদেরকে বহুমূল্য সমস্ত সামগ্রী উপহার হিসেবে প্রদান করেন। সভাপর্বে ধর্মরাজ যুধিষ্ঠিরের রাজসূয় যজ্ঞের সময় সহদেব কর গ্রহণের জন্য বিভিন্ন রাজ্যে যান। এই দিগবিজয়কালে তিনি কচ্ছদেশে অবস্থান করে বিভীষণের কাছ থেকে কর আদায়ের জন্য ঘটোৎকচকে দূতরূপে পাঠান। বিভীষণ সহদেবের শাসন মেনে নেন। এবং বহু মূল্যবান সামগ্রী উপহার হিসেবে প্রেরণ করেন।

আরও পড়ুনঃ  বর্ণাশ্রম থেকে অভিশপ্ত জাতিভেদ- কতটা ঠিক কতটা ভুল? চার বর্ণের কে বড় কে ছোট?

৪. কুবের

স্ফীত উদর, দেহ নানা অলংকারে শোভিত এবং হাতে একটি রত্ন-পেটিকা ও গদা সম্বলিত কুবের নাম আপনারা সকলেই শুনে থাকবেন। তিনি ধনসম্পদের দেবতা ও যক্ষ নামক উপদেবতাদের রাজা।

রামায়ণ অনুসারে জানা যায়, কুবের ঋষি বিশ্বশ্রবা ও লতার সন্তান। কুবেরের তপস্যায় তুষ্ট হয়ে ব্রহ্মা কুবেরকে এই মর্যাদা প্রদান করেছিলেন যে, কুবের জগতের ধনসম্পদের দেবতা হিসেবে পরিগণিত হবেন। তাছাড়া ব্রহ্মা তাকে  পুষ্পক রথও প্রদান করেছিলেন। এরপর কুবের স্বর্ণলঙ্কা শাসন করতে থাকেন।

কুবের
কুবের

এদিকে লঙ্কাধিপতি রাবণ ছিলেন তাঁর বৈমাত্রেয় ভ্রাতা তথা সৎ ভাই। মূলত কুবেরকে হঠিয়েই লঙ্কার রাজ্যপাটে অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন রাবণ। তাছাড়া রামায়ণে রাবণ যে পুষ্পক বিমানে চড়ে সীতা দেবীকে হরণ করেছিলেন বলে জানা যায়, সেটিও তিনি কুবেরের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছিলেন।

তবে মহাভারতের বর্ণনা অনুযায়ী কুবের ছিলেন ঋষি পুল্যস্তের পুত্র এবং ঋষি বিশ্বশ্রবার ভ্রাতা তথা রাবণের কাকা। মহাভারত অনুসারে আরও জানা যায়, কুবের জন্ম হয়েছিল একটি গাভী থেকে।

বনবাসের পঞ্চম বর্ষে পঞ্চপাণ্ডব যখন গন্ধমাদন পর্বতে অবস্থান করছিলেন। তখন ভীম কুবের বাগান থেকে দ্রৌপদীর জন্য ফুল নিয়ে আসতেন বলা জানা যায়। তাছাড়া একবার দ্রৌপদীর প্ররোচনায় যখন ভীম রাক্ষস নিধন করতে শুরু করেছিলেন, তখন কুবের ক্রুদ্ধ হয়ে পুষ্পক বিমানে চড়ে গন্ধমাদন পর্বতে এসেছিলেন। এসময় বাকী পাণ্ডবদের স্তুতিতে তিনি শান্ত হন।

৫. জাম্ববান

রামায়ণ-মহাভারতের আরও এক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রের নাম জাম্ববান। ভাল্লুক শ্রেণীর সেনা জাম্ববানের উপস্থিতি এই দুই মহাকাব্যেই ছিল চোখে পড়ার মত।

রাম রাবণের কাহিনীতে জাম্ববানকে চিত্রিত করা হয়েছে বানররাজ সুগ্রীবের মন্ত্রী হিসেবে। তাছাড়া তিনি ছিলেন বানর সেনাদের মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ জ্ঞানী। রাম-লক্ষনকে সাহায্য করতে তিনি হনুমান ও অন্যান্য বানরদের সহযোগে মাতা সীতাকে খুজতে বের হয়েছিলেন লঙ্কার পানে। রাম-রাবণের মধ্যকার যুদ্ধের ময়দানে তিনি যোদ্ধা হিসেবে বিপুল পরাক্রম প্রদর্শন করেছিলেন। রণাঙ্গনে তাঁর মত তেজময়ী যোদ্ধা আর কমই ছিল রামের সেনাবাহিনীদের মধ্যে। তবে এর চেয়ে বড় ভূমিকা তিনি পালন করেছিলেন হনুমান কর্তৃক লাফ দিয়ে লঙ্কা যাওয়ার সময়। যখন মাতা সীতাকে খুঁজতে খুঁজতে হনুমান, অঙ্গদ ও জাম্ববানসহ অন্যান্য বানর দল সমুদ্রতীরে পৌছালেন তখন সাগর পাড়ি দিয়ে লঙ্কায় যাওয়া তাদের জন্য অসম্ভব হয়ে পড়ে। কারন বানরদের পক্ষে সাঁতার কাটা বা উড়ে যাওয়া দুইই অসম্ভব। এসময় জাম্ববান হনুমানকে তার অসীম ক্ষমতা উপলব্ধি করতে সাহায্য করেন। যার ফলশ্রুতিতে শ্রীহনুমান এক লাফে সাগর পাড়ি দিয়ে লঙ্কা দ্বীপে পৌছে গিয়েছিলেন।

জাম্ববান
জাম্ববান

এদিকে মহাভারত বলছে, সমন্তক মণি ছিল স্বয়ং সূর্যদেবের কণ্ঠহারের রত্ন। সত্রাজিত্‍ নামক এক ভক্তের প্রতি খুশি হয়ে তাঁকে এই মণি উপহার দিয়েছিলেন তিনি। সত্রাজিত্‍ সমন্তক মণিটি দান করেছিলেন তারই ভ্রাতা প্রসেনকে। একদিন শিকারে গিয়ে সিংহের আক্রমণে প্রাণ হারান প্রসেন। আর সিংহটি সেই সমন্তক মণিটি নিয়ে পালিয়ে যায়। কিছু কিছুদূর যাওয়ার পরে জাম্বুবান সিংহটিকে বধ করেন এবং সমন্তক মণিটি নিজে অধিকার করে নেন।

শ্রীকৃষ্ণ যখন মণিটি উদ্ধারে প্রবৃত্ত হন তখন তিনি প্রসেনের মৃত শরীরের পাশ থেকে সিংহের পায়ের ছাপ অণুসরণ করেন। এর কিছুদূর পরে তিনি সিংহটিকে মৃত পড়ে থাকতে দেখেন এবং সেখানে ভাল্লুকের পায়ের ছাপ আবিষ্কার করেন। সেই পায়ের ছাপগুলো ছিল জাম্ববানের। যাইহোক, জাম্বুবানের পায়ের ছাপ অনুসরণ করে তিনি হাজির হলেন ভাল্লুকরাজ জাম্ববানের দরবারে। সেখানে তিনি লক্ষ্য করলেন সমন্তক মণিটি জাম্ববানের অধিকারে রয়েছে। কিন্তু তিনি যখন মণিটি ফেরত চাইলেন তখন জাম্ববান মণিটি ফেরত দিতে অস্বীকার করলেন। শেষমেশ শ্রীকৃষ্ণ ও জাম্ববানের তর্ক-বিতর্ক গড়াল মল্লযুদ্ধ পর্যন্ত। অত্যন্ত বলশালী জাম্ববান ও শ্রীকৃষ্ণের মধ্যকার মল্লযুদ্ধ চলল ২৮ দিন বা মতান্তরে ২১ দিন পর্যন্ত। অবশেষে যুদ্ধে পরাজয় বরণ করলেন জাম্ববান। তবে পরাজিত হয়েও শ্রীকৃষ্ণের পরাক্রম ও বাহুবল দেখে মুগ্ধ হলেন তিনি। আর তাই সমন্তক মণিটি ফেরত দেওয়ার পাশাপাশি নিজের পরম সুন্দরী কণ্যা জাম্ববতীকেও ভার্যা হিসেবে দান করলেন শ্রীকৃষ্ণকে।

আরও পড়ুনঃ  মহাভারতের শহরগুলো / স্থানসমূহ এখন কোথায়? Present Locations of Cities Mentioned in Mahabharat.

৬. মহর্ষি দুর্বাসা

প্রচণ্ড ক্রোধসম্পন্ন ঋষি দুর্বাসার কথা শোনেননি এমন মানুষ খুজে পাওয়া মুশকিল। কিন্তু জানেন কি ঋষি দুর্বাসার কথা উল্লেখ রয়েছে রামায়ণ ও মহাভারত দুই মহাকাব্যেই?

আজ্ঞে হ্যাঁ, রামায়ণ অনুসারে জানা যায়, তিনিই প্রথম রাম ও সীতার বিচ্ছেদের ভবিষৎবানী করেছিলেন। তাছাড়া রামায়ণের শেষের দিকে একদা রাম কালপুরুষের সাথে নির্জনে কথা বলছিলেন। এই কথোপকথনের সময় কেউ উক্ত স্থানে প্রবেশ করলে, তাঁকে ‘রাম পরিত্যাগ করবেন এবং তাঁর মৃত্যু হবে’ এমন বাধ্যবাধকতা ছিলো। উক্ত আলাপ কালে লক্ষ্মণ দ্বার রক্ষা করছিলেন। এমন সময় দুর্বাসা মুনি রামের সাক্ষাৎ করতে আসেন। লক্ষ্মণ দুর্বাসার অভিশাপের ভয়ে, দুবার্সার আগমন বার্তা রামের কাছে পৌঁছে দেবার জন্য রাম কাল-পুরুষের আলাপ স্থানে প্রবেশ করেন। সে কারণে লক্ষ্মণকে রাম পরিত্যাগ করেন এবং পরে সরযূনদীর তীরে লক্ষ্মণ প্রাণ ত্যাগ করেন।

মহর্ষি দুর্বাসা
মহর্ষি দুর্বাসা

আবার মহাভারতেও এক গুরুত্ত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন দুর্বাসা। আপনারা নিশ্চই জানেন যে মাতা কুন্তী মন্ত্রবলে যে কোন দেবতার ঔরসজাত সন্তান প্রাপ্ত করতে পারতেন। কিন্তু জানেন কি এই মন্ত্র তাকে কে দান করেছিলেন? আজ্ঞে হ্যাঁ, ইনি দুর্বাসা মুনি যিনি কুন্তীর তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে তাকে এই মন্ত্র দান করেছিলেন। এবং বলাই বাহুল্য, কর্ণ সহ পঞ্চপাণ্ডবের জন্ম হয়েছিল এই মন্ত্রের মাধ্যমেই।

এর কিছুকাল পরে পাণ্ডবগণ যখন বনবাস করছিলেন তখন একবার দুর্বাসা হাজির হয়েছিলেন পঞ্চপাণ্ডবের পর্ণোকুটিরে। তাঁর সাথে ছিলেন তাঁর শতাধিক শিষ্য। কিন্তু পাণ্ডবদের কুটিরে তখন এত মানুষের ভোজনের ব্যাবস্থা করা সম্ভব ছিল না। উপরন্তু দুর্বাসা কুটিরে প্রবেশ করার আগেই পানাহার শেষ করে ফেলেছিলেন পাণ্ডবগণ। কিন্তু দুর্বাসা ও শিষ্যদের উপযুক্ত অতিথি সৎকারের ব্যাবস্থা না করলে তিনি নিঃসন্দেহে কোন বড় রকমের অভিশাপ দিয়ে বসবেন পাণ্ডবদেরকে। এমতাবস্থায় দ্রৌপদী স্মরণ করেছিলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে। তখন শ্রীকৃষ্ণ দ্রৌপদীর রন্ধন পাত্রের কোণে লেগে থাকা একটি অন্নদানা ভোজন করে দুর্বাসা সহ তাঁর সকল শিষ্যদেরকে তৃপ্ত করেছিলেন। আর তাই দুর্বাসা অভিশাপ দেওয়ার পরিবর্তে খুশি হয়ে দ্রৌপদীকে অন্নপূর্ণা বলে প্রশংসিত করেছিলেন।

তবে এই ছয়জনের বাইরে রামায়ণের আরও বেশ কয়েকটি চরিত্র মৃদুভাবে উপস্থিত ছিলেন মহাভারতে।

যেমন অঞ্জনীপুত্র বা কেশরীনন্দন হনুমান ছিলেন রামায়ণের একটি কেন্দ্রীয় চরিত্র। আবার তিনিই মহাভারতে ভীমের দর্প চূর্ণ করেছিলেন। বনবাসের প্রারম্ভেই রাম-সীতা ও লক্ষ্মন যে ভরদ্বাজ মুনির আশ্রমে কিছুকাল সময় অতিবাহিত করেছিলেন। সেই ভরদ্বাজ মুনির পুত্র দ্রোণাচার্য ছিলেন মহাভারতের কুরু-পাণ্ডবদের অস্ত্রগুরু। তাছাড়া ঋষি অগস্ত্য, মহর্ষি বিশ্বামিত্র, আরও বেশ কিছু রামায়ণের চরিত্রের মৃদু উপস্থতি লক্ষ্য করা যায় মহাভারতেও।

Rate this post

Leave a Reply