You are currently viewing কার ভুলে, কেন ও কিভাবে আবির্ভাব হল দশ মহাবিদ্যার? | মা কালীর ভয়ঙ্করতম দশটি রূপ | Das Mahavisya Story

কার ভুলে, কেন ও কিভাবে আবির্ভাব হল দশ মহাবিদ্যার? | মা কালীর ভয়ঙ্করতম দশটি রূপ | Das Mahavisya Story

সনাতন ধর্মের মহাবিদ্যা বা দশমহাবিদ্যা দেবী অর্থাৎ দিব্য জননীর দশটি বিশেষ রূপের সমষ্টিগত নাম। মুণ্ডমালা তন্ত্র অনুসারে দশমহাবিদ্যা হলেন কালী, তারা, ষোড়শী, ভৈরবী, ভুবনেশ্বরী, ছিন্নমস্তা, ধূমাবতী, বগলা, মাতঙ্গী ও কমলাকামিনী। অন্যদিকে মালিনী বিজয় গ্রন্থের মতে, মহাবিদ্যা হলেন কালী, নীলা, মহাদুর্গা, ত্বরিতা, ছিন্নমস্তিকা, বাগ্বাদিনী, অন্নপূর্ণা, প্রত্যঙ্গিরা, কামাখ্যাবাসিনী, বালা, মাতঙ্গী ও শৈলবাসিনী। আদ্যাশক্তি মহামায়ার এই দশবিধ দেবীত্বের একদিকে যেমন রয়েছেন ভয়ংকর দেবীমূর্তি, তেমনই অন্য প্রান্তে রয়েছেন এক অপরূপ সুন্দরী দেবীপ্রতিমা। শাক্তধর্মের ইতিহাসে মহাবিদ্যা ধারণার বিকাশ একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়। সমগ্র ব্রহ্মাণ্ডে সর্বপ্রথম দশমহাবিদ্যার প্রকাশ ও দর্শন করেছিলেন, স্বয়ং মহাদেব নিজেই।

কিন্তু কিভাবে আবির্ভাব হল দশমহাবিদ্যার, কেনই বা আদ্যাশক্তি মহামায়ার এরূপ দশটি রূপ ধারন করতে হল? আর কি কারনে এই দশ দেবীর ভয়ংকর মুর্তি দেখে বিচলিত হয়েছিলেন স্বয়ং শিব? আজ্ঞে হ্যাঁ, আজ এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুজতেই আমাদের এই বিশেষ আয়োজন। আশা করব এই আয়োজনে আমাদের সাথে শেষ পর্যন্ত থাকবেন।

 

সত্য যুগেরও আগেকার কথা, দক্ষ কন্যা সতীর সাথে মহাদেবের শুভ পরিণয় সংগঠিত হয় স্বয়ং দক্ষের অমতেই। তাঁর বেশ কিছুদিন পরে দক্ষরাজ এক যজ্ঞের আয়োজন করেন। এই যজ্ঞে ব্রহ্মাণ্ডের সকল ঋষি, মহর্ষি, দেবতা, অপ্সরী ও দক্ষের ইষ্টদেবতা বিষ্ণু ও স্বয়ং দক্ষপিতা ব্রহ্মাদেবও নিমন্ত্রিত ছিলেন। শুধুমাত্র মহাদেব ছিলেন এই যজ্ঞের একমাত্র অনিমন্ত্রিত। দক্ষরাজের এই যজ্ঞ যে উদ্দেশ্যমুলক এবং ব্যাপক অর্থে শিবকে অপমান করাই যে তার মুল উদ্দেশ্য ছিল তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এই নিমন্ত্রণে ব্রহ্মা নিজ পুত্র দক্ষকে বললেন, পুত্র, মহাদেব বিহীন যজ্ঞ অসম্ভব এবং অগ্রহনযোগ্য; কেননা যজ্ঞের আহুতি মহাদেব ব্যতীত কেউ গ্রহণ করতে পারবেনা। উত্তরে দক্ষরাজ বললেন, মহাদেব ব্যতীত যজ্ঞও হবে এবং যজ্ঞের আহুতিও গ্রহণ হবে। আর এই আহুতি আমার ইষ্টদেবতা বিষ্ণুদেব গ্রহণ করবেন। তখন ব্রহ্মাদেব বললেন, হট করিওনা পুত্র; সৃষ্টিতে ত্রিদেবের মধ্যে মহাদেবই যজ্ঞের আহুতি গ্রহণের অধিকার ও ক্ষমতা রাখেন। একথা শুনে দক্ষ রেগে গিয়ে উচ্চ কন্ঠে বলে উঠলেন, আজ তাহলে সৃষ্টির নিয়ম পরিবর্তন হবে। তখন পুত্রের হটের কারণে ব্রহ্ম নিরবতা পালন করলেন। কিন্তু দক্ষ যখন বিষ্ণুর কাছে নিমন্ত্রণ নিয়ে গেলেন, তখন বিষ্ণুও একই কথা বললেন, “কিন্তু নিয়তি যার সঙ্গ ছাড়ে, সে থাকে সুবুদ্ধির উপরে”। তখন বিষ্ণুদেব বললেন, না মহাদেব বিহীন যজ্ঞে আমি উপস্থিত হইতে পারবোনা। অতঃপর দক্ষরাজ বললেন, প্রভু ঠিক আছে আপনি যখন উপস্থিত থাকতে পারবেন না; তখন আপনার প্রতিকৃতি সাজিয়ে আমি যজ্ঞ করবো এবং ঐ যজ্ঞের আহুতি আপনাকেই দেব। তখন বিষ্ণুদেব বললেন, বৎস দক্ষ; তোমার হট এক মহাভয়ঙ্করী বিনাশের নিমন্ত্রণ দিচ্ছে এবং মহাকাল রুদ্রের আহব্বান করছে! এখনও সময় আছে বৎস নিজেকে নমনীয় করো। অন্যথা বিনাশ সুনিশ্চিত! দক্ষ বিষ্ণুর কথার পাত্তাই দিলেন না, তিনি চলে গেলেন এবং যজ্ঞের প্রস্তুতি শুরু করলেন। এদিকে দেবর্ষি নারদমুনি এসে দক্ষ কন্যা সতীকে যজ্ঞের সংবাদ দিলেন, শিবজায়া শিবাণী যখন নারদের মুখে তাঁর পিতা দক্ষের শিবহীন যজ্ঞের কথা শুনলেন, তখনই তাঁর মনে ইচ্ছা জেগেছিল তিনি নিজে অনিমন্ত্রিত হয়েও যাবেন সেখানে-পিতা দক্ষকে বুঝিয়ে দিতে, শিবহীন যজ্ঞের কী ফল? তাই তিনি স্বামীর কাছে অনুমতি প্রার্থনা করেছেন পিতৃগৃহে যাওয়ার জন্য। কিন্তু দেবাদিদেব তো জানেন এর ফল কী হবে। তাই তাঁর প্রবল আপত্তি সতীকে দক্ষালয়ে যেতে দিতে।

আরও পড়ুনঃ  বশিষ্ঠ ও বিশ্বামিত্রের সংঘাত || রাজা কৌশিক হয়ে উঠলেন ব্রহ্মর্ষি বিশ্বামিত্র ||

কিন্তু সতী আবার বলছেন তাঁর উদ্দেশ্য

“ত্রিসংসারে তব অপমান, ছার প্রাণ রেখেছি এখনও?

সতী নাম কেন দিল মাতা? পতি ভক্তি এই কি আমার?

যজ্ঞে যেতে মানা নাহি কর মোরে।

যদি তব পদে থাকে মম মতি,

দেখিব কেমনে ত্রিসংসার মিলি করে করে অপমান।

আজ্ঞা দাওহে যাব দক্ষপুরে।”

তবুও প্রাণেশ্বরী সতীকে যেতে দিতে অনিহা মহাদেবের।

কারণ,

“আজি ছেড়ে যেতে চাও, কেন পাগলে কাঁদাও?

গেলে তুমি আসিবে না আর।”

শিব জানেন পরিণাম কি হবে। সতী পতিনিন্দা সহ্য করতে না পেরে দেহত্যাগ করবেন। তাই ভবিষ্যৎ ভেবে সতীর অদর্শন-বিরহে ব্যাকুল মহাদেবের প্রবল আপত্তি তাঁকে ছেড়ে দিতে। কিন্তু নিয়তি! স্বয়ং মহামায়ার ইচ্ছাকে নিবারণ করার সাধ্য কারও নেই। মহাদেবকে অনেক কাতর অনুনয় প্রার্থনাযর পরেও যখন সম্মতি পাওয়া গেল না তখন আদ্যাশক্তি মহামায়া তাঁর মায়াশক্তি বিস্তার করে স্বয়ং বিশ্বনাথ তথা তার স্বামী মহাদেবকে, তাঁর স্বরূপ জানিয়ে দিলেন-কে তিনি। তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে যাওয়ার সাধ্য কারও নেই। তাই এবার জগদম্বা মহামায়ার পরমা প্রকৃতির লীলাবিগ্রহের প্রকাশ ঘটল দশদিক আলো। শিবের সামনে প্রকাশিত এই দশবিধ লীলাবিগ্রহই দেবী ভগবতীর দশমহাবিদ্যা নামে ভুবনবিদিত।

দেবী নিজেও সবই জানতেন, কেন তিনি যাচ্ছেন, তার ফল কী হবে? তবুও মিথ্যা অভিমান-অহংকারীর শাস্তিদান ও স্বামীর প্রতি শ্রদ্ধা-ভক্তির মহিমা জগৎকে দেখানোর প্রয়োজনে এই লীলা বিগ্রহ গুলির সৃষ্টি । আর জগতের সাধক ভক্তের দলও পেল-মা করুণাময়ী ভগবতীর দশটি অপূর্ব লীলাবিগ্রহ।

চামুণ্ডাতন্ত্রে ও ভাগবত পুরাণে বলা হয়েছ, শিব যখন দেবীকে অনুমতি না দিয়ে চলে যেতে চাচ্ছিলেন, তখন দেবী সতী প্রথমে কালীরূপ ধরে শিবের ভীতি উৎপাদন করে তাঁর পথরোধ করেন। ভয় পেয়ে অন্য যেদিক দিয়েই পালাতে চাইছিলেন সবদিকেই একে একে এইসব ভিন্ন ভিন্ন দেবীমূর্তির আবির্ভাব শিবকে বিহ্বল করে তোলে। শিব সেই অভিনব দশমূর্তি দেখে দিশাহারা হয়ে ভীত কণ্ঠে বললেন, “তোমরা কারা? আমার সতী কোথায় গেল?” তার উত্তরে এক মূর্তি বললেন, “আমিই তোমার সতী। এই যে ভীষণা দশটি মূর্তি-এরা আমারই বিভিন্ন প্রকাশ। ভয় পেও না।” শিব বললেন “তুমি যদি আমার প্রাণেশ্বরী সতীই হও, তাহলে এমন কালোবর্ণা ভীতিপ্রদা কেন?” সতী আবার বললেন, “আমি সতীই; শুধু তোমার চোখ খুলে দেওয়ার জন্যই আমার এই নানা মূর্তির প্রকাশ ঘটিয়েছি। “এই তো আমি তোমার সামনেই আছি, তোমার ভয় কি?” তখন শিব জিজ্ঞাসা করলেন, “হে দাক্ষায়ণী সতী, তোমার সেই অপরূপ রূপ কি করে শ্যামা হয়ে গেল? আর এত ভয়ঙ্করী মূর্তিই বা হল কি করে?”

আরও পড়ুনঃ  পঞ্চকেদার সৃষ্টি হওয়ার পেছনের পৌরাণিক কাহিনী || Mythology Behind the Creation of Panch Kedar ||

দেবী তখন বললেন: আমিই আদি প্রকৃতি, কারণ-স্বরূপা, সৃষ্টি-স্থিতি-সংহারকর্ত্রী। তবুও লীলা সম্পাদনের জন্য তোমার পত্নীত্ব স্বীকার করেছি। আর তোমারই জন্যে আমার শ্বেতবর্ণা শরীর। তোমার কাছে পূর্ব প্রতিজ্ঞাবশে আমি শরীর ধারণ করে তোমার পত্নী হয়েছি। সেই আমিই পিতার মহাযজ্ঞ ধ্বংস করবার জন্য এই ভয়ানক রূপ ধারণ করেছি। এই যা দেখলে, সব আমারই রূপ, সব আমিই অতএব হে শম্ভু! ভয় কোরো না।

এ যেন ছোট্ট ছেলেটিকে অভয় দিয়ে ভোলানোর চেষ্টা! কারন, তিনিই যে আদি জননী- “ব্রহ্মা বিষ্ণু মহেশাদিন্ সর্বেষাং জননীপরা” অর্থাৎ তিনিই আদিশক্তি পরমা জননী। দেবী সতী ছেলে ভোলানোর মতো করে বললেন, পতিদেবতার ভয় ভাঙানোর জন্য-

“ত্বং মৎ প্রাণসমো ভর্তা, তবাহং বনিতা সতী।”
অর্থাৎ, তুমি আমার প্রাণসর্বস্ব স্বামী, আর আমি তোমারই প্রাণেশ্বরী স্ত্রী-সতী।

তোমাকে ভয়ে পালিয়ে যেতে দেখে আমিই দশ দিকে তোমাকে আটকাবার চেষ্টা করেছি মাত্র। তার জন্য আমি আমাকে দশ ভাগে ভাগ করে ছড়িয়েও দিয়েছি।

 

শিব এই তত্ত্বস্বরূপিণী পত্নীরূপিণী মহাদেবীর স্বরূপ অবহিত হয়ে বললেন করলেন: –

হে দেবী! তুমিই আদি পরমাপ্রকৃতি মহাদেবী আদিশক্তি- সৃষ্টি-স্থিতি-সংহার শক্তি। তোমার তত্ত্ব-স্বরূপ না জেনে বা ভুলে গিয়ে মহামোহবশতঃ তোমায় অপ্রিয় কথা বলেছি, হে মহাদেবি তুমি আমার সেই অপরাধ ক্ষমা করো। মহাদেব আজ দেবীর কাছে ক্ষমাপ্রার্থী হয়ে প্রার্থনা জানাচ্ছেন, “হে শিবানী, তোমার যে এই সব মহাভয়ঙ্করী মূর্তি, ভয়ানক দর্শনা লীলাবিগ্রহ এদের প্রত্যেকের নাম কি ও পরিচয় আমাকে জানাও?” উত্তরে দেবী বললেন,
“এতা সর্বা মহাদেব মহাবিদ্যা সমপ্রভাঃ।” অর্থাৎ, এঁরা সকলে তোমারি মহাবিদ্যা অনন্ত গুণবতী, তত্ত্বজ্ঞানময়ী।

এরপর দেবী মহামায়া নিজ মুখে নিজের দশ মহাবিদ্যার প্রকাশ করলেন। তোমার সামনে এই দেখ আমি কালীমূর্তিতে, তোমার ঊর্ধ্বদিকে আমি মহাকালী স্বরূপিণী তারিণী তারা। বামদিকে ভুবনেশ্বরী, তোমার পেছনদিকে আমি দানব নাশিনী বগলা মূর্তিতে। অগ্নিকোণে আমি বিধবা জরতী রূপে ধূমাবতী নামে আছি। নৈর্ঋত কোণে আছি সর্ব ঐশ্বর্যের অধিশ্বরী কমলা রূপে। বায়ুকোণে আছি মাতঙ্গী রূপে। ঈশান কোণে আছি সর্ব সৌন্দর্যের অধিশ্বরী ত্রিপুরেশ্বরী ষোড়শী হয়ে। আর তোমার সঙ্গে কথা বলছি যে আমি, সে ভৈরবী-ভৈরবসঙ্গিনী।” মূলত আমি এক ও অদ্বিতীয়া। প্রয়োজনে আমার এই দশরূপে প্রকাশ হয়। আজ তোমাকে আমার এই লীলা বিগ্রহদের দর্শন করালাম। এই বলে দেবী শিবকে এঁদের পূজাবিধিও বলে দিলেন। আরও বললেন,

আমি তোমার প্রিয়তমা পত্নী, আর তুমিও আমার একান্ত প্রিয়তম স্বামী। পিতা প্রজাপতি দক্ষের অহংকার চিরকালের জন্য মিটিয়ে দিতে জগতের মানুষের কাছে অহংকারের ফল কী হয় তা জানিয়ে দিতে তাঁর যজ্ঞ নষ্ট করবার জন্য আমি এখনই সেখানে যাব। হে দেবাদিদেব, তুমি যদি না যাও তবে আমাকে অনুমতি দাও, আমি পিতাকে যথোচিত শিক্ষা দিতে তাঁর যজ্ঞ নষ্ট করতে সেখানে যাই। এবার আমায় দক্ষ যজ্ঞস্থলে যাবার অনুমতি দাও।”

আরও পড়ুনঃ  যে কোন পূজায় মঙ্গল ঘট বসানোর রহস্য কি? পুজার ঘট স্থাপনের সহজ নিয়ম।

সতীর প্রকৃত পরিচয় বুঝতে পারেন দেবাদিদেব।

“হায় ফুটিয়া না ফুটে আঁখি মোর,

মায়াঘোর কেমনে ছেদিব?

মহামায়া আপনি করিছে ছল!

সতী, নিষেধ না করি আর,

যাও পিত্রালয়ে কিন্তু ভুল না,

ভুল না ভাঙ্গড়েরে।

তব অদর্শনে খ্যাপা তোর আকুল হইবে।

কি কহিব আর, অন্তরের সার তুমি মম।

তোমা বিনা শব আমি।।”
শিব আর ভুল করলেন না। যাঁর ইচ্ছায় জগৎ চলে, সেই ইচ্ছাময়ীর ইচ্ছাকে নিয়ে তাঁর অনুচর প্রমথদের বললেন, নিয়ে এসো সিংহবাহিত রথ, নানা রত্নালঙ্কার। দেবীকে যথোচিতভাবে সাজিয়ে সেই রথে স্বয়ং বসিয়ে দিয়ে বললেন-
তুমি আদিশক্তি স্বরূপ আদ্যাশক্তি পরমাপ্রকৃতি, সর্বজীবের অন্তরে বিরাজিতা স্বতন্ত্রা, তোমার কাছে আবার বিধিনিষেধ? তোমার যখন দক্ষযজ্ঞ নাশ করবার বাসনা হয়েছে তখন আমি কোন ছার যে তোমাকে নিষেধ করব? অতএব হে মহাদেবি, ভ্রমবশত আমি যা বলেছি সব ক্ষমা করে দাও। তোমার যেমন ইচ্ছা তাই হোক। দেবীর অন্য সব মূর্তি তখন অন্তর্হিত হলেন। সতী একাই অপূর্ব সাজসজ্জায় সজ্জিতা হয়ে সেই দিব্য রথে উঠে দক্ষালয়ের দিকে গমন করলেন। সঙ্গে চললেন প্রমথগণের দল। এরপরের দক্ষযজ্ঞের বিনাশ, সতীর আত্মত্যাগ এবং ৫১ সতীপীঠের কাহিনী নিশ্চয় আপনার অজানা নয়। শেষ করার আগে আপনার জন্য রইল, দশমহাবিদ্যার স্তুতি।

ত্বং কালী কালহরা ওম্
মহামেঘ স্বরুপিনী মহাকাল বিলাসিনী
অনাদ্যা অপরাজিতা ত্বং।
ত্বং কালী কালহরা ওম্।।
তারা তেজ স্বরুপিনী মহেশ মনোমোহিনী
জ্ঞানালোক-বিকাশিনী ত্বং।
ত্বং কালী কালহরা ওম্।।
এস মা ষোড়শী বালা, ঘুচাও ত্রিতাপজ্বালা
ষোড়শ শকতি-রুপা ত্বং।
ত্বং কালী কালহরা ওম্।।
কোথা মা ভুবনেশ্বরী, ভবঘোরে ঘুরে মরি
ভমেশ-ভামিনী শিবা ত্বং।
ত্বং কালী কালহরা ওম্।।
নমস্তে ভৈরবীভীমা, ত্রিভুবনে অনুপমা
মহাবীর্য্যা বীরশক্তি ত্বং।
ত্বং কালী কালহরা ওম্।।
বিকাশ-বিলয়-রুপা, বিপন্নেরে কর কৃপা
ছিন্নমস্তা ভয়ঙ্করী ত্বং।
ত্বং কালী কালহরা ওম্।।
কাকধ্বজ-রথারুঢ়া, রিপুহরা সূর্পকরা
মহাশক্তি ধুমাবতী ত্বং।
ত্বং কালী কালহরা ওম্।।
আয় মা ভক্তবৎসলা, প্রসিদ্ধা সতী বগলা
ঈশ্বরী পরমা কলা ত্বং।
ত্বং কালী কালহরা ওম্।।
মাতঙ্গী মহেশজায়া, মোহনাশিনী অভয়া
ভূভার হারিণী জয়া ত্বং।
ত্বং কালী কালহরা ওম্।।
ত্বং হি রাজরাজেশ্বরী, রাখ পুত্রে নাশ অরি
কমলা কমলালয়া ত্বং।
ত্বং কালী কালহরা ওম্।।
ডাকিনি যোগিনী সঙ্গে, আয় মা সমররঙ্গে
শঙ্কট নাশিনী শিবা ত্বং।
ত্বং কালী কালহরা ওম্।।
কিঙ্করের ক্লেশজানি, কৃপাকর ত্রিনয়নী
দূর্গতিহারিনী দূর্গা ত্বং।
ত্বং কালী কালহরা ওম্।।

5/5 - (1 vote)

Leave a Reply